Ingredient

ত্বকের যত্নে রেটিনল ব্যবহার ও এর কাজ।

Retinol uses and functions in skin care.

বর্তমানে ত্বকের তারুণ্যতা বজায় রাখতে সবাই অ্যান্টি এজিং ফর্মুলেশনের স্কিন কেয়ার এর সাহায্য নেন। এই অ্যান্টি এজিং ফর্মুলেশনের স্কিন কেয়ার প্রোডাক্টের মধ্যে রেটিনল অ্যাসিড অত্যন্ত কার্যকর ইনগ্ৰেডিয়েন্ট । রেটিনল অ্যাসিড- যেহেতু নামের পাশে আ্যসিড আছে তাই অনেকে এটি ব্যবহার করতে সংকোচ বোধ করেন।

কিন্তু সব আ্যসিড খারাপ না, তবে হ্যাঁ কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া অবশ্যই আছে। তাই রেটিনল সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানতে এই ব্লগটি পড়ুন। রেটিনল ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই রেটিনল কি? ত্বকে রেটিনলের কাজ; কোন বয়সে রেটিনল ব্যবহার করতে হয়; রেটিনল ব্যবহারের নিয়ম; ব্যবহারের সতর্কতা সম্পর্কে জানতে হবে।

রেটিনল কি?

রেটিনল হলো এক ধরনের রেটিনয়েড,যা ‘ভিটামিন এ ‘এর একটি ফর্ম। অনেকে এটাকে ভিটামিন A1 হিসেবে উল্লেখ করেন।রেটিনলকে ন্যাচারাল স্কিন এক্সফলিয়েটর বলা হয়ে থাকে কারণ, রেটিনল ত্বকের ডেড সেল রিমুভ করে ত্বককে মসৃণ করে এবং পরিষ্কার রাখে এছাড়াও অ্যান্টি এজিং ফর্মুলেশনে কাজ করে, ত্বকের বলিরেখা দূর করে এবং ব্রণ নিরাময় করে।

বর্তমান বাজারে রেটিনল স্কিন কেয়ারের জন্য বিভিন্ন ফর্মে পাওয়া যায় যেমন -সিরাম ,ক্রিম ইত্যাদি।

ত্বকে রেটিনলের কাজ :

dead skin remove deference

ত্বকে রেটিনল ব্যবহার হচ্ছে এক প্রকারের স্কিন ট্রিটমেন্ট প্রক্রিয়া। ত্বকে রেটিনলের ব্যবহার দীর্ঘসময় ধরে করতে হয়, তবেই ভাল ফলাফল পাওয়া যাবে।

১. ডেড সেল রিমুভ করে –

নিয়মিত রেটিনল ব্যবহারে ত্বকের ডেড সেলস রিমুভ হয়, এবং ত্বকের লোমকূপে ক্লগ হয়ে যাওয়া পোরস সহজেই পরিষ্কার হয়ে যায়।

২. ব্রণ রিমুভ করে-

রেটিনল আমাদের ত্বকের গভীরে প্রবেশ করে লোমকূপ পরিষ্কার রাখে ফলে লোমকূপে ময়লা জমতে পারে না । এতে আমাদের ত্বক পরিষ্কার থাকে এবং ত্বকে ব্রনের উপদ্রব কমে যায় ।

৩. ডেড সেল পরিবর্তিত করে হেলদি সেলে রূপান্তর করে-

রেটিনল আমাদের ত্বকে ডেড সেলস গুলোকে পরিবর্তিত করে হেলদি সেলে রূপান্তরিত করতে সাহায্য করে। স্কিনে নতুন সেল প্রোমোট হওয়ায় ত্বক আরো গ্লোয়িং হয়।

৪. কোলাজেন প্রোডাকশন বাড়ায়-

কোলাজেন আমাদের ত্বকে বিউটি ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করে। নির্দিষ্ট একটি বয়সের পরে ত্বকে প্রাকৃতিকভাবে কোলাজেন প্রোডাকশন কমে যