স্কিন টাইপ বুঝে ফাউন্ডেশন ব্যবহার করুন। ফাউন্ডেশনের ব্যবহারের আগে যা যা জানা প্রয়োজন!
ফাউন্ডেশন কি ?
ফাউন্ডেশন হলো এক প্রকার পাউডার ,ক্রিম ও তরল মেকআপ। যা ত্বকের বিভিন্ন ত্রুটি হাইড করে। ত্বকের স্কিন টোন শেড বাড়াতে, ব্রণ ও অবাঞ্ছিত দাগ কভারেজ করার জন্য ফাউন্ডেশন ব্যবহার করা হয়। মেকআপ করার অন্যতম সামগ্রী হল ফাউন্ডেশন। মসৃণ, দাগ হীন ও দীর্ঘস্থায়ী মেকাপের জন্য ফাউন্ডেশন হলো ম্যাজিক্যাল ড্রপ।।
স্কিন টাইপ বুঝে ফাউন্ডেশন ব্যবহার
ফাউন্ডেশন ব্যবহারের আগে অবশ্যই আমাদের স্কিন টাইপ বুঝে ফাউন্ডেশন ব্যবহার করতে হবে। অনেকেই মেকআপ করার পর ত্বক কালো দেখাচ্ছে অর্থাৎ স্কিন কালার ম্যাচ হচ্ছে না , ভালোভাবে কভারেজ হচ্ছে না ইত্যাদি এরকম সমস্যায় ভুগি। এসব সমস্যা উল্টাপাল্টা ভাবে অর্থাৎ স্কিন টাইপ না বুঝে ফাউন্ডেশন ব্যবহারের ফলে এরকম সমস্যা হয়ে থাকে।
তৈলাক্ত ত্বকের ক্ষেত্রে:
তৈলাক্ত ত্বকের ক্ষেত্রে ম্যাট ফিনিশ ফাউন্ডেশন ভালো। এর ফলে ত্বকের তৈলাক্ত ভাব ফাউন্ডেশন এর কারণে নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং ত্বক অক্সিডাইস বা ধূসর রং হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়।
তৈলাক্ত ত্বকের ক্ষেত্রে লিকুইড ফর্মুলার অয়েল ফ্রি ম্যাট ফিনিশ ফাউন্ডেশন ব্যবহার করলে ত্বকে খুব তাড়াতাড়ি ফাউন্ডেশন মিশে যায়। এছাড়াও আপনার ত্বকে যদি ব্রণ থাকে তাহলে একনি ফাইটিং ফাউন্ডেশন,সেলিসাইলিক এসিড যুক্ত ফাউন্ডেশন বেছে নিতে পারেন।
শুষ্ক ত্বকের ক্ষেত্রে:
শুষ্ক ত্বকের ক্ষেত্রে ময়শ্চারাইজার যুক্ত ফাউন্ডেশন ব্যবহার করাই ভালো। এক্ষেত্রে মশ্চারাইজার যুক্ত ফাউন্ডেশন ত্বকের আদ্রতা ধরে রাখে।
ময়েশ্চারাইজার যুক্ত ফাউন্ডেশন ব্যবহারের ফলে ত্বক শুষ্ক দেখাবে না এবং মেকআপ দেখতে সুন্দর লাগবে। এক্ষেত্রে ক্রিমি ফর্মুলার ফাউন্ডেশন এবং ম্যাট ফিনিশ ফর ড্রাই স্কিন ফর্মের ফাউন্ডেশন ব্যবহার করলে ত্বকে এটি ভালোভাবে মিশে যাবে। ক্রিমি ফাউন্ডেশন ব্যবহার করলে ত্বকে ফুল কভারেজ হবে। এছাড়াও সিরাম যুক্ত ফাউন্ডেশন ব্যবহারে করতে পারেন।
নরমাল স্কিনের ক্ষেত্রে:
আপনার স্কিন টাইপ যদি নরমাল হয় তাহলে আপনি যেকোনো ধরনের ফাউন্ডেশন ব্যবহার করতে পারেন তবে অবশ্যই ফাউন্ডেশন এর মধ্যে ময়শ্চারাইজারের পরিমাণটা যেন সঠিক থাকে।
এক্ষেত্রে আপনি সিলিকন বেসড ফর্মের ফাউন্ডেশন ব্যবহার করতে পারেন। কারণ সিলিকন বেসড ফর্মুলার ফাউন্ডেশন লিকুইড ও ক্রিম ফাউন্ডেশনের মাঝামাঝি পর্যায়ের। এটা ত্বকে ম্যাটিফাইং লুক দিবে।
আমরা যারা সানস্ক্রিম ব্যবহার করতে পছন্দ করি না মেকআপ লুকে। সেক্ষেত্রে আমরা spf 15 যুক্ত ফাউন্ডেশন ব্যবহার করতে পারি।
ফাউন্ডেশন বাছাইয়ের ক্ষেত্রে প্রথমে আমরা কি করব? কিভাবে ত্বক অনুযায়ী সঠিক সেড নির্ধারণ করব?
প্রথমেই আমাদের বুঝতে হবে ত্বকের আন্ডারটোন।
ত্বকের আন্ডারটন বোঝা:
মেকআপ করার ক্ষেত্রে প্রথমেই ত্বকের আন্ডারটোন সম্পর্কে জানতে হবে। কারণ ত্বকের আন্ডারটোন না বুঝলে ফাউন্ডেশন নয়, পুরো মেকআপই ঠিকঠাক মত হবেনা।
সাধারণত ফাউন্ডেশন এর সেড তিন প্রকারের হয়ে থাকে। যথা; ওয়ার্ম , কুল এবং নিউট্রাল। এক্ষেত্রে আপনার ত্বকের আন্ডারটোন হলুদাভ হলে ওয়ার্ম শেডের ফাউন্ডেশন ব্যবহার করতে হবে। ত্বকের আন্ডারটোন লালচে বা গোলাপি হলে কুল শেডের ফাউন্ডেশন নির্বাচন করতে হবে।
এখন অবশ্যই ভাবছেন ত্বকের আন্ডারট্রেন বুঝবেন কিভাবে?
তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক স্কিন আন্ডারটোন বোঝার কিছু সহজ উপায়।
১. প্রাকৃতিকভাবে সূর্যের আলোতে প্রথমেই আপনার হাতের শিরা দেখার চেষ্টা করুন। যদি আপনার শিরার রং নীল বা বেগুনি হয়ে থাকে তাহলে আপনি কুল শেডের।
২. যদি আপনার হাতের শিরার রং সবুজ বা অলিভ সবুজ রঙের হয়ে থাকে তাহলে আপনি ওয়ার্ম শেডের।
৩. যদি আপনার হাতের শিরার রং নীল ,সবুজ অথবা উপরে বর্ণিত কোনোটার রং না হয়ে থাকে তাহলে আপনি নিউট্রাল শেডের।
কভারেজ অনুযায়ী ফাউন্ডেশন নির্বাচন:
সাজগোজ এর অন্যতম অংশ হচ্ছে ফাউন্ডেশন। সঠিক ফাউন্ডেশন ব্যবহার করার ফলে আপনি পাবেন পারফেক্ট লুক। তেমনই ভুল শেডের ফাউন্ডেশন ব্যবহারে আপনাকে আরো বিশ্রী লাগবে।
আপনার ত্বকের ধরন অনুযায়ী আপনি ফাউন্ডেশন নির্বাচন করবেন। এছাড়াও ফাউন্ডেশন লাইট, ভারী ও হালকা কভারেজের পাওয়া যায়। আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবহার করবেন।
আপনি যদি হালকা বেস পছন্দ করেন তাহলে হালকা কভারেজের ফাউন্ডেশন ব্যবহার করবেন। যদি ভারি বেস পছন্দ করেন তাহলে ফুল কভারেজের ফাউন্ডেশন নির্বাচন করবেন।
ফাউন্ডেশন এর শেড নির্বাচন:
শেড হলো আপনার স্কিনের আসল রং। এবং আন্ডার টোন হলো আপনার স্কিনের নিচে লুকিয়ে থাকা হালকা আভা। অনেকেই ফাউন্ডেশনের শেড এবং আন্ডার টোন নিয়ে কনফিউজ হয়ে যান।
মেকাপের ক্ষেত্রে এই দুটোই জানা খুবই জরুরী। নিজের স্কিনের শেড অনুযায়ী শেড নিয়ে আপনার স্কিনের একপাশে লাগিয়ে দেখে নিন আপনার স্কিনের রং এর সাথে মিলেছে কিনা। যদি স্কিনের রং এর সাথে মিশে যায় তাহলে এটি আপনার স্কিনের জন্য পারফেক্ট শেড।
ফাউন্ডেশন কিভাবে ব্যবহার করবেন?
প্রতিটি মেকআপ প্রোডাক্ট ব্যবহারের একটি নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। সঠিকভাবে ব্যবহার করতে না জানলে আপনার মেকআপ লুক পারফেক্ট হবে না। আমরা উপরে জেনেছি ফাউন্ডেশন কি! ত্বকের ধরন অনুযায়ী কিভাবে ফাউন্ডেশন সিলেক্ট করব এবং ফাউন্ডেশন ব্যবহারের পূর্বে আমাদের যা জানতে হবে সে সম্পর্কে।
এখন আমরা আলোচনা করব ,ফাউন্ডেশন ত্বকে কিভাবে ব্যবহার করব।
১. প্রথমেই ত্বক ক্লিনজার দিয়ে পরিষ্কার করে নেব।
২. ত্বকে টোনার ব্যবহার করব।
৩. হালকা ওয়েট এর সিরাম লাগিয়ে নেব।
৪. প্রাইমার লাগিয়ে নিব। প্রাইমার ব্যবহারের ৫-১০ মিনিট পর ফাউন্ডেশন ব্যবহার করব।
৫. ফাউন্ডেশন লাগানোর সময় প্রথমেই ত্বকের সেন্টার থেকে লাগানো শুরু করতে হবে। ত্বকের কেন্দ্র থেকে ধীরে ধীরে হেয়ার লাইন এবং জ লাইনের দিকে ব্লেন্ড করা শুরু করবেন।
৬. এভাবে অল ফেসে ফাউন্ডেশন লাগিয়ে নিন।
৭. ব্রাশ কিংবা স্পঞ্জ ব্যবহার করে ফাউন্ডেশন ব্লেন্ড করে নেব।
৮.মেকাপের সামঞ্জস্য বজায় রাখতে মুখের পাশাপাশি গলায় ও ফাউন্ডেশন ব্যবহার করবেন।
৯. ব্রাশ দিয়ে ফাউন্ডেশন ব্লেন্ড করার সময় ডাউন ওয়ার্ড স্ট্রোক বা নিচের দিকে স্ট্রোক করবেন। এতে করে ত্বকে থাকা পোরস কভারেজ হবে এবং ফাউন্ডেশন ভালোভাবে ব্লেন্ড হবে।
১০. ফাউন্ডেশন ব্লেন্ড করার পর ত্বকের যেসব স্থানে দাগ বোঝা যাচ্ছে সেসব স্থানে কনসিলার দিয়ে কভারেজ করে নেব।
১১. ফাউন্ডেশন ব্যবহারের পর তা সেট করার জন্য ব্রাশের সাহায্যে লুজ পাউডার ব্যবহার করবেন ।ঘষে ঘষে ব্যবহার করা যাবে না এতে করে ফাউন্ডেশন এর স্তরটি সরে যাবে এবং মেকআপ ভালো হবে না।
এই টিপস গুলো ফলো করে ফাউন্ডেশন ব্যবহার করলে পারফেক্ট মেকআপ লুক পাবেন।