চুলের যত্নে ভিটামিন ‘ই’ ক্যাপসুল: স্বাস্থ্যকর চুলের গোপন রহস্য।
চুলের সৌন্দর্য রক্ষায় আমরা চুলে বিভিন্ন প্রসাধনী ব্যবহার করে থাকি। আবার অনেকেই আছে , যারা শুধু শ্যাম্পু এবং তেল ব্যবহার করে চুলের যত্ন করে থাকে।
সমস্যার ধরন অনুযায়ী, ত্বকের মত চুলে ও মাঝে মাঝে বাড়তি কিছু যত্নের প্রয়োজন হয়। তাই শুধু শ্যাম্পু এবং তেল ব্যবহার করে চুলের যত্ন করলে হবে না। এক্ষেত্রে আমরা ভিটামিন ‘ই’ ক্যাপসুল সরাসরি খেতে পারি এবং তেলের সাথে মিশিয়ে বিভিন্ন হেয়ার প্যাক বানিয়ে চুলে ব্যবহার করতে পারি। এই দুই পদ্ধতিই সমানভাবে কার্যকর।
ভিটামিন ‘ই’ একটি চর্বি-দ্রবণীয় ভিটামিন যা শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। চুলের জন্য ভিটামিন ‘ই’ খুবই উপকারী। চুল পড়া কমানো থেকে শুরু করে লম্বা, ঘন, স্বাস্থ্যজ্জ্বল চুল পেতে এই ভিটামিন ‘ই’ খুবই কার্যকরী। তাই ভিটামিন ‘ই’ সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পাশাপাশি অনেকেই ভিটামিন ‘ই’ ক্যাপসুল সরাসরি চুলে ব্যবহার করে।
নিয়মিত ভিটামিন ‘ই’ ব্যবহারে চুলের গোড়া মজবুত হয়, চুল পড়া বন্ধ হয়। ভিটামিন ‘ই’ সরাসরি চুলে এবং মাথার স্কেল্পে ব্যবহার করা যায়।
চুলের যত্নে ভিটামিন ‘ই’ এর উপকারিতা:
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ফর্মূলা: ভিটামিন ‘ই’ চুলে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে এবং চুলের কোষগুলোকে ফ্রি র্যাডিকাল থেকে সুরক্ষা দেয়। ফ্রি র্যাডিকাল কোষের ক্ষতি করে এবং চুলকে দুর্বল করে ফেলে যার ফলে চুল সহজেই পড়ে যায়, এবং চুলের স্বাস্থ্য নষ্ট হয়। ভিটামিন ‘ই’ ব্যবহারে চুল গোড়া থেকে মজবুত হয় এবং চুল পড়া কমে যায়।
হেয়ার গ্রোথ ফর্মুলা: ভিটামিন ‘ই’ নিয়মিত ব্যবহারে মাথার স্ক্যাল্পে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে , যা চুলকে গোড়া থেকে পুষ্টি যোগায় এবং চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে।
হেয়ার ফলস কমায়: ভিটামিন ই এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুণাগুণ চুলকে গোড়া থেকে শক্তিশালী করে, এতে চুল সহজেই পড়ে না ।এটি চুলের গোড়াকে শক্তিশালী করে, ফলে চুল কম পড়ে।
চুলের আর্দ্রতা ধরে রাখে: ভিটামিন ‘ই’ তেল চুলের আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে। এটি চুলের শুষ্কতা দূর করে এবং চুলকে নরম ও মসৃণ করে ।
খুশকি প্রতিরোধ করে: মাথার স্ক্যাল্পে ভিটামিন ‘ই’ ব্যবহারে মাথার স্কেল্পে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায় যার ফলে স্ক্যাল্পে শুষ্কতা কমে এবং খুশকি দূর হয়। এটি স্ক্যাল্পে পুষ্টি যোগায় এবং আর্দ্রতা বজায় রাখে, যা খুশকি হওয়ার ঝুঁকি কমায়।
চুলের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে: ভিটামিন ‘ই’ তেল চুলের প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনে। এটি চুলের বাইরের স্তরকে মসৃণ করে, ফলে চুল ঝলমলে ও উজ্জ্বল দেখায়।
চুলের আগা ফাটা রোধ করে: ভিটামিন ‘ই’ এর ময়েশ্চারাইজিং বৈশিষ্ট্য চুলের আগা ফাটা রোধ করতে সাহায্য করে এবং চুলের ভঙ্গুরতা কমায়।
স্ক্যাল্পের স্বাস্থ্য উন্নত করে: মাথার স্ক্যাল্পে ভিটামিন ‘ই’ এর অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি গুণাবলীর প্রভাবে স্ক্যাল্পের প্রদাহ বা যেকোনো ধরণের জ্বালা-পোড়া কমায় এবং স্ক্যাল্পকে সুস্থ রাখে।
চুলের কোষকে পুনর্গঠন করে: ভিটামিন ‘ই’ চুলের কোষ পুনর্গঠনে সহায়ক, যা চুলকে পুনরুজ্জীবিত করে এবং ক্ষতিগ্রস্ত চুল মেরামত করে।
ক্ষতিকর UV রশ্মি থেকে সুরক্ষা দেয়: সূর্যের ক্ষতিকারক UV রশ্মির প্রভাবে চুল দুর্বল ও শুষ্ক হয়ে যায়। ভিটামিন ‘ই’ চুলকে ক্ষতিকর UV রশ্মি থেকে সুরক্ষা দেয়।
পরিশেষে বলা যায়,ভিটামিন ই ক্যাপসুলের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, আর্দ্রতা ধরে রাখার ক্ষমতা, এবং চুলের পুনরুজ্জীবীত করার গুণ চুলের জন্য বিশেষভাবে উপকারী।
তাই এটি নিয়মিত ব্যবহারে চুলের স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্য বজায় রাখা যায়।
ভিটামিন ‘ই’ ক্যাপসুল হেয়ার প্যাক
এখন আমরা জানব, চুলে ভিটামিন ‘ই’ ক্যাপসুল এর সাথে কি কি উপাদান মিশিয়ে চুলের জন্য পুষ্টিকর হেয়ার প্যাক তৈরি করা যায় সেই সম্পর্কে –
১. ভিটামিন ‘ই’ এবং নারকেল তেলের হেয়ার প্যাক:
প্রথমেই একটি বাটিতে ২-৩ টি ভিটামিন ‘ই’ ক্যাপসুল এর সাথে ২ টেবিল চামচ নারকেল তেলের সাথে মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করে নিন। এবার মিশ্রণটি ভালোভাবে চুলের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত লাগান। ১ ঘণ্টা রেখে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাকটি নিয়মিত ব্যবহারে চুল মসৃণ ও চকচকে হবে। এছাড়াও এটি ব্যবহারে শুষ্ক চুলে আর্দ্রতা বজায় থাকবে।
২. ভিটামিন ‘ই’ এবং মধুর হেয়ার প্যাক:
এক্ষেত্রে আমাদের লাগবে ২টি ভিটামিন ‘ই’ ক্যাপসুল, ১ টেবিল চামচ মধু ও ২ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল। এখন এই উপাদানগুলোকে একসাথে সাথে মিশিয়ে নিন। এবার এই মিশ্রণটি চুলে ও স্ক্যাল্পে ভালোভাবে লাগিয়ে ৩০-৪৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি নিয়মিত ব্যবহারে চুলের শুষ্কতা দূর হয়। এছাড়াও মধু চুলকে প্রাকৃতিকভাবে ময়েশ্চারাইজ করে এবং চুল মজবুত করে।
৩. ভিটামিন ‘ই’ এবং ডিমের হেয়ার প্যাক:
একটি বাটিতে ২টি ভিটামিন ‘ই’ ক্যাপসুল, ১টি ডিম ও ১ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করে নিন। এবার এই মিশ্রণটি পুরো চুলে ৩০-৪৫ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। এরপর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন এবং শ্যাম্পু ব্যবহার করুন। এই হেয়ার প্যাক নিয়মিত ব্যবহারে চুলের প্রোটিনের অভাব পূরণ করে,চুল পড়া কমায় এবং চুলের ঘনত্ব বাড়ায়।
৪. ভিটামিন ‘ই’ এবং অ্যালোভেরার হেয়ার প্যাক:
একটি বাটিতে ২টি ভিটামিন ‘ই’ ক্যাপসুলের তেল বের করে এর সাথে যোগ করুন ২ টেবিল চামচ অ্যালোভেরা জেল। এবার ভিটামিন ‘ই’তেল এবং অ্যালোভেরা জেল একসাথে মিশিয়ে নিন।এই প্যাকটি চুলের গোড়ায় এবং পুরো চুলে ৩০ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। এরপর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি নিয়মিত ব্যবহারে চুলে প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে এবং খুশকি কমাতে সাহায্য করে।
৫. ভিটামিন ‘ই’ এবং দইয়ের হেয়ার প্যাক:
প্রথমেই একটি বাটিতে ২টি ভিটামিন ‘ই’ ক্যাপসুলের তেল বের করে নেই এবার এটাতে যোগ করব ২ টেবিল চামচ টক দই এবং ১ টেবিল চামচ মধু। এখন দই , ভিটামিন ‘ই’ এর তেল, এবং মধু একসাথে মিশিয়ে মিশ্রণ তৈরি করুন। এবার এই মিশ্রণটি চুলে ৩০ মিনিট লাগিয়ে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই হেয়ার প্যাকটি নিয়মিত ব্যবহারে চুল ময়েশ্চারাইজড হয়,চুলে জট বাঁধে না এবং চুলকে সফট করে।
ভিটামিন ‘ই’ এর সাথে অন্যান্য প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি প্যাকগুলো চুলের স্বাস্থ্য রক্ষায় অনেক উপকারী।
আরো পড়ুন, চুলের যত্নে ভিটামিন এ এর উপকারিতা।