লিপস্টিক পছন্দ করে না এমন কোন মেয়ে নেই প্রায় সব মেয়েদেরই লিপস্টিকের প্রতি একটা দুর্বলতা আছে।
রেগুলার সাজ , পার্টি মেকআপ বা গর্জিয়াস মেকাপ এর ক্ষেত্রে ঠোঁটে হালকা হলেও একটু লিপস্টিক এপ্লাই করতেই হবে তা না হলে সাজে যেন অপূর্ণতা থেকেই যায়। অনেকেই ড্রেসের সাথে ম্যাচিং করে লিপস্টিক দিতে পছন্দ করে, কিন্তু লিপস্টিক দেওয়ার পর দেখা যায় ড্রেসের সাথে ম্যাচিং লিপস্টিক শেডে নিজেকে মানাচ্ছে না।
কিন্তু লিপস্টিকের শেড নির্বাচনের ক্ষেত্রে আমরা অনেকেই কনফিউশনে ভুগি; কোন শেডে আমাদেরকে ভালো মানাবে ?
এমন কনফিউশনে আপনারাও নিশ্চয়ই ভুগছেন।
লিপস্টিকের শেড নির্বাচনের আগে প্রথমেই আপনার স্কিনটোন , আন্ডারটোন , ঠোঁটের আকার এবং রিসেন্ট আবহাওয়ার অবস্থার উপর নির্ভর করে প্রয়োজন অনুযায়ী লিপস্টিক ও লিপস্টিকের শেড নির্বাচন করতে হবে।
তাহলে প্রথমেই আমরা জেনে নেব স্কিনটোন সম্পর্কে।
স্কিনটোন
স্কিনটোন হল আপনার ত্বকের প্রাথমিক রঙ বা বর্ণ, যা সাধারণত তিনটি প্রধান শ্রেণীতে ভাগ করা হয় যথা- ফর্সা (Fair), মাঝারি (Medium/Olive), এবং কালো (Dark/Deep)। স্কিনটোন সাধারণত অপরিবর্তিত থাকে। তাই স্কিনটোন বুঝতে পারলে, আপনি আপনার জন্য মানানসই পোশাক, মেকআপ, এবং লিপস্টিকের শেড নির্বাচন করতে পারবেন।
আন্ডারটোন
আন্ডারটোন হল ত্বকের গভীর স্তরের সেই বর্ণ, যা ত্বকের উপরের স্কিনটোনের চেয়েও গভীরে থাকে এবং মূলত ত্বকের প্রকৃত উষ্ণতা বা ঠান্ডা ভাব প্রকাশ করে। আন্ডারটোন ত্বকের বাইরের রঙের পরিবর্তনের সত্ত্বেও সাধারণত অপরিবর্তিত থাকে। এটি স্কিনটোনের চেয়ে আলাদা, এবং মেকআপ, পোশাক, ও গয়না বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে আন্ডারটোন বুঝে শেড নির্বাচন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।আন্ডারটোনের প্রধান তিনটি ধরন-
১. উষ্ণ আন্ডারটোন (Warm Undertone) – ত্বকে সোনালি, হলুদ বা পীচি আভা থাকে,রক্তনালীগুলি সবুজাভ দেখায়,সোনালী গয়না সাধারণত ভালো মানায়।উষ্ণ আন্ডারটোনে কমলা ও পীচ শেডের লিপস্টিক ভালো মানায়।
২. ঠান্ডা আন্ডারটোন (Cool Undertone) – ত্বকে গোলাপি, লালচে বা নীলচে আভা থাকে,রক্তনালীগুলি নীল বা বেগুনি দেখায়,সিলভার বা প্লাটিনাম গয়না ভালো মানায়। ঠান্ডা আন্ডারটোনে লাল বা বেরি শেড ভালো মানায়।
৩. নিরপেক্ষ আন্ডারটোন (Neutral Undertone) – ত্বকে উষ্ণ এবং ঠান্ডা আভা দুটিই থাকে।রক্তনালীগুলি সবুজ ও নীলের মিশ্রণ দেখা যায়,সোনালী এবং সিলভার উভয় ধরনের গয়না মানায়। এছাড়াও নিরপেক্ষ আন্ডারটোন থাকা মানে আপনার ত্বকে উষ্ণ ও ঠান্ডা উভয় আভা রয়েছে, যা বেশিরভাগ লিপস্টিক শেডে মানিয়ে যায়। এক্ষেত্রে – নুড শেডের -পীচি নুড, গোলাপি নুড, বা বেইজ নুড ,মভ বা লাইট বেরি শেড ,গোলাপি শেডের-ডাস্টি রোজ বা সফট পিঙ্ক ,লাল শেড-ক্লাসিক রেড, চেরি রেড বা টমেটো রেড ,করাল শেড এবং ডিপ শেডের মধ্যে বার্গান্ডি, প্লাম, বা গাঢ় বেরি ভালো মানায়।
লিপস্টিক শেড নির্বাচন
নিজের স্বাচ্ছন্দ্য এবং লুক অনুযায়ী শেড বেছে নেওয়াই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
লিপস্টিকের ফিনিশিং অনুযায়ী
এক্ষেত্রে আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী লিপস্টিক নির্বাচন করবেন। রেগুলার ন্যাচারাল গেটাপের জন্য গ্লসি লিপস্টিক নির্বাচন করতে পারেন এক্ষেত্রে, এটি ঠোঁটকে উজ্জ্বল করে , ন্যাচারাল লুক ক্রিয়েট করে কিন্তু এটি বেশি সময় দীর্ঘস্থায়ী নয়। বিয়ে বাড়ি কিংবা পার্টি মেকআপের ক্ষেত্রে ম্যাট লিপস্টিক বাছাই করতে পারেন কারন এটা দীর্ঘস্থায়ী ও লং টাইম থাকবে।
শীতকাল কিংবা আর্দ্র আবহাওয়ায় ক্ষেত্রে স্যাটিন/ক্রিমি লিপস্টিক বাছাই করবেন। এটি লিপে মসৃণ ফিনিশ দেয় এবং লিপ নরম রাখে। এছাড়াও আদ্র আবহাওয়ায় যদি আপনার গর্জিয়াস লুক প্রয়োজন হয় সেক্ষেত্রে লিকুইড লিপস্টিক ব্যবহার করতে পারেন। কারণ এটি প্রচণ্ড পিগমেন্টেড এবং দীর্ঘস্থায়ী হয়।
ঠোঁটের আকার অনুযায়ী
ঠোঁটের আকার অনুযায়ী শেড নির্বাচন করলে ঠোঁট আরও আকর্ষণীয় দেখায়। ছোট ঠোঁটের জন্য হালকা শেড এবং বড় ঠোঁটের জন্য গাঢ় শেড ব্যবহার করলে ভালো মানায়।
মৌসুম অনুযায়ী
গরমের সময় হালকা ও উজ্জ্বল শেইড যেমন-পীচ ও কোরাল আর শীতের জন্য গাঢ় শেড -বার্গান্ডি, প্লাম মানানসই হয়।
আপনার পার্সোনালিটি এবং স্টাইল অনুযায়ী
আপনার ব্যক্তিগত স্টাইলের উপর নির্ভর করে – যদি আপনি ক্লাসিক এবং মিনিমালিস্ট স্টাইল পছন্দ করেন, তাহলে নুড এবং ন্যাচারাল শেইডগুলো বেছে নিতে পারেন। আর যদি সাহসী এবং স্টাইলিশ লুক পছন্দ করেন, তাহলে গাঢ় বা উজ্জ্বল শেইড বেছে নিন।
লিপস্টিক শেড ব্যবহার
এখন আমরা জানবো, স্কিনটোন অনুযায়ী কোন লিপস্টিকের শেড ব্যবহার করবেন সেই সম্পর্কে।
ফর্সা (fair)স্কিনের ক্ষেত্রে-
- ফর্সা ত্বকে লিপস্টিকের হালকা ও ন্যাচারাল শেডগুলো চমৎকার মানায়।
- পিঙ্ক শেড -রোজ পিঙ্ক,বেবি পিঙ্ক,পিচি পিঙ্ক।
- রেড শেড-কোল্ডকোল্ড আন্ডারটোনের রেড,ব্লাশ রেড,ব্রাইট চেরি রেড।
- নূড শেড-পিচ ন্যুড,হালকা বেজ ন্যুড,সফট পিঙ্ক ন্যুড।
- কোরাল শেড-লাইট কোরাল,পিচ কোরাল।
