Ingredient

ল্যাকটিক অ্যাসিড ত্বকের জন্য কেন উপকারী? জেনে নেই।

Why is lactic acid beneficial for the skin

ল্যাকটিক অ্যাসিড হলো আলফা হাইড্রক্সি অ্যাসিড (AHA) এর একটি অন্যতম ফর্ম। যা প্রাকৃতিক ভাবে দুধ থেকে পাওয়া যায়। সাধারণত গাঁজানো খাবার থেকেও ল্যাকটিক অ্যাসিড পাওয়া যায়।

ত্বকের যত্নের জন্য এটি খুবই জনপ্রিয় একটি উপাদান, কারণ বিভিন্ন উপায়ে এটি ত্বকের জন্য উপকারী।

ল্যাকটিক অ্যাসিড এর কাজ কি?

ল্যাকটিক অ্যাসিড ত্বকে কোনো তৈরি এক্সফোলিয়েটিং পণ্যের সাথে প্রয়োগ করলে খুব ভালো ফলাফল দিয়ে থাকে। যাদের ব্রণ, বার্ধক্যজনিত ত্বক বা আঁচিল আছে তাদের জন্যও ল্যাকটিক অ্যাসিড খুব ভালো কাজ করে।

সঠিক সূত্রে একটি pH ব্যবহার করা হয়, ল্যাকটিক অ্যাসিড সেই বন্ধনগুলির বিরুদ্ধে লড়াই করে ভেঙে কাজ করে, এভাবে ত্বকের মৃত কোষ বা শুষ্ক কোষগুলো দূর করতে সাহায্য করে থাকে। মূলত যাদের ত্বক শুষ্ক, তাদের ত্বকে ল্যাকটিক অ্যাসিড খুব ভালো ফল প্রদান করে থাকে।

বয়স বাড়ার সাথে সাথে মানুষের ত্বকের মৃত কোষগুলি ঝরে যাওয়ার ক্ষমতা কমতে থাকে। অল্পবয়সী মানুষের ত্বকের এসব মৃত কোষগুলো নিজেরাই ঝরে যেতে পারে।

বয়স বৃদ্ধির কারণে, সূর্যের ক্ষতিকারক প্রভাবে এবং ত্বকের বিভিন্ন জটিলতা সমস্যা থাকলে সেটি এই প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয় বা নিস্তেজ করে দেয়, এর ফলে ত্বকে মৃত কোষের মাত্রা বেড়ে ত্বকের সমস্যার সৃষ্টি করে, ত্বককে নিস্তেজ করে দেয়, তাই স্বাভাবিক বয়সের তুলনায় বয়স বেশি মনে হয়। যার ফলে চেহারার মসৃণতা ও উজ্জ্বলতা হ্রাস পেতে থাকে।

কিন্তু আলফা হাইড্রক্সি অ্যাসিডের (AHA) অন্যতম ফর্ম ল্যাকটিক অ্যাসিড ব্যবহার করে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

এবার আপনার মনে প্রশ্ন আসতে পারে, অ্যালফা হাইড্রক্সি অ্যাসিড (AHA) কি? চলুন জেনে নেই।

অ্যালফা হাইড্রক্সি অ্যাসিড (AHA) কি?

অ্যালফা হাইড্রক্সি অ্যাসিড কে সংক্ষিপ্ত করে AHA বলা হয়। এটি মূলত কয়েকটি অ্যাসিড গ্রুপ এর সংমিশ্রণ, যা বিভিন্ন খাবার যেমন, দুধ ও ফলমূল থেকে আসে। অ্যালফা হাইড্রক্সি অ্যাসিড (AHA) এর কিছু ফর্ম হলো: সাইট্রিক অ্যাসিড, ম্যালিক অ্যাসিড, ল্যাকটিক অ্যাসিড, টারটারিক অ্যাসিড, গ্লাইকোলিক অ্যাসিড।

The-Ordinary-AHA-

এদের প্রত্যেকটির কাজ আলাদা, তবে ত্বকের ধরনের সাথে সঠিকভাবে ব্যবহার করলে এরা খুব ভালো ফলাফল প্রদান করে। এই উপাদান গুলো বিভিন্ন স্কিনকেয়ার পণ্যের সাথে ব্যবহার করা হয়, যেমন সিরাম, ক্রিম, লোশন ইত্যাদি। অতএব এই আলফা হাইড্রক্সি অ্যাসিড এর অন্যতম ফর্মই হলো ল্যাকটিক অ্যাসিড।

ল্যাকটিক অ্যাসিড এর উপকারিতা :

আমরা ইতিমধ্যেই জেনেছি ল্যাকটিক অ্যাসিড আমাদের ত্বকের জন্য কতোটা উপকারী একটি উপাদান। বিশেষ করে শুষ্ক ত্বকে এটি ভালো ফলাফল এনে দিয়ে থাকে। এর বিভিন্ন ব্যবহার আছে এবং এর উপকারিতা অসংখ্য। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য দিক গুলো জেনে নেই।

ত্বকের আদ্রতা বৃদ্ধি করে:

ল্যাকটিক অ্যাসিড ত্বকের পানি ধরে রাখার ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয় এবং আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে। যার ফলে ত্বক শুষ্ক হয় না, ত্বকের আদ্রতা বজায় থাকে৷ ল্যাকটিক অ্যাসিড শুষ্ক ত্বকের মসৃণতা ও উজ্জ্বলতা এভাবে বৃদ্ধি করে থাকে।

ব্রণের চিকিৎসা করে:

ল্যাকটিক অ্যাসিড ত্বকের মৃত কোষ অপসারণ করতে সহায়তা করে। বয়স বৃদ্ধিত সাথে সাথে ত্বকের মৃত কোষ ঝরে যাওয়ার ক্ষমতা কমতে থাকে, যার ফলে ত্বকে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। ল্যাকটিক অ্যাসিড এই জটিলতা থেকে ত্বককে রক্ষা করে।

এটি মৃত কোষ দূর করে এবং অতিরিক্ত তেল অপসারণ করে ব্রণ হওয়ার হার কম করতে সাহায্য করে। ল্যাকটিক অ্যাসিড ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধেও লড়াই করে যা ব্রণ হওয়ার হাত থেকে ত্বককে মুক্ত করে।

এক্সফোলিয়েট করে:

ত্বকের মৃত কোষ বা ময়লা অপসারণ করাকেই এক্সফলিয়েট বলা হয়। ত্বকে অতিরিক্ত মৃত কোষ জমতে থাকলে সেটি বিভিন্ন ধরনের জটিলতা সৃষ্টি করে এবং নতুন কোষের সৃষ্টিতে বাধা প্রদান করে, ফলে ত্বকের কোমলতা ধীরে ধীরে হ্রাস পায়।

তাই নিয়মিত এক্সফোলিয়েশন করা জরুরি। বিভিন্ন ফেসিয়াল স্ক্রাব বা ঘরোয়া উপায়ে এটি করা যায়, তবে সঠিক উপায়ে না করলে ত্বকের ভালো করতে যেয়ে বিপরীত হয়ে ত্বকের ক্ষতিও হয়ে থাকে। তাই সঠিকভাবে এক্সফোলিয়েট করতে হবে। এটি ত্বকের ভেতরে ময়েশ্চারাইজ শোষণে সাহায্য করে থাকে।

ল্যাকটিক অ্যাসিড এর জন্য খুবই উপকারী। ত্বকের মৃত কোষ বা ময়লা দূর করে ত্বককে সতেজ, কোমল ও উজ্জ্বল করতে সহায়তা করে।

সূক্ষ্ম রেখা ও বয়সের দাগ দূর করে:

ল্যাকটিক অ্যাসিড ত্বকের কোলাজেন উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করে। কোলাজেন এমন একটি প্রাকৃতিক প্রোটিন যা বয়স বাড়ার সাথে সাথে উৎপাদন এর হার কমায়, ফলে ত্বকের দৃঢ়তা কমে এবং বয়স্ক দেখায়। ল্যাকটিক অ্যাসিড এই কোলাজেন উৎপাদন এর মাত্রা বাড়িয়ে ত্বককে উজ্জ্বল ও দৃঢ় করতে সাহায্য করে।

ফলে ত্বকের সূক্ষ্ম রেখা, বলি রেখা, বয়সের ছাপ দূর হয় এবং হাইপিগমেন্টেশন কমাতেও ল্যাকটিক অ্যাসিড সাহায্য করে।

হাইপিগমেন্টেশন কমায়:

মানুষের ত্বকে পিগমেন্ট তৈরির হার বেড়ে গেলে সৃষ্টি হয় হাইপিগমেন্টেশন। যার জন্য ত্বক কালচে বর্ণ ধারণ করে এবং ত্বক বয়স্ক দেখায়, মসৃণতা হ্রাস পায়। ল্যাকটিক অ্যাসিড এটি কমাতে সাহায্য করে এবং ত্বককে মসৃণ করে তোলে।

ত্বকের বাধা শক্তিশালী করে:

ল্যাকটিক অ্যাসিড সব ধরনের ত্বকের জন্য ব্যবহার উপযোগী হলেও সংবেদনশীল ও শুষ্ক ত্বকের জন্য এটি ভালো কাজ করে। ল্যাকটিক অ্যাসিড একটি এন্টিঅক্সিডেন্ট, তাই এটি কোষকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে থাকে। শুষ্ক ত্বকে পানি ধরে রাখার ক্ষমতা উন্নত করে এবং ত্বককে নরম ও মসৃণ রাখতে সহায়তা করে।

ল্যাকটিক অ্যাসিড কার জন্য উপযুক্ত?

ল্যাকটিক অ্যাসিড প্রায় সব ধরনের ত্বকের জন্যই ব্যবহার উপযোগী, বিশেষ করে যাদের ত্বক শুষ্ক ও সংবেদনশীল, বয়স্ক ত্বকের জন্যও ভালো ফল প্রদান করে। কেউ এটি একদম নতুন ব্যবহার শুরু করলে কম ঘনত্বের ল্যাকটিক অ্যাসিড ব্যবহার করা উচিত। ধীরে ধীরে সহনশীলতা বাড়তে থাকলে ঘনত্ব বাড়াতে হবে।

skin care

সংবেদনশীল ত্বকে সতর্কতার সাথে ব্যবহার করতে হবে। কোনো ধরনের জটিলতা যেমন জ্বালা, লালচে ভাব, প্রদাহ, চুলকানি ইত্যাদি দেখা দিলে চিকিৎসক এর পরামর্শ নিতে হবে বা ব্যবহার করা বন্ধ রাখতে হবে।

ল্যাকটিক অ্যাসিড ব্যবহার করার কিছু নিয়ম:

ল্যাকটিক অ্যাসিড কোনো সিরাম বা ময়েশ্চারাইজার এর সাথে ব্যবহার করতে হবে। কারণ ল্যাকটিক অ্যাসিড ত্বকের পানি ধরে রাখার ক্ষমতা উন্নত করতে সহায়তা করে।

ল্যাকটিক অ্যাসিড ক্রিম, ময়েশ্চারাইজার বা লোশনের সাথে ত্বকে প্রয়োগ করা যায়, কিন্তু তার ঘনত্ব ১০% এর কম হতে হবে। অধিক ঘনত্বের ল্যাকটিক অ্যাসিড মুখের ত্বকে ব্যবহার উপযোগী নয়, এতে ত্বকের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ১৫% পর্যন্ত ঘনত্বের ল্যাকটিক অ্যাসিড শরীরের অন্যান্য অংশে ব্যবহার করা যায়।

তবে অধিক ঘনত্বের ল্যাকটিক অ্যাসিড ব্যবহার করার পূর্বে অবশ্যই চিকিৎসক এর পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।

ত্বকের যত্নের বিভিন্ন পণ্যেই এখন ল্যাকটিক অ্যাসিড ব্যবহার করা হয়। সেনসিটিভ স্কিন হলেও ল্যাকটিক অ্যাসিড ব্যবহার করা যায় কারণ এটি ত্বককে খুব ভালো এক্সফোলিয়েট করতে পারে। তাই টোনার, এসেন্স ইত্যাদি পণ্যের সাথে ল্যাকটিক অ্যাসিড ব্যবহার করা যায়।

সংবেদনশীল ত্বকে বা প্রথম ব্যবহার শুরু করলে অবশ্যই একটি প্যাচ পরীক্ষা করে নেওয়া উচিত।

প্যাচ পরীক্ষা করার নিয়ম:

  • সরাসরি মুখের ত্বকে ল্যাকটিক অ্যাসিড প্রয়োগ করার পূর্বে হাতে বা কান এর পেছনে কোনো ছোট জায়গায় এটি ব্যবহার করতে হবে।
  • ২৪-৪৮ ঘন্টা পর্যন্ত জায়গাটি ওভাবেই রেখে দিতে হবে।
  • যদি কোনো প্বার্শ প্রতিক্রিয়া দেখা যায়, তাহলে ল্যাকটিক অ্যাসিড পুরো মুখে ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। চিকিৎসক এর পরামর্শ নিয়ে সঠিক নিয়মে ব্যবহার করতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *