গরমে ঠোঁটের সঠিক যত্ন নিন।
ঠোঁটের ত্বক শরীরের অন্যান্য অংশের তুলনায় অনেক বেশি সংবেদনশীল, তাই এর যত্ন নিতে হবে খুবই যত্ন সহকারে। শুধু শীতকালেই ঠোঁটের যত্ন নিতে হবে! বিষয়টা এমন না। ঠোঁটকে নরম ও কোমল রাখতে সারাবছরই এর যত্ন নিতে হয়। বিশেষজ্ঞরা জানান, শীতকালের শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে যেমন ঠোঁট ফেটে যায়, তেমনি গরমকালের তীব্র দাবদাহে শরীর পানিশুন্য হয়ে যায়,ফলে শুষ্কতার কারণে ত্বকের জলীয় উপাদান দ্রুত কমে যায় যা ঠোঁট ফাটা সমস্যার অন্যতম কারন।
গরমে ঠোঁটের সঠিক যত্ন
আমাদের ঠোঁটের বাইরের অংশের চামড়া শরীরের অন্যান্য অংশের তুলনায় খুবই পাতলা তাই শীত ও গরমের প্রভাবে শরীরের অন্যান্য অংশের তুলনায় ঠোঁট বেশি এফেক্টেট হয়। গরমকালের তীব্র দাবদাহে ঘাম, ধুলোবালি, অতিবেগুনি রশ্মি (UV rays), এবং পানিশূন্যতার মতো পরিবেশগত প্রভাবে ঠোটের বিভিন্ন সমস্যা যেমন- ঠোঁট শুষ্ক হয়ে ফাটল ধরা, রোদে পুড়ে জ্বালাপোড়া অনুভূত হওয়া ও ঠোঁট কালো হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা তৈরি হয়। তাই গরমকালেও ঠোঁটের যত্ন নিতে হবে । চলুন আজকের ফিচারে গরমকালে ঠোঁটের সঠিক যত্ন নেওয়ার উপায় সম্পর্কে জেনে নেই।
হাইড্রেশন বজায় রাখুন
ঠোঁটের ত্বকে সেবাসিয়াস বা তেল উৎপাদক গ্রন্থি নেই। তাই ঠোঁটে প্রাকৃতিকভাবে ময়েশ্চারাইজার সরবরাহ হয় না। ফলে শরীরে পানির অভাব বা বাহ্যিক শুষ্কতার সরাসরি প্রভাব ঠোঁটের ওপর পড়ে। ডিহাইড্রেশন ঠোঁট ফাটার প্রধান কারণ। তাই প্রচুর পানি পান করুন যাতে শরীর ও ঠোঁট আর্দ্র থাকে। শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে দিনে প্রায় ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন পাশাপাশি পানিযুক্ত ফল – তরমুজ ও শসা খান।
SPF যুক্ত লিপ বাম ব্যবহার
ঠোঁটের ত্বক সূর্যের UV রশ্মির প্রতি বেশি সংবেদনশীল। এছাড়াও ঠোঁটের ত্বকে মেলানিন এর অভাব থাকে। সূর্যের UV রশ্মির প্রভাবে ঠোঁটে সানবার্ন, কালো দাগ ও অকাল বার্ধক্য জনিত সমস্যা তৈরি হয়। কারণ সূর্যের ক্ষতিকর UVA/UVB রশ্মি ঠোঁটের ত্বকের কোলাজেন ভেঙে – শুষ্কতা, ফাটল ও ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই এই গরমে ঠোঁটকে সুরক্ষিত রাখতে বাইরে বের হওয়ার ৩০ মিনিট আগে SPF ১৫+ যুক্ত লিপ বাম ব্যবহার করূন।
ঠোঁট ভেজানো এড়িয়ে চলুন
অনেকেই ঠোঁট শুকিয়ে গেলে সাময়িক স্বস্তি পেতে জিহ্বা দিয়ে লেহন করে। কিন্তু এই অভ্যাসটা ঠোঁটের উপর মারাত্বক প্রভাব ফেলে। কারন লালা দিয়ে ঠোঁট ভেজানোর ফলে ঠোঁট দ্রুত শুষ্ক হয়ে যায় এবং আরও শক্ত হয়ে ফাটল দেখা দেয়। তাই অভ্যাসটা এড়িয়ে চলতে হবে।
লিপ বাম ব্যবহার করূন
ঠোঁটকে স্বাস্থ্যকর ও মসৃণ রাখতে লিপবাম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ লিপ বামে থাকা ময়েশ্চারাইজিং উপাদান ঠোঁটের শুষ্কতা দূর করে ঠোঁটকে দ্রুত হাইড্রেটেড করে। এছাড়াও লিপবাম ব্যবহারে পরিবেশগত ক্ষতি যেমন-সূর্যের UV রশ্মি, বাতাস, ঠান্ডা দূষণ ও শুষ্কতা থেকে রক্ষা পায়। নিয়মিত লিপবাম ব্যবহারে ঠোঁটের নমনীয়তা বজায় থাকে।
এক্সফোলিয়েশন
মৃত চামড়া ও শুষ্ক কোষের জন্য ঠোঁটকে অমসৃণ দেখায়। ঠোঁটকে নরম, মসৃণ ও প্রাণবন্ত রাখতে নিয়মিত এক্সফোলিয়েশন করতে হয়। ঠোঁট এক্সফোলিয়েশন করার সময় ঠোঁটে হালকা ম্যাসাজ করা হয়, এতে ঠোঁটের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায় এবং এতে ঠোঁটের প্রাকৃতিক গোলাপী আভা বজায় থাকে। ঠোটকে এক্সফোলিয়েশন করতে Cosrx Honey Sugar Lip Scrub ব্যবহার করূন। এছাড়াও চিনি ,মধু বা অলিভ অয়েল দিয়ে হোমমেড স্ক্রাব তৈরি করেও ঠোঁটে ব্যবহার করতে পারেন।
গরম ও শুষ্ক বাতাস থেকে সুরক্ষা
আমরা সবাই গরমের দিনে ক্লান্ত হয়ে এসি বা ফ্যানের নিচে গিয়ে বসি ক্লান্তি দূর করার জন্য। তবে বিশেষজ্ঞরা কি বলে, আপনারা জানেন কি? বিশেষজ্ঞদের মতে এসি বা ফ্যানের বাতাস ত্বকের আর্দ্রতা কমিয়ে দেয়। এতে ত্বক এবং ঠোঁটে চিড় ধরে ও শুষ্ক হয়ে টানটান অনূভুত হয়। তাই এসি বা ফ্যানের বাতাসে দীর্ঘ সময় ধরে থাকবেন না। প্রয়োজনে হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করুন।
ভিটামিন ও পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ
খাবার তালিকায় ভিটামিন B, C, E এবং জিঙ্ক সমৃদ্ধ খাবার যেমন- ফল, শাকসবজি ও বাদাম খান। এগুলো শরীর ও ঠোঁটের স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
ঘুমানোর আগে লিপবাম
সারাদিন বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকলেও রাতে নিজের যত্ন নেওয়ার জন্য আলাদা টাইম ম্যানেজ করা খুবই জরুরি। রাতে ত্বক ও ঠোঁটের বিভিন্ন সমস্যা দূর করার পর্যাপ্ত টাইম ম্যানেজ করা যায়। তাই দিনের তুলনায় রাতের যত্ন অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যারা ঠোঁট ফাটা ও শুষ্কতায় ভুগছেন তারা ঘুমানোর আগে শিয়া বাটারের মতো ডিপ ময়েশ্চারাইজিং উপাদান সমৃদ্ধ লিপবাম মোটা করে ব্যবহার করুন।
ম্যাট লিপস্টিক কম ব্যবহার করূন
ঠোঁটে ম্যাট লিপস্টিক ব্যবহার করলে ঠোঁট অনেক বেশি শুষ্ক হয়ে যায়। তাই গরমের দিনে ম্যাট লিপস্টিক ব্যবহারের পরিমাণ কমিয়ে দিন এবং ম্যাট লিপস্টিকের পরিবর্তে ময়েশ্চারাইজিং লিপ প্রডাক্ট ব্যবহার করূন।
অ্যালার্জি ট্রিগার পরিহার করুন
আপনার ঠোঁটের ত্বক যদি অনেক বেশি সংবেদনশীল হয়, তবে পারফিউম বা ক্যামিক্যাল যুক্ত লিপ প্রোডাক্ট পরিহার করুন।
ঠোঁটের যত্নে প্রাকৃতিক প্যাক
অ্যালোভেরা ও নারিকেল তেল একসাথে মিশিয়ে ঠোঁটে লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। এটি প্রতিদিন রাতেও ব্যবহার করতে পারেন। এটা ব্যবহারে ঠোঁটের শুষ্কতা ও ফাটা কমবে। এছাড়াও ঠোঁটকে ডিপলি ময়েশ্চারাইজড করতে রাতে ঘি বা মাখন লাগিয়ে ওভারনাইট রেখে সকালে ধুয়ে ফেলুন।এটা ব্যবহারে ঠোঁট হবে নরম ও কোমল।
ঠোঁট মুখমণ্ডলের সৌন্দর্যের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ, তাই এর যত্নে অবহেলা নয়। একটু সময় আর সঠিক যত্ন নিলেই আপনার ঠোঁট হয়ে উঠবে নরম,কোমল ও স্বাস্থ্যকর। তাই এই গরমে ঠোঁটকে স্বাস্থ্যকর রাখতে প্রতিদিনের রুটিনে উপরে উল্লেখিত টিপস ফলো করে চলুন।