- বেরি শেড-সফট বেরি,হালকা প্লাম।
- এই শেডগুলো ফর্সা ত্বকে স্বাভাবিক এবং উজ্জ্বল লুক দেয়।
মাঝারি (medium/olive) স্কিনের ক্ষেত্রে-
মিডিয়াম বা অলিভ স্কিনটোনে লিপস্টিকের কিছু নির্দিষ্ট শেড খুব সুন্দরভাবে মানিয়ে যায় এবং ত্বকের প্রাকৃতিক আভা আরও উজ্জ্বল করে তোলে। যেমন – করাল শেডের উজ্জ্বল কোরাল শেইড, পীচি নুড , টেরাকোটা বা মরিচা লাল , বার্গান্ডি বা প্লাম ,মভ বা বেরি শেইড ,গোল্ডেন ব্রাউন বা কফি শেড , কোরাল পিঙ্ক, ডাস্টি রোজ, বা মাঝারি গোলাপি শেডগুলি খুবই মানানসই হয়। এই শেড অ্যাপ্লাই এ ত্বক উজ্জ্বল দেখায় এবং একটি ন্যাচারাল ও রিফ্রেশিং লুক দেয়।
কালো(dark/deep) স্কিনটোনের ক্ষেত্রে-
ডার্ক স্কিনটোনে লিপস্টিকের কিছু শেড অত্যন্ত সুন্দরভাবে মানিয়ে যায় এবং ত্বকের প্রাকৃতিক আভাকে আরও উজ্জ্বল করে তোলে। কালো ত্বকে উজ্জ্বল এবং গভীর শেইডগুলো বিশেষভাবে আকর্ষণীয় লাগে। যেমন-
বার্গান্ডি বা ডিপ রেড শেইড ,গাঢ় প্লাম বা বেরি শেইড,চকলেট বা ডার্ক ব্রাউন শেড ,গাঢ় গোলাপি বা ফুচিয়া শেড ডার্ক স্কিনটোনে প্রাণবন্ত দেখায়। এটি আপনার ঠোঁটকে উজ্জ্বল করে এবং ফ্রেশ লুক দেয়। এছাড়াও উজ্জ্বল টমেটো রেড বা ব্লু আন্ডারটোনের ক্লাসিক রেড শেড গাঢ় ত্বকের সাথে খুব ভালো মানায়। এটি সাহসী এবং ক্লাসিক লুক তৈরি করে।সোনালি বা ব্রোঞ্জি টোনের লিপস্টিক , ওয়াইন বা মারুন এবং ডার্ক নুড বা ক্যারামেল শেইডগুলো ডার্ক স্কিনের সাথে খুব ভালোভাবে মিশে যায়। এগুলো ন্যাচারাল লুক দেয় এবং দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত।উষ্ণ কমলা বা মরিচা লাল শেইডগুলো গাঢ় ত্বকের সাথে খুব ভালো মানায় এবং ফ্রেশ ও প্রাণবন্ত লুক দেয়।
লিপস্টিক ব্যবহারের পূর্বে যে বিষয়গুলো মাথায় রাখবেন
১. ঠোটে লিপস্টিক অ্যাপ্লাই এর পূর্বে লিপ স্ক্রাব করে মরা চামড়া রিমুভ করে নিবেন এবং লিপস্টিক দেয়ার আগে ঠোঁটে লিপ প্রাইমার ও ফাউন্ডেশন দিয়ে নিবেন।এর ফলে লিপস্টিকের কালারটা ঠোঁটে ভালোভাবে ফুটে উঠবে ।
২. লিপজেল বা লিপবাম দিয়ে ঠোঁট ময়েশ্চারাইজড রাখবেন।
৩. অয়েলি স্কিনের ক্ষেত্রে যদি গ্লসি টাইপের লিপস্টিক ব্যবহার করেন তবে পুরো মুখেই একটা অয়েলি ভাব এসে যায়, তাই ম্যাট বা সেমি ম্যাট লিপস্টিক আপনার জন্য বেস্ট অপশন হবে। এক্ষেত্রে লিপস্টিক অ্যাপ্লাইয়ের পর টিস্যু পেপার দিয়ে হালকা প্রেস করে নিতে পারেন। শুষ্ক ত্বকে ডিউয়ি বা গ্লোয়ি ভাব আনতে স্যাটিন, ক্রিমি ফর্মুলার অথবা গ্লসি লিপস্টিক সিলেক্ট করতে পারেন।
I also used Laneige lip mask 🤩