ত্বকে টোনার ও সিরাম ব্যবহারের নিয়ম।
ত্বকে টোনার এবং সিরাম কেন ব্যবহার করব? ত্বকে টোনার ও সিরাম ব্যবহারের নিয়ম? ত্বকের ধরন অনুযায়ী টোনার এবং সিরাম এড করুন আপনার স্কিন কেয়ার রুটিনে।
ত্বকে টোনার এবং সিরাম কেন ব্যবহার করব?
সুন্দর এবং স্বাস্থ্যউজ্জ্বল ত্বকের কামনায় আমরা কত কিছু করি। সুন্দর, স্বাস্থ্যজ্জল, মসৃণ ও টানটান ত্বকের জন্য টোনার এবং সিরাম খুবই কার্যকর। নির্দিষ্ট বয়সের পর ত্বকে ফেসওয়াশ এবং ময়শ্চারাইজিং ক্রিম এর পাশাপাশি আরও কিছু স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট অ্যাড করা প্রয়োজন হয়। কারণ একটা নির্দিষ্ট বয়সের পর ত্বক এর উজ্জ্বলতা এবং কোলাজেন প্রোডাকশন কমে যায় ফলে ত্বকে দেখা দেয় নানা ধরনের সমস্যা।
ত্বক সুন্দর ,স্বাস্থ্যজ্জল এবং উজ্জ্বলতা বাড়াতে প্রয়োজনীয় সব সক্রিয় ও শক্তিশালী উপাদান সংগ্রৃহীত থাকে টোনার এবং সিরামে। টোনার এবং সিরাম ত্বকে ম্যাজিক এর মত কাজ করে।
ত্বকে টোনার ও সিরামের আলাদা আলাদা বেনিফিট আছে।প্রথমেই আমরা আলোচনা করব টোনার সম্পর্কে।
টোনার কি?
টোনার হলো একটি ওয়াটার বেসড স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট ।টোনার এমন একটা তরল যা দ্রুত ত্বকে অনুপ্রবেশ করে ত্বককে দ্রুত হাইড্রেশন করে এবং ত্বকের মৃতকোষ অপসারণ করে। টোনারের মলিকিউলার সাইজ অনেক ছোট তাই ত্বকের গভীরে অনেক তাড়াতাড়ি এটি প্রবেশ করতে পারে।
এটি ত্বকের গভীরে প্রবেশ করে ত্বকের ময়লা পরিষ্কার করে, ত্বকের পিএইচ মান ব্যালেন্স রাখে এবং ত্বককে করবে মসৃণ এবং টানটান। টোনার হচ্ছে একটা ‘ ইন বিটুইন ‘ স্টেপ।
ত্বকে টোনার কেন ব্যবহার করব? ও কি কি বেনিফিট পাওয়া যায়:
আমাদের পারিপার্শ্বিক পরিবেশ, বয়স এবং আরো নানা কারণে আমাদের ত্বকের প্রয়োজনীয় পানির পরিমাণ হ্রাস পায়। ফলে ত্বক নিষ্প্রাণ হয়ে যায়। এক্ষেত্রে ত্বককে হাইড্রেট রাখতে সবচেয়ে কার্যকর হচ্ছে টোনার। টোনার ত্বকের পিএইচ লেভেল ব্যালেন্স রাখে।ত্বকের পিএইচ লেভেলের ব্যালেন্স রাখার ফলে ত্বকে নানা ধরনের সমস্যা কমে যায়।
সারাদিনের ক্লান্তি, পরিশ্রম এবং দূষিত ধুলাবালিতে আমাদের ত্বকের লাবণ্যতা কমে যায় এবং ত্বক নিষ্প্রাণ হয়ে যায়। এমন পরিস্থিতিতে ত্বকে নানা ধরনের স্কিন প্রবলেম দেখা দেয়। তাই প্রয়োজন রেগুলার স্কিন কেয়ার রুটিনে টোনার ব্যবহার করা।আমরা অনেকেই জানি না টোনার ব্যবহারে কি কি বেনিফিট পাওয়া যায়।
চলুন জেনে নেয়া যাক, টোনার ব্যবহারে আমরা কি কি বেনিফিট পাব।
১. ত্বকের যত্নের প্রথম ধাপ ত্বক ক্লিনজিং করা, এক্ষেত্রে ত্বক ক্লিনজিং করার পরেও যদি কোন ইনপিউরিটি থেকে যায় তাহলে তা দূর করতে সাহায্য করে টোনার।
২. ত্বক ক্লিনজিং এর পরে ত্বকের লোমকূপ খোলা অবস্থায় থাকে তখন তা টোনার বন্ধ করে।
৩. ত্বকের পিএইচ ব্যালেন্স বজায় রাখে।
৪. ত্বকের তৈলাক্ততা নিয়ন্ত্রণ করে।
৫. ত্বকে পানির পরিমাণ বজায় রেখে ত্বক হাইড্রেট রাখে।
৬. মশ্চারাইজার গ্রহণের জন্য ত্বককে প্রস্তুত করে।
৬. ত্বক টানটান রাখে।
৭. ত্বকে বলি রেখা, রিংকেলস, বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না।
৮. ত্বকের ওপেন পোর্স মিনিমাইজ করতে সাহায্য করে।
ত্বকের ধরন অনুযায়ী টোনার ব্যবহার:
টোনার ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই আপনাকে নিজের ত্বকের ধরন জানতে হবে। ত্বকের ধরন অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের টোনার পাওয়া যায়।
নরমাল স্কিনের ক্ষেত্রে:
যে সকল টোনারে হাইড্রেটিং ফর্মুলা আছে এমন টোনার ব্যবহার করা যায় নরমাল স্কিনে। হায়ালুরনিক এসিড, স্যালিসাইলিক অ্যাসিড, ভিটামিন সি এবং ল্যাকটিক এসিড সমৃদ্ধ টোনার ব্যবহারে ভালো বেনিফিট পাওয়া যায়।
তৈলাক্ত স্কিনের ক্ষেত্রে:
গ্লাইকোলিক, স্যালিসাইলিক এসিড, নিয়োসিনামাইড অ্যাসিড, গ্রিন ট্রি ও টি ট্রি অয়েল যুক্ত টোনার ব্যবহার করলে ত্বকের তৈলাক্ততা নিয়ন্ত্রণে আসে ত্বকের ওপেন পোরস সংকুচিত হয় এবং একনে প্রোন স্কিনে ভালো কাজ করে । অ্যালকোহল বা সালফেট যুক্ত টোনার ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন কারণ এই ধরনের টোনার ত্বকের তৈলাক্ততা বাড়িয়ে দেয়।
শুষ্ক বা ড্রাই স্কিনের ক্ষেত্রে:
এক্ষেত্রে হায়লোরনিক এসিড, পেপটাইট , জোজবা ওয়েল, গ্লিসারিন, ভিটামিন ই যুক্ত টোনার ব্যবহারে ত্বক হাইড্রেট থাকে। এই শক্তিশালী উপাদান গুলো ত্বকের আদ্রতা বজায় রাখে এবং ত্বককে মসৃণ করে।
কম্বিনেশন স্কিনের ক্ষেত্রে:
এক্ষেত্রে হায়ালুরনিক এসিড, স্যালিসাইলিক এসিড, ল্যাকটিক এসিড সমৃদ্ধ টোনার ব্যবহারে তো হাইড্রেট থাকে এবং একনি প্রোন স্কিনের ক্ষেত্রে আলফা হাইড্রোক্সি, গ্লাইকোলিক এসিড সমৃদ্ধ টোনার ব্যবহারে ভালো বেনিফিট পাওয়া যায়। এছাড়া রোদে পোড়া ত্বক ও বলিরেখা পড়া ত্বকে ভিটামিন ই, হায়ালুরনিক এসিড,ভিটামিন সি ও গ্লাইকোলিক এসিড সমৃদ্ধ টোনার ব্যবহার করা উচিত।
টোনার কিভাবে ব্যবহার করব:
ত্বক ক্লিন করার প্রথম ধাপ ত্বক ক্লিনজিং করা। তাহলে প্রথমেই ত্বক ক্লিনজিং দিয়ে পরিষ্কার করে নিব। ত্বক ভালো করে ক্লিনজিং করার পর একটি কটন প্যাড অথবা হাতে কয়েক ফোটা টোনার নিয়ে আস্তে আস্তে পুরো ফেইসে এপ্লাই করে নিন।
টোনার ব্যবহারের পরেই ত্বকে সিরাম লাগাতে হয়।
এখন আমরা জেনে নিব সিরাম সম্পর্কে।
সিরাম কি?
সিরাম হল হালকা এবং সহজে শোষিত তেল বা জলভিত্তিক তরল যা দ্রুত ত্বকে ছড়িয়ে যায়। সিরামে রয়েছে ইলেক্ট্রোলাইটস, এন্টিজেন অ্যান্টিবডি, এবং আরো অন্যান্য শক্তিশালী উপাদান। সিরাম জল ভিত্তিক হওয়ায় এটিকে দ্রুত ত্বক শুষে নিতে পারে এবং ত্বক দ্রুত ভেতর থেকে মশ্চারাইজ হয়।
ত্বকে সিরাম কেন ব্যবহার করব?
নির্দিষ্ট বয়সের পর ত্বকে কোলাজেনের প্রোডাকশন কমে যায় ফলে ত্বকের ক্ষতির মাত্রাও বেড়ে যায়। ফলে ত্বকে রিংকেলস,ফাইন লাইনস, ত্বক কুঁচকে যাওয়ার মত সমস্যা সৃষ্টি হয়। ত্বকে তারুণ্যতা ,লাবণ্যতা এবং উজ্জ্বলতা কমে যায়।
ত্বকের উজ্জ্বলতা ,লাবণ্যতা ধরে রাখতে সিরামে রয়েছে সক্রিয় ও শক্তিশালী উপাদান। এছাড়াও ত্বক হাইড্রেটিং, একনি প্রবলেম দূর করতে এবং উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে সিরামে রয়েছে সক্সিয় উপাদান।
ত্বকের ধরন অনুযায়ী সিরাম ব্যবহার:
ত্বকের ধরন অনুযায়ী সিরাম ব্যবহার বলতে, সিরাম কেনার আগে অবশ্যই সিরামের উপাদান সম্পর্কে অবগত হবেন এবং সেই উপাদান অনুযায়ী ত্বকে সিরাম ব্যবহার করবেন । তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক এই বিষয়ে।
শুষ্ক বা ড্রাই স্কিনের ক্ষেত্রে:
ড্রাই স্কিন শুষ্ক, খসখসে এবং অমসৃণ হওয়ার ফলে ত্বক দেখায় নিষ্প্রাণ ও বিবর্ণ। ত্বক শুষ্ক হওয়ার কারনে ত্বকে চুলকানি ও জ্বালাপোড়া শুরু হয়। এই ধরনের ত্বকে হায়লুরনিক এসিড, গ্লিসারিন এবং আ্যলোভেরা সমৃদ্ধ সিরাম ব্যবহার করলে ত্বক হাইড্রেট থাকে এবং ত্বকের আদ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে।
নরমাল স্কিনের ক্ষেত্রে:
নরমাল স্কিনে তৈলাক্ত ভাব ,ড্রাইভাব দুই রকমের অবস্থা থাকে । ফলে ত্বক বেশি তৈলাক্ত এবং বেশি শুষ্ক থাকে না। ত্বক স্বাভাবিক অবস্থায় বজায় থাকে। এ ধরনের স্কিনের ক্ষেত্রে প্রায় সব ধরনের সিরাম যা নরমাল স্কিনের জন্য প্রযোজ্য তা নির্দ্বিধায় ব্যবহার করা যায়। রেটিনল এবং ভিটামিন সি যুক্ত সিরামে অনেক বেনিফিট থাকে। এই দুটি সিরামের উপাদানে রয়েছে বয়সের ছাপ প্রতিরোধ , ত্বকের তারুন্যতা বৃদ্ধি এবং ত্বক উজ্জ্বল করার বেনিফিট।
তৈলাক্ত স্কিনের ক্ষেত্রে:
তৈলাক্ত স্কিনে সবসময় ত্বক অয়েলি হয়ে থাকে। ফলে এ ধরনের স্কিনে একনি প্রবলেম হয়। একনি প্রবলেম স্কিনে ব্রনের কারণে ত্বকে নানা ধরনের দাগ থেকে যায়। তাই এই ধরনের স্কিনে এমন ধরনের সিরাম ব্যবহার করতে হবে যা ব্যবহারে ত্বক অয়েলি ভাব , একনি প্রবলেম এবং রিঙ্কেলস কমবেএমন ধরনের উপাদান যুক্ত সিরাম ব্যবহার করতে হবে।
এক্ষেত্রে রেটিনল, ভিটামিন সি এবং স্যালিসাইলিক এসির যুক্ত সিরাম ব্যবহারে ত্বকের ওপেন পোরস মিনিমাইজ করে, ত্বকের ডার্ক সার্কেল কমায় এবং ত্বকের অয়েল কন্ট্রোল হয়।
অল স্কিন টাইপ স্কিনের ক্ষেত্রে:
অল স্কিন টাইপে প্রায় সব ধরনের স্কিন টাইপের প্রাথমিক সমস্যা গুলো থাকে। এক্ষেত্রে ত্বকের উজ্জ্বলতা কমে যাওয়া ,দাগ ছোপ থাকা, মেছতা থাকা, বয়সের ছাপ ,রিংকেল, ডার্ক সার্কেল ও ব্রণ ইত্যাদি স্কিন প্রবলেম থাকে।
এসব সমস্যা সাধারণত পুরোপুরি ভাবে দূর করা যায় না ,তবে সিরাম ব্যবহারে এসব সমস্যা কন্ট্রোলে থাকে। এক্ষেত্রে নিয়োসিনামাইড ,আরবুটিন, ভিটামিন সি, রেটিনল উপাদান যুক্ত সিরাম ব্যবহারে ত্বকের সমস্যা গুলো কন্ট্রোলে থাকবে।
সিরাম ব্যবহারের নিয়ম:
ত্বক ক্লিনজিং করার পর টোনার ব্যবহার করতে হয় । টোনার ব্যবহারে ত্বকের ওপেন পোর্সের সমস্যা এবং ত্বকের পিএইচ ব্যালেন্স বজায় থাকে। এরপরেই ব্যবহার করতে হয় সিরাম । মুখে পরিমাণ মতো ফেইস সিরাম লাগিয়ে আলতো ভাবে পুরো স্কিনে ব্যবহার করুন। কিছু কিছু সিরাম ড্রপারের মাধ্যমে ব্যবহার করা হয় ।
এক্ষেত্রে ড্রপার দিয়ে কয়েক ফোটা সিরাম ফেইসে লাগিয়ে পুরো মুখে আলতো ভাবে ব্যবহার করবেন। সিরাম ত্বকে সম্পূর্ণরূপে শোষণ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। ত্বকে সিরাম সম্পূর্ণভাবে শোষিত হলে পরবর্তী ধাপ ময়শ্চারাইজার এবং সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন।
আমাদের Hretus World এ পেয়ে যাবেন সব ধরনের অথেনটিক টোনার এবং সিরাম। অথেন্টিক প্রোডাক্ট মানেই Hretus World ।