ত্বকের যত্ন

ত্বকের যত্নে গুরুত্বপূর্ণ ১৫ টি টিপস ও সাবধানতা!

15 tips and precautions for skin care!

ত্বক আমাদের শরীরের একটি সংবেদনশীল অংশ, যা প্রতিনিয়তই বাহ্যিক পরিবেশের প্রভাবে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সবাই চায় সুস্থ ও উজ্জ্বল ত্বকের অধিকারী হতে। কারণ সুস্থ ও উজ্জ্বল ত্বক কেবল সৌন্দর্য বাড়ায় না, সুস্বাস্থ্যেরও ইঙ্গিত বহন করে। তবে পারিপার্শ্বিক দূষণ, অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, এবং ভুলভাল ভাবে ত্বকের যত্ন নেওয়ার কারণে ত্বকের অনেক ক্ষতি হয়। তাই ত্বককে স্বাস্থ্যকর ও সুরক্ষিত রাখতে প্রয়োজন সচেতনতা ও সঠিক রুটিন মেইন্টেইন করার অভ্যাস।

আজকের ফিচারে আমি‌ ত্বকের যত্নে ১৫টি কার্যকরী টিপস ও সাবধানতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। যা আপনার প্রতিদিনের স্কিন কেয়ার রুটিনে সঠিক পথ দেখাবে এবং ত্বকের সাধারণ সমস্যা -শুষ্কতা, ব্রণ ও সান বার্ন এর সমস্যা দূর করতে সাহায্য করবে।

১.ত্বকের ধরন অনুযায়ী সঠিক প্রসাধনী চয়েস করা

আমরা অনেকেই ত্বকের ধরন না বুঝেই বিভিন্ন প্রোডাক্ট ইউজ করি, যা আমাদের অজান্তেই ত্বকের অনেক ক্ষতি করে। তাই যেকোন প্রোডাক্ট ব্যবহারের পূর্বে বা কেনার আগে প্রোডাক্টের গায়ের লেবেলে থাকা ইংগ্ৰেডিয়েন্ট ভালো মতো পড়ে কিনুন। যেমন: তৈলাক্ত ত্বকের জন্য- (সালিসাইলিক অ্যাসিড ,গ্লাইকোলিক অ্যাসিড ,ক্লে ,টি ট্রি অয়েল ) ,শুষ্ক ত্বকের জন্য – (হায়ালুরোনিক অ্যাসিড,গ্লিসারিন ,সিরামাইডস , অ্যালোভেরা ) ও সংবেদনশীল ত্বকের জন্য – অ্যালোভেরা ও নিয়াসিনামাইড। ত্বকের যত্নে ব্যবহৃত সানস্ক্রিন ও ময়েশ্চারাইজারের ক্ষেত্রেও ত্বকের ধরন বুঝে প্রোডাক্ট ব্যবহারে সতর্ক থাকতে হবে।

২.পর্যাপ্ত পানি পান করা

Drink enough water
Drink enough water

স্কিন কেয়ার রুটিন ফলো করার পাশাপাশি অবশ্যই, ত্বককে হাইড্রেটেড রাখতে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে। সারাদিনে কমপক্ষে ৮-১০ গ্লাস পানি পান করূন।

৩.ত্বকের ধরন অনুযায়ী সানস্ক্রিন ব্যবহার

বাইরে বেরোনোর ৩০ মিনিট আগে SPF 30+ সানস্ক্রিন লাগান এবং ত্বকের ধরন অনুযায়ী জেল-বেসড,ক্রিম-বেসড,ওয়াটার-বেসড ও মিনারেল বেসডের সানস্ক্রিন চয়েস করূন। যেমন – তৈলাক্ত ত্বকে জেল-বেসড বা ম্যাট ফিনিশ সানস্ক্রিন ব্যবহার করূন,শুষ্ক ত্বকে ক্রিম-বেসড অথবা লাইটওয়েট ফ্লুইড টাইপের টা ব্যবহার করুন ও সংবেদনশীল ত্বকে ব্যবহার করূন মিনারেল সানস্ক্রিন।

৪.ত্বকের ধরন অনুযায়ী ক্লিনজিং

ত্বকের ধরন বুঝে ক্লিনজার ব্যবহার করূন। মিশ্র ত্বককে ফোমিং ক্লিনজার বা মাইল্ড ক্লিনজার দিয়ে পরিষ্কার করুন‌।সংবেদনশীল ত্বক পরিষ্কার করার জন্য মিল্কি ক্লেনজার সকালে ও রাতে দুবার ব্যবহার করুন।

৫.ময়েশ্চারাইজিং

cold cream

ত্বকের ধরন অনুযায়ী ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। তৈলাক্ত ত্বকে : ওয়াটার-বেসডের অয়েল-ফ্রি ময়েশ্চারাইজার, শুষ্ক ত্বকে ক্রিম বা বাটার বেসডের ডিপ ময়েশ্চারাইজার এবং সংবেদনশীল ত্বকে অ্যালকোহল ফ্রি ও ফ্রেগরেন্স ফ্রি মিনারেল বেসড ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করূন।

৬.এক্সফলিয়েশন

ত্বকে জমে থাকা ডেড সেলস রিমুভ করতে সপ্তাহে ১-২ বার স্ক্রাব বা কেমিক্যাল এক্সফলিয়েট ব্যবহার করুন। ত্বক এক্সফোলিয়েশন করলে ত্বকের আন-ইভেন টোন ইভেন করে।

৭.ভালোভাবে মেকআপ রিমুভ করুন

মেকআপ সঠিকভাবে রিমুভ করলে ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো ভাবে বজায় রাখা সম্ভব । কারন, সঠিকভাবে মেকআপ রিমুড না করলে ত্বকে ব্রণ, ব্ল্যাকহেডস, এবং অন্যান্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই ঘুমানোর আগে মেকআপ ভালোভাবে অবশ্যই রিমুভ করুন। মেকআপ রিমুভ করতে কয়েকটি ধাপ অনুসরন করতে পারেন যেমন: প্রথমেই আপনার হাত ভালোভাবে ওয়াশ করূন, এবার একটি কটন প্যাডে মাইসেলার ওয়াটার নিয়ে আই এরিয়া ক্লিন করূন, এবার পুরো ফেইসের মেকআপ ভালোভাবে রিমুভ করে নিন। ত্বককে ভালোভাবে ক্লিন করতে এবার ফেইসওয়াশ ব্যবহার করূন।

৮.ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার খান

খাবার তালিকায় ভিটামিন A, C, E, D ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টযুক্ত ফলমূল , সবুজ শাকসবজি,মাছ,ডিম ও বাদাম /বীজ জাতীয় খাবার রাখুন । এগুলো ত্বককে স্বাস্থ্যকর রাখতে সাহায্য করে। আর অতিরিক্ত চিনি ,ফাস্ট ফুড,ক্যাফেইন, প্রসেসড ফুড ও ট্রান্স ফ্যাট জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন।

৯.পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমান

পর্যাপ্ত পরিমাণের ঘুম ত্বককে রিপেয়ার করতে ও পুনর্জননে সাহায্য করে। তাই রাতে কমপক্ষে ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম নিশ্চিত করূন।

১০.ঘন ঘন ত্বক ছোঁয়া এড়িয়ে চলুন

আমরা হাত দিয়ে সবসময়ই কোন না কোন কাজে ব্যস্ত থাকি। আর হাত থেকে ত্বকে জীবাণুর সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি থাকে। তাই ঘন ঘন ত্বকে হাত লাগানোর অভ্যাস পরিহার করতে হবে।

১১.মেকআপ সামগ্ৰি পরিষ্কার রাখুন

আমরা অনেকেই মেকআপ করার পর মেকআপে ব্যাবহৃত ব্রাশ ও অন্যান্য টুলস পরিষ্কার করতে ভুলে যাই। পরবর্তীতে এগুলো ব্যবহার করলে ত্বকে ব্রণ হওয়ার ঝুঁকি থাকে। তাই মেকআপ করার পর মেকআপে ব্যাবহৃত ব্রাশ ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করে রাখতে হবে।

১২.আই এরিয়ার যত্ন নেওয়া

আমরা অনেকেই ত্বকের যত্ন ভালোভাবে নিলেও আই এরিয়ার যত্ন আলাদাভাবে নেই না। এতে চোখের নিচে কালো দাগ পরে ,ফাইন লাইনস ও এজিং সাইন্স তারাতারি ভিজিবল হয় । তাই ত্বকের পাশাপাশি আই এরিয়ার ও যত্ন নিতে হবে।

১৩.ব্রণ চাপা

acne

আমরা অনেকেই ত্বকের ব্রণ, ব্ল্যাকহেডস হোয়াইটহেডস ও বাম্প দেখলে এগুলো চেপে ফাটাই। এই অভ্যাসটা ত্বকের জন্য খুবই ক্ষতিকর। কারন ব্রণ বা বাম্পস ফাটালে এগুলোর ভিতরে জমে থাকা জীবাণু ত্বকের চারপাশে ছরিয়ে যায়,এতে ত্বকে ইফেকশন ও দাগ হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

১৪.ধূমপান ও অ্যালকোহল বর্জন

ধূমপান ও অ্যালকোহল শারীরিক সুস্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এগুলো সেবনের প্রভাবে ত্বকের কোলাজেন ভাঙে ও ত্বকে দ্রুত বয়সের ছাপ পড়ে।

১৫. মেডিটেশন ও ব্যায়াম করা

নিয়মিত মেডিটেশন ও ব্যায়াম করলে শরীরের অভ্যন্তরীণ সুস্থতা নিশ্চিত হয়। স্ট্রেস, অনিয়মিত রক্তসঞ্চালন ও হরমোনের ভারসাম্যহীনতা ত্বকের নানা সমস্যার কারণ হতে পারে, যা মেডিটেশন ও ব্যায়ামের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। তাই আমাদের উচিত প্রতিদিন সকালে মেডিটেশন করা ও সকাল-বিকাল নিয়ম করে দশ থেকে বিশ মিনিট হাঁটা ।

এই তো জেনে নিলেন ত্বককে সুস্থ ও সুন্দর রাখতে কোন কোন অভ্যাস এরিয়ে চলতে হবে ও কোন কোন বিষয়গুলো ফলো করে চলতে হবে, সেই সম্পর্কে। আশা করি আজকের ফিচারে উল্লেখিত টিপস ফলো করে চললে আপনারা উপকৃত হবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *