ত্বকের যত্নে গ্লিসারিনের ব্যবহার ও উপকারিতা।
প্রকৃতি যখন শীতের হিমেল হাওয়া ও কুয়াশার চাদর জড়াতে শুরু করে, তখন আমাদের ত্বক যেন নিজের অজান্তেই কাঁপতে থাকে শুষ্কতার প্রকোপে। এই ঋতু শুধু শুষ্কতাই আনে না, সাথে আনে মিষ্টি রোদ ও উৎসবের আমেজ। তাই তো, এই ঋতু সবার কাছে এতো পছন্দের। তবে শীতের শুষ্কতায় ত্বকের অবস্থা যে, নাজেহাল হয়ে যায় তার কী হবে? শীতের শুষ্কতায় ঠোঁট, হাত-পা ও ত্বকে ফাটল ধরে ও নিস্তেজ হয়ে যায়। ত্বকের এই সমস্যা থেকে পরিত্রান পেতে শীত আসার আগেই নিতে হবে পূর্ব প্রস্তুতি।
ত্বককে সুন্দর,নরম ও মসৃণ রাখতে ব্যবহার করতে হবে প্রকৃতিরই দেওয়া ম্যাজিক অস্ত্র ‘গ্লিসারিন’। এটি ত্বকের যত্নে খুবই উপকারী। তাই আজকের ফিচারে, ত্বকের যত্নে গ্লিসারিনের ব্যবহার ও উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করব। চলুন জেনে নেই,
গ্লিসারিন কী?
গ্লিসারিন হল একটি সরল পলিয়ল যৌগ। এটি বর্ণহীন, গন্ধহীন, সান্দ্র ও মিষ্টি স্বাদযুক্ত এক প্রকারের তরল, যা উদ্ভিজ ও প্রাণীজ উৎস থেকে প্রাপ্ত। তবে স্কিন কেয়ারে বেশিরভাগ উদ্ভিজ উৎস থেকে প্রাপ্ত গ্লিসারিন ব্যবহার করা হয় । গ্লিসারিনের রয়েছে বহুমুখী ব্যবহার। ত্বকের যত্নে অর্গানিক গ্লিসারিন ব্যবহার করা ভালো। কারণ ১০০% পিওর গ্লিসারিন তৈরিতে কোনো ক্ষতিকর রাসায়নিক ব্যবহার করা হয় না। তাই পিওর গ্লিসারিন ত্বকের জন্যও খুবই সুরক্ষিত।
মশ্চারাইজার হিসেবে
গ্লিসারিনে রয়েছে হিউমেকট্যান্ট ফর্মুলা যা চারপাশের পরিবেশ থেকে ত্বকের ভেতর আর্দ্রতা টেনে নিয়ে ত্বকের উপরিভাগে ধরে রাখে অর্থাৎ পরিবেশ থেকে পানি শোষণ করে ত্বকে আর্দ্রতা যোগায় এবং ত্বকের ভেতরে সেই আর্দ্রতা আটকে রাখে। ফলে ত্বক হয় নরম ও মসৃণ।ত্বককে ময়েশ্চারাইজড রাখতে গ্লিসারিন, ভিটামিন ই ক্যাপসুল ও গোলাপজল দিয়ে একটি ময়েশ্চারাইজার তৈরি করে রাতে ঘুমানোর আগে ব্যবহার করতে পারেন।এটা তৈরি করতে লাগবে ১ চা চামচ গ্লিসারিন,১ চা চামচ গোলাপজল ও ১টি ভিটামিন ই ক্যাপসুল। এই সবগুলো উপকরণ একসঙ্গে মিশিয়ে একটি কৌটায় সংরক্ষণ করে ১ সপ্তাহ পর্যন্ত ফ্রিজে রেখে ব্যবহার করতে পারবেন।
ক্লিনজার হিসেবে
যাদের ত্বক অনেক বেশি ড্রাই তারা শীতকালে ত্বকে ক্লিনজার ব্যবহারের পর টানটান বা শুষ্কতা অনুভব করে। ত্বকের এই শুষ্কতা দূর করার জন্য আপনিও ফলো করতে পারেন গ্লিসারিনের এই ট্রিকসটি। এক্ষেত্রে আপনার রোজকার রুটিনে যোগ করূন গ্লিসারিন। এটি একটি প্রাকৃতিক হিউমেকট্যান্ট, যা ত্বক পরিষ্কার করে ও , আর্দ্রতা বজায় রাখে। এটি সব ধরনের স্কিন টাইপে নির্দ্বিধায় ব্যবহার করা যায়। কারন গ্লিসারিনে কোন প্রকারের অয়েল থাকেনা। তাই ফেসওয়াশ দিয়ে ত্বক ক্লিন করার পরে কিংবা ফেসওয়াশের সাথে কয়েক ফোটা গ্লিসারিন নিয়ে ব্যবহার করুন।
টোনার হিসেবে
ত্বককে ফ্রেশ ও সুথিং রাখতে টোনার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনি কি জানেন? গ্লিসারিন দিয়েও টোনার বানানো যায়। এই টোনারটি তৈরি করার জন্য একটি স্প্রে বোতল কিংবা কৌটায় এক চা চামচ গ্লিসারিন, এক চা চামচ আপেল সিডার ও চার টেবিল চামচ পানি মিশিয়ে তৈরি করুন। এটা ব্যবহারে আপনার ত্বক থাকবে দিনভর রিফ্রেশ ও হাইড্রেটেড।
ঠোঁটের যত্নে
ঠোঁটকে নরম ও কোমল রাখতে প্রাচীন কাল থেকেই গ্লিসারিন ব্যবহার হয়ে আসছে। মেয়েদের মধ্যে ঠোঁট ফাটা সমস্যা প্রায় সারাবছরই দেখা যায়। এই সমস্যা দূর করতে চাই হেলদি রুটিন। তাই প্রতি সপ্তাহে এক থেকে দুই বার চিনি ও মধু দিয়ে ঠোঁট স্ক্রাবিং করূন। রাতে ঘুমানোর আগে এবং ঘুম থেকে উঠে গ্লিসারিন ও গোলাপজল মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করে ব্যবহার করতে পারেন। এতে আপনার ঠোঁট হবে নরম,কোমল ও মসৃণ।
হাত ও পায়ের যত্নে
যাদের শীতকালে কাজের কারণে হাত-পা ফেটে যায়, তাদের জন্য গ্লিসারিন খুবই ভালো একটি অপসন। কারণ গ্লিসারিের হিউম্যাকট্যান্ট গুণাবলি ত্বককে রাখে হাইড্রেটেড। পাশাপাশি ত্বকের ছোট খাটো ক্ষত বা ফাটা দ্রুত সারাতে সাহায্য করে। তাই গ্লিসারিনের সাথে হালকা পানি মিশিয়ে হাত ও পায়ের গোড়ালিতে দিনে ও রাতে ব্যবহার করলে ভালো ফলাফল পাবেন।
ব্রনের সমস্যা কমায়
যেহেতু গ্লিসারিন হলো অয়েল ফ্রি ও নন কমেডোজেনিক উপাদান তাই, এটি ব্রণ প্রবণ ত্বকের জন্যও সেইভ। যারা প্রায় সারা বছরই ব্রণের সমস্যায় ভুগছেন তারা ত্বককে মশ্চারাইজড রাখতে নির্দ্বিধায় গ্লিসারিন ব্যবহার করতে পারেন। কারণ এটি ব্যবহারে ত্বকের পোরস ক্লগ হয় না ও ত্বক হয় নরম,কোমল ও ক্লিন।
ফেসপ্যাক তৈরিতে
ত্বকের বাড়তি যত্ন নিতে সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার ফেসপ্যাক ব্যবহার করা খুবই ভালো। তবে ফেইস প্যাক ব্যবহারের পর ত্বক স্বভাবতই টানটান হয়। বিশেষ করে যাদের স্কিন অনেক বেশি ড্রাই তারা এই সমস্যায় বেশি ভোগে। তাই শীতকালে অথবা যে কোন মৌসুমে-যখন আপনার স্কিন ড্রাই লাগবে তখন ফেসপ্যাক রেডি করার সময় কয়েক ফোটা গ্লিসারিন মিশিয়ে ত্বকে ব্যবহার করবেন। এতে আপনার ত্বক মশ্চারাইজ হবে ও হাইড্রেটেড থাকবে।
গ্লিসারিন ব্যবহারের সময়
বিশেষ করে গোসলের পর ত্বক পরিষ্কারও থাকে এবং অনেক বেশি শুষ্কও থাকে। এই সময় গ্লিসারিনের সাথে গোলাপজল অথবা অলিভ অয়েল মিশিয়ে শরীরের শুষ্ক স্থানে ব্যবহার করলে অনেক ভাল ফলাফল পাওয়া যায়। এছাড়াও রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে শুষ্ক ও ফাটা অংশে গ্লিসারিন ব্যবহার করলে খুব দ্রুত ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।
গ্লিসারিন ব্যবহারের ভুল সময়
দিনের বেলায় সূর্যের সংস্পর্শে যাওয়ার আগে গ্লিসারিন ব্যবহার না করাই ভালো। কারণ গ্লিসারিন একটি হিউমেকট্যান্ট যা বাতাস থেকে পানি টেনে আনে। কিন্তু যখন গ্লিসারিন লাগিয়ে সূর্যের সংস্পর্শে যাবেন, তখন এটা ত্বকের উপর ধরে রাখা পানি রোদের উত্তাপে আরও গরম হয়ে ত্বকে জ্বালাপোড়া, কালচে দাগ বা পিগমেন্টেশন তৈরি করে।
গ্লিসারিন ব্যবহারের বয়স সীমা
ত্বকের যত্নে ব্যবহৃত সকল গ্লিসারিন সাধারণত উদ্ভিজ উৎস থেকে তৈরি এবং এগুলো তৈরিতে কোন রাসায়নিক বা আর্টিফিশিয়াল পদার্থ ব্যবহার হয় না। তাই এগুলো সকল বয়সীদের জন্য সেইভ। তবে ত্বকে সরাসরি গ্লিসারিন ব্যবহার না করাই ভালো এতে অনেকেরই জ্বালাপোড়া অনুভূত হয়, কারণ গ্লিসারিন খুবই ঘন প্রকৃতির। তাই গ্লিসারিনের সাথে গোলাপজল কিংবা পানি মিশিয়ে ব্যবহার করলে ভালো হয়।
কোন ধরনের ত্বকে গ্লিসারিন ব্যবহার করবেন?
গ্লিসারিনে যেহেতু এক্সট্রা অয়েল নেই ও নন কমোডোজেনিক। তাই এটি ত্বকের পোরস ক্লগ করেনা ও ত্বককে রাখে নরম,কোমল ও মশ্চারাইজড। যা সব ধরনের স্কিনেই সুট করে এবং কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও ফেস করতে হয় না,তাই (নরমাল, ড্রাই ও কম্বিনেশন) সব ধরনের স্কিন টাইপে গ্লিসারিন ব্যবহার করতে পারবেন নির্দ্বিধায়।
আশা করি আজকের তথ্যবহুল ফিচারটি আপনাদের ভালো লেগেছে, এরকম আরো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতে ও অথেন্টিক প্রোডাক্ট পারচেজ করতে ভিজিট করুন Hretu’s World এর ওয়েবসাইটে ধন্যবাদ।