চুলের যত্ন

মাথায় খুশকি কেন হয়? সহজ উপায়ে খুশকি দূর করার উপায়।

Why does dandruff occur

সুন্দর ও ঝলমলে চুল নারীর সৌন্দর্যকে দ্বিগুণ বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু রেগুলার লাইফ স্টাইলে বাইরের দূষণ ও ধুলোবালিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় চুল। এছাড়াও যারা স্কার্ফ ব্যবহার করেন,তাদের চুলে দীর্ঘ সময় ভেজা ভাব থাকার কারণে দেখা দিতে পারে খুশকি ও চুল পড়া সমস্যা। এছাড়াও আরো বিভিন্ন কারণে চুল পড়া এবং খুশকির সমস্যা দেখা দিতে পারে। এই চুল পড়া ও খুশকির সমস্যা বর্তমানে প্রায় সকল বয়সের মানুষের অন্যতম দুশ্চিন্তার কারণ।

মূলত,যাদের মাথার ত্বক অনেক শুষ্ক তাদের খুশকির সমস্যা বেশি হয় এবং পরবর্তীতে খুশকির সমস্যা থেকে চুল পড়ার সমস্যা তৈরি হয়। পক্ষান্তরে,যাদের মাথার ত্বক তৈলাক্ত প্রকৃতির, তারা ভালো মতো নিয়ম করে চুল ক্লিন করলেই এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাবেন। তাই চুল পড়া এবং খুশকি নিয়ে চিন্তার কিছু নেই।

সঠিক নিয়মে চুলের যত্ন নিলে এই সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। চলুন আজকের ফিচারে আমরা জেনে নেব,চুল পড়া ও খুশকি দূর করার কার্যকর কিছু উপায় সম্পর্কে।

প্রথমে আমরা জেনে‌ নেই,খুশকি সম্পর্কে।

খুশকি কি?

আজকাল খুশকির সমস্যা সচরাচর সারা বছর জুড়েই থাকে। কিন্তু বিশেষ করে, শীতকালে খুশকির সমস্যা একটু বেশিই হয়।খুশকি মূলত মাথার ত্বকের মরা কোষ। মাথার স্ক্যাল্পে যখন নতুন কোষ তৈরি হয় এবং অতিরিক্ত মরা কোষ যখন সাদা খোসা আকারে ঝরে পড়ে তাকে খুশকি বলে। খুশকি প্রধানত দু’রকমের হয়ে থাকে খুশকি- ১.ছোট ২.বড়। ছোট আকৃতির খুশকি সাধারণত বোঝা যায় না কিন্তু চুল আঁচড়ালে চিরুনির আগায় আঠার মত লেগে থাকে এবং মাথায় প্রচুর পরিমাণে চুলকায়। অন্যদিকে বড় আকৃতির খুশকি মারাত্বক ধরনের কারণ এটি চুলের ওপর ভেসে থাকে তাই চুল দেখতে মোটেও ভালো লাগে না ও চুলে কোন প্রকারের স্টাইলিংও করা যায় না। এছাড়াও বড় আকৃতির খুশকির কারণে চুল রুক্ষ হয়ে যায়, প্রচুর পরিমাণে চুল পড়ে, চোখ চুলকায় ও ত্বকে ব্রণের সমস্যা তৈরি হয়।

মাথায় খুশকি কেন হয়?

১.চুলের ত্বকে অতিরিক্ত শুষ্ক হলে খুশকি বেশি হয়।

২.নিয়মিত চুল ক্লিন না করলে মাথার স্কেল্পে মৃত ত্বক জমে খুশকি তৈরি হয়।

৩.স্কেল্পে ‘মালাসেজিয়া’ নামক ছত্রাক অধিক পরিমাণে বৃদ্ধির ফলে মাথার ত্বকে চুলকানির সৃষ্টি হয় পাশাপাশি স্কেল্প শুষ্ক হয়ে প্রদাহ সৃষ্টি করে। যা পরবর্তীতে মাথার ত্বকে ইনফেকশন তৈরি করে এবং খুশকির সমস্যা আরো বেড়ে যায়।

৪.মাথার স্কেল্পে অতিরিক্ত তেল দেওয়ার ফলে, তৈলাক্ততা থেকে মাথার ত্বকে বিভিন্ন প্রকারের ছত্রাক বৃদ্ধি পায়, যা খুশকির অন্যতম কারণ।

৫.বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা- মানসিক দুশ্চিন্তা ও শরীরের অতিরিক্ত দুর্বলতায় খুশকি বৃদ্ধি পায় এছাড়াও শরীরে ভিটামিন বি ও জিংকের ঘাটতিতেও এই সমস্যা হয়।

৬.বংশগত ও হরমোনাল কারণে মাথার স্কেল্পে খুশকি বৃদ্ধি পায়।

৭.ঘন ঘন বা অতিরিক্ত মাত্রায় চুলে শ্যাম্পু, জেল ও কেমিক্যালযুক্ত প্রোডাক্ট ব্যবহারের ফলে মাথার ত্বক অতিরিক্ত রুক্ষ ও শুষ্ক হয়ে খুশকির সমস্যা তৈরি করে।

খুশকি দূর করার উপায়

dandruff

নিয়মিত চুল পরিষ্কার করা:

অনেকেই আছে যারা রেগুলার চুলে তেল ব্যবহার করে চুলকে তেল চিটচিটে করে রাখে এবং চুল ভালোভাবে পরিষ্কার করে না। এতে চুলের গোড়ায় ময়লা জমতে জমতে চুলের গোড়া ব্লক হয়ে যায় ও খুশকি তৈরি হয়। তাই রেগুলার উৎপাদিত ময়লা রেগুলার পরিষ্কার করা উচিত। সপ্তাহে দুই,তিনবার ভালো মানের শ্যাম্পু দিয়ে চুল পরিষ্কার করে মাথার ত্বকে হট ওয়েল ম্যাসাজ করলে আরামবোধ করবেন।

সঠিক প্রোডাক্ট ব্যবহার করা:

মাথায় খুশকির সমস্যা থাকলে ভালো মানের আন্টি ডেনড্রাফ শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে। এমন শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে যেগুলোতে-জিঙ্ক প্যারিথিয়ন , কেটোকোনাজল, সেলেনিয়াম সালফাইড,ট্রি টি অয়েল, স্যালিসাইলিক এসিড ও কোল-টার আছে। এই ইনগ্রেডিয়েন্ট সমৃদ্ধ শ্যাম্পু ব্যবহারে চুলের খুশকি ও চুল পড়ার সমস্যা দূর হবে।
এছাড়াও আপনারা ব্যবহার করতে পারেন-

মাথার ত্বক এক্সফোলিয়েট করা:

মাথার খুশকি দূর করতে সপ্তাহে ১-২ বার স্কেল্প এক্সফোলিয়েশন খুবই কার্যকর একটি পদ্ধতি । মাথার ত্বক এক্সফোলিয়েশন করতে হেয়ার মাস্ক ব্যবহার করতে পারেন।এতে মাথার স্কেল্পে জমে থাকা অতিরিক্ত তেল ও ময়লা ক্লিন হবে পাশাপাশি রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পাবে ও স্কেল্পের মৃত কোষ বা খুশকি রিমুভ হবে।
হেয়ার মাস্ক –

শ্যাম্পুর পর কন্ডিশনার ব্যবহার:

চুলে খুশকি হলে মাথার ত্বক শুষ্ক হয়ে যায় ও চুলকানি হয়। তাই শ্যাম্পুর পর কন্ডিশনার ব্যবহার করা উচিত।কারন এটি মাথার স্কেল্প হাইড্রেটেট রাখে ও ড্যামেজ হেয়ার রিপেয়ার করে।
কন্ডিশনার-

হেয়ার অয়েল ব্যবহার:

খুশকির সমস্যা দূর করতে এমন তেল ব্যবহার করুন যেগুলোতে রয়েছে অ্যান্টিফাঙ্গাল ও আন্টি ইনফ্লামেটরি গুনাগুন। এক্ষেত্রে চুলের যত্নে ব্যবহার করতে পারেন -টি ট্রি অয়েল, নিম অয়েল, অলিভ অয়েল, মরক্কান অয়েল ও নারিকেল তেল। এগুলোতে রয়েছে এন্টি ইনফ্ল্যামেটরি ও অ্যান্টিফাঙ্গাল গুনাগুন যা চুলের গোড়া মজবুত করে,মাথার চুলকানি প্রশমিত করে এবং খুশকি রিমুভ করতে সাহায্য করে।

হেয়ার সিরাম ব্যবহার:

খুশকি সমস্যা দূর করার জন্য এমন হেয়ার সিরাম ব্যবহার করতে হবে যেগুলোতে রয়েছে- টি ট্রি অয়েল, অ্যালোভেরা ও কোকোনাট অয়েল। এটি স্ক্যাল্পের শুষ্কতা কমিয়ে , চুলের গোড়া মজবুত করে ও খুশকির সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। এছাড়াও রেগুলার হেয়ার সিরাম ব্যবহারে চুল স্বাস্থ্যকর, ঝলমলে ও সুন্দর হয়।
হেয়ার সিরাম-

চুল আঁচড়ানো:

বার বার চুল আঁচড়ানোর ফলে মাথার স্কেল্পে জমে থাকা খুশকি অনেকটাই উঠে আসে এবং চুলের ফলিকল উন্মুক্ত করে যা চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এছাড়াও এটি মাথায় ন্যাচারেল তেল উৎপাদনে সহায়তা করে। হেয়ার কোম্ব হিসেবে প্লাস্টিক বা হাড়ের চিরুনি ব্যবহার করতে পারেন।

স্বাস্থ্যকর খাবার ও পর্যাপ্ত পানি পান করুন:

চুলের মূল উপাদান হলো কেরাটিন যা, প্রোটিন থেকে তৈরি। প্রোটিনের অভাবে চুল পড়া সমস্যা বৃদ্ধি পায়।এছাড়াও আয়রন ,ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন ই, বিটা ক্যারোটিন, জিংক, ওমেগা-৩ ও পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান না করার অভাবে চুল পড়া, খুশকি ও চুলের স্বাস্থ্য অবনতি জনিত বিভিন্ন সমস্যা তৈরি হয়।

তাই চুলের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে রেগুলার খাবার তালিকায় প্রোটিন আয়রন ও ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে।

খুশকি মাথার ত্বককে শুষ্ক ও অস্বাস্থ্যকর করে তোলে, যা চুলের গোড়া দুর্বল করে ও চুল পড়ার সমস্যা বাড়ায়। তাই নিয়মিত চুলের যত্ন, সঠিক ডায়েট, এবং ভালো মানের অথেনটিক হেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহারের মাধ্যমে খুশকি এবং চুল পড়ার সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *