তৈলাক্ত ত্বকে ব্রণ দূর করার বিভিন্ন কার্যকরী উপায়।
সৌন্দর্য নির্ভর করে স্বাস্থ্যজ্জল, হেলদি, গ্লোয়িং ও দাগ মুক্ত ত্বকের উপর। মানুষের সৌন্দর্য তার গায়ের রঙের উপর নির্ভর করে না। শ্যামলা, কালো, ফর্সা ইত্যাদি গায়ের রং সৌন্দর্যের ওপর কোন প্রভাব ফেলে না।
ত্বক যদি হয় হেলদি, গ্লোয়িং ,দাগ মুক্ত, ব্রণহীন তাহলে তার সৌন্দর্য ফুটে উঠবে । সৌন্দর্যের ক্ষেত্রে গায়ের রং ম্যাটার করে না।
হেলদি, গ্লোয়িং , মসৃন , ব্রণ মুক্ত ত্বকের জন্য ত্বকের নিয়মিত যত্ন প্রয়োজন। নিয়মিত ত্বকের যত্ন না করলে ত্বকের নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা যেমন- ব্রণ, ছোপ ছোপ দাগ, ফুসকুড়ি, ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া, র্যাশ ইত্যাদি ।
কেন ব্রণ হয়?
সাধারণত বয়সন্ধিকালে হরমোনাল ভারসাম্য নষ্ট হলে ত্বকে ব্রণের সমস্যা তৈরি হয়। এছাড়াও গরমের দিনে আমাদের ত্বকে যখন অতিরিক্ত মাত্রায় সেবাম উৎপাদন হয় তখন ত্বক তৈলাক্ত হয়ে ওঠে এবং ত্বকরন্ধ্র সেবাম দ্বারা বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ত্বক সংক্রমিত হয়ে ব্রণের সমস্যা দেখা দেয়।
তাই নিয়মিত ত্বকের যত্ন নিলে ব্রণ থেকে দ্রুত মুক্তি পাওয়া সম্ভব। ত্বক সুন্দর ও ব্রনমুক্ত রাখতে আমরা বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করতে পারি।
ত্বকের তৈলাক্ততা কমাতে ফেসওয়াশ কিংবা ক্লিনজার ব্যবহার :
ত্বক পরিষ্কার রাখতে প্রথমেই নিয়মিত ঘুম থেকে উঠে ওয়াটার বেসড অথবা ওয়েল বেসড ফেসওয়াস দিয়ে ত্বক পরিষ্কার করুন। ত্বক হেলদি ও তৈলাক্ততা কমাতে অবশ্যই ফেইস ওয়াস বা ক্লিনজার ব্যবহার করতেই হবে। ত্বক সুন্দর রাখতে ত্বক পরিষ্কার রাখাটা জরুরি।
ব্রণ দূর করতে খাদ্যাভ্যাস :
বিশেষজ্ঞদের মতে, নিয়মিত খাবারের তালিকায় বিশেষ খাবারের প্রাধান্য দিলে ত্বক ভেতর থেকে হেলদি এবং ব্রণ মুক্ত থাকবে।
পানি পান করা –
এক্ষেত্রে প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে। নিয়মিত কমপক্ষে তিন লিটার পানি পান করতে হবে। পানি শরীরের পুষ্টি এবং অক্সিজেন বহন করে। পানি পান করার ফলে ত্বক হাইড্রেটেড থাকে। ত্বক জীবাণুমুক্ত এবং ব্রণ এর বিরুদ্ধে লড়াই করে ত্বক সুন্দর রাখে।
মৌসুমী ফল –
মৌসুমী ফলের মধ্যে তরমুজ, আম, কমলা ইত্যাদি ফল নিয়মিত খাবার তালিকায় রাখলে ত্বক হাইড্রেটেট থাকে। তরমুজে আছে ভিটামিন এ, ভিটামিন বি ও ভিটামিন সি। এটি ত্বকের ব্রণ হওয়ার প্রবণতা কমায় এবং ব্রণের দাগ রিমুভ করে ত্বক দাগ মুক্ত রাখে।
খাবার তালিকায় লেবু-
লেবু সাইট্রিক এসিড সমৃদ্ধ ফল। লেবুতে থাকা সাইট্রিক এসিড লিভার পরিষ্কার রাখে, রক্তের বিষাক্ত পদার্থ দূর করে এবং এনজাইম তৈরি করতে সাহায্য করে। ফলে ত্বক সতেজ, উজ্জ্বল ও ব্রণ মুক্ত হয়।
খাবার তালিকায় দই –
দইয়ে আছে অ্যান্টিফাঙ্গাল ও এন্টি ব্যাকটেরিয়াল গুনাবলী যা ত্বক পরিষ্কার রাখে এবং সেবাম দ্বারা বন্ধ হয়ে যাওয়া ত্বক রন্ধ্র অবরুদ্ধ করে। ফলে ত্বক হেলদি ও ব্রণ মুক্ত হয় । তাই নিয়মিত দই খাওয়ার অভ্যাস গড়ুন।
খাবার তালিকায় বাদাম/বীজ জাতীয় খাবার –
ত্বকের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান সেলেনিয়াম বাদাম জাতীয় খাবার থাকে আসে। বাদাম জাতীয় খাবার যেমন -আখরোট এ আছে লিনোলিক অ্যাসিড । যা ত্বকের গঠন বজায় রাখতে সাহায্য করে। নিয়মিত বাদাম খাওয়ার অভ্যাস গড়ুন। এটি ত্বককে হাইড্রেটেট রাখে।
খাবার তালিকায় করলা –
করলায় আছে এন্টি ব্যাকটেরিয়াল গুণাবলী। তিতা জাতীয় খাবার খেলে রক্ত পরিষ্কার থাকে এবং ত্বকে ব্রণ হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়।
কোন খাবার এড়িয়ে চলবেন –
অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলবেন। এর মধ্যে দুগ্ধ জাতীয় খাবার কম পরিমাণে খাবেন। ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবার ডায়েটে অবশ্যই রাখবেন পাশাপাশি ভাজাপোড়া ,ওয়েলি খাবার এড়িয়ে চলবেন।
ত্বক সুন্দর ,পরিষ্কার , মসৃণ ও ব্রণ মুক্ত রাখতে আমরা বিভিন্ন ঘরোয়া পদ্ধতিতে ফেসপ্যাক তৈরি করে ব্যবহার করতে পারি। আসুন জেনে নেই কিভাবে ব্যবহার করব।
চন্দন ফেসপ্যাক:
চন্দনে রয়েছে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য। ত্বক ভালো রাখতে এটি বিশেষভাবে কার্যকরী। ব্রণের সমস্যা দূর করতে চাইলে চন্দন ব্যবহার করতে পারেন। এক্ষেত্রে প্রথমে চন্দনের সাথে কয়েক ফোঁটা গোলাপ জল মিশিয়ে ফেসপ্যাক তৈরি করুন। ফেসপ্যাকটি ত্বকে দশ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। এভাবে সপ্তাহে দুইবার ব্যবহার করলে ভালো ফলাফল পাবেন।
নিমের ফেসপ্যাক:
নিম নানা ধরনের সংক্রমণ রোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। নিম পাতায় রয়েছে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিফাঙ্গাল গুণাবলী। নিম পাতা পেস্ট করে ব্রনের উপর সরাসরি লাগালে ও উপকার পাওয়া যায়।
এছাড়াও নিম পাতার পেস্ট এর সাথে আ্যলোভেরা জেল যুক্ত করে, কয়েক ফোঁটা মধু দিয়ে ফেস প্যাক তৈরি করুন। এই ফেসপ্যাক টি ব্যবহারের ফলে ত্বকের ব্রণ দূর হবে এবং ত্বক উজ্জ্বল হবে।
হলুদের ফেসপ্যাক:
ব্রণ দূর করতে হলুদ অনেক কার্যকরী ভেষজ উপাদান। এক্ষেত্রে হলুদ পেস্ট করে হলুদের সাথে নিমের পেস্ট, মধু ও চন্দন মিশিয়ে ফেসপ্যাক তৈরি করুন । এটি নিয়মিত ব্যবহারে ত্বক ব্রণ মুক্ত হবে।
বেসনের ফেসপ্যাক:
বেসন হচ্ছে প্রাকৃতিক ফেসওয়াশ। এটি ব্যবহারে ত্বকের তৈলাক্ত ভাব কমে এবং ত্বক পরিষ্কার হয়। সেই সঙ্গে ত্বকের দাগ দূর হয় এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে কয়েক গুন। বেসনের ফেসপ্যাক তৈরিতে – দুই চামচ বেসন, তিন চামচ দুধ ভালোভাবে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন।
এই পেস্টটি মুখে এবং গলায় ভালোভাবে মাখিয়ে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে দুইবার এই ফেসপ্যাকটি ব্যবহারে ভালো ফলাফল পাবেন।
ত্বক ব্রণ মুক্ত ও সুন্দর রাখতে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের পাশাপাশি বিভিন্ন ঘরোয়া উপায়ে ফেসপ্যাক তৈরি করে ত্বকে ব্যবহার করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। পাশাপাশি পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমাতে হবে। দৈনিক আট ঘন্টা ঘুমালে শরীর ভালো থাকে। তাই ত্বক সুন্দর, ব্রণ মুক্ত, হেলদি ও গ্লোয়িং রাখতে হেলদি লাইফ স্টাইলে জীবন যাপন করতে হবে।