ত্বকের যত্নে আ্যজেলিক অ্যাসিডের ব্যবহার।
সৌন্দর্যচর্চায় নিত্যনতুন অ্যাক্টিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট যোগ হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এইসব ইনগ্রেডিয়েন্টে রয়েছে ত্বকের সৌন্দর্য চর্চায় প্রয়োজনীয় গুণাবলী যা ত্বকে আনে সজিবতা ,উজ্জ্বলতা ও দূর করে ত্বকের নানা ধরনের সমস্যা। এরকমই একটি একটিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট হলো আ্যজেলিক আ্যসিড।
আজকে আমরা জানবো আ্যজেলিক আ্যসিড ব্যবহারে ত্বকের সৌন্দর্যচর্চায় কি কি বেনিফিট পাওয়া যায় এবং আ্যজেলিক আ্যসিড ত্বকে কিভাবে ব্যবহার করব ।
আ্যজেলিক আ্যসিড ব্যবহার সম্পর্কে জানার পূর্বে প্রথমেই জানতে হবে,
অ্যাজেলিক আ্যসিড কি?
আ্যজেলিক আ্যসিড হল একটি জৈব যৌগ অর্থাৎ পরিনিষিক্ত ডাইকার্বক্সিলিক আ্যসিড । এটি প্রাকৃতিকভাবে গম ,বার্লি ও চালের মতো শস্যে পাওয়া যায়। এছাড়াও এটি ত্বকের যত্নে ব্যবহারের জন্য ল্যাবরেটরীতেও তৈরি করা হয়। আ্যজেলিক আ্যসিডের প্রাকৃতিক রং সাদা স্ফটিকের মত।
এটি ত্বকের ব্রণের সমস্যা কমায়, ব্রণের দাগ কমায়, মেছতা, হাইপারপিগমেন্টেশন, ছোপ ছোপ কালো দাগ কমাতে অত্যন্ত কার্যকরী একটি ইনগ্রেডিয়েন্ট।
আ্যজেলিক আ্যসিড ব্যবহারের উপকারিতা-
১. আ্যজেলিক আ্যসিডের মলিকিউল এর আকার বড় প্রকৃতির ফলে এটি ত্বকের গভীরে ধীরগতিতে পৌঁছায় এতে করে ত্বকের ইনফ্লামেশন কম হয় ,ত্বকে একনে দৃশ্যমান হয়না এবং ত্বকে জ্বালাপোড়া ও লাল ভাব হয় না।
২. ত্বকের পোরসে থাকা ব্যাকটেরিয়া রিমুভ করে ফলে ত্বক ক্লিন থাকে এবং ব্ল্যাকহেডস ,হোয়াইটহেডস ও একনের সমস্যা কম হয়।
৩. ত্বকে পোরস ক্লগড হয়ে যাওয়ার সমস্যা দূর করে ফলে ত্বকে একনে কম হয় এবং ত্বক ক্লিন থাকে।
৪. ত্বকের মেলানিন সিনথেসিস কমায় ফলে ত্বকের মেছতা, হাইপারপিগমেন্টেশন কমে যায়।
৫. আ্যজেলিক আ্যসিড ত্বকের অবাঞ্ছিত দাগ কমায় তাই ত্বক আরো বেশি উজ্জ্বল দেখায়।
৬. এতে আছে অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল ও এন্টি ইনফ্লেমটারি প্রপার্টিজ ফলে ত্বকের ব্রণের সমস্যা দূর হয় এবং ত্বককে আরো ব্রাইট করে।
আ্যজেলিক আ্যসিড ত্বকে কিভাবে ব্যবহার করব
যাদের ত্বকে ব্রণ,অবাঞ্ছিত দাগ, মেছতা ইত্যাদি সমস্যা আছে তাদের জন্য আ্যজেলিক আ্যসিড সমৃদ্ধ প্রোডাক্ট ব্যবহার করা ত্বক উপযোগী। বর্তমান বাজারে আ্যজেলিক আ্যসিড বিভিন্ন ফর্মে পাওয়া যায় যেমন – জেল, সিরাম ,ক্রিম ,ফোম,ক্লিনজার ইত্যাদি।
এখন আমরা জানবো আ্যজেলিক আ্যসিড ত্বকে কিভাবে ব্যবহার করব এবং কোন নিয়ম অনুসরণ করব সেই সম্পর্কে।
১. একটি মাইল্ড ক্লিনজার ফেসওয়াশ ব্যবহার করে স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি দিয়ে ত্বক ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে।
২. আ্যজেলিক আ্যসিড সমৃদ্ধ প্রডাক্ট যেমন- সিরাম ,ক্রিম, জেল ত্বকে এপ্লাই করার পূর্বে হাত অবশ্যই ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে।
৩. হাতের তালুতে খুবই অল্প পরিমাণে আ্যজেলিক আ্যসিড সমৃদ্ধ জেল ,ক্রিম ইত্যাদি নিয়ে হালকা হাতে পুরো ফেইসে ভালোভাবে এপ্লাই করুন এবং শুকানোর জন্য কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন।
৪. বাইরে বের হলে অবশ্যই সানস্ক্রিম ব্যবহার করবেন।
৫. বিগেইনারদের ক্ষেত্রে অ্যাজেলিক আ্যসিড ১০% বা এর চেয়েও কম পার্সেন্টেজে ত্বকে ব্যবহার করুন।
আ্যজেলিক আ্যসিড ব্যবহারে সাইড ইফেক্ট:
আ্যজেলিক আ্যসিড স্কিন কেয়ার রূটিনে অনেক কার্যকরী ভূমিকা রাখে পাশাপাশি এটা ব্যবহারে নানান ধরনের সাইড ইফেক্ট ত্বকে দেখা দেয়। চলুন জেনে নেওয়া যাক –
১. ত্বক শুষ্ক হয়ে যায় এবং লালচে ভাব হয়।
২. সেনসিটিভ ত্বকে জ্বালাপোড়া অনুভূত হয়।
৩. শুষ্ক ত্বকে চামড়া উঠে যায় অর্থাৎ স্কিন পিলিং হতে পারে।
৪. সেনসিটিভ ত্বকে চুলকানি দেখা দিতে পারে।
অ্যাজেলিক আ্যসিড ব্যবহারে কিছু সতর্কতা –
- আ্যজেলিক আ্যসিড স্কিন কেয়ার ওয়ার্ল্ডে ব্যবহৃত অন্যান্য ইনগ্রেডিয়েন্ট এর তুলনায় যথেষ্ট মাইল্ড প্রকৃতির। তাই এর কার্য পদ্ধতি ধীরগতিতে হয় অর্থাৎ এটা ব্যবহার শুরু করার পর ফলাফল পেতে ধৈর্য রাখতে হবে, এক্ষেত্রে ফলাফল পেতে দুই তিন মাস সময় ও লাগতে পারে।
- আ্যজেলিক আ্যসিড সমৃদ্ধ প্রডাক্ট ব্যবহারে পূর্বে অবশ্যই প্যাচ টেস্ট করতে হবে, অনেকাংশে সংবাদেনশীল ত্বকে জ্বালাভাব, লাল ভাব ও চুলকানির মত সমস্যা হতে পারে ।তাই ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই প্যাচ টেস্ট করতে হবে যদি ত্বকে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয় তাহলে অবশ্যই ব্যবহার বন্ধ করতে হবে এবং ডারমাটোলজিস্ট এর শরণাপন্ন হতে হবে।
- আ্যজেলিক আ্যসিড সব ধরনের স্কিনে ব্যবহারের জন্য নয়। আ্যজেলিক আ্যসিড একনে,একনের দাগ, হাইপারপিগমেন্টেশন ইত্যাদি সমস্যায় ভুক্তভোগী স্কিনের ক্ষেত্রে ব্যবহার উপযোগী।
- ত্বকে আ্যজেলিক আ্যসিড ব্যবহারের পর অবশ্যই সানস্ক্রিম লাগাতে হবে। সানস্ক্রিন না লাগালে ত্বকে সানডেমেজ, ত্বক পাতলা হয়ে যাওয়া ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- এটি প্রেগনেন্সি অবস্থায় এবং ব্রেস্টফিডিং মায়েরা নিশ্চিন্তে ব্যবহার করতে পারবেন।
আরো জানুন, গ্লাইকোলিক অ্যাসিড কি? কিভাবে ব্যবহার করব ও সর্তকতা।
Well advised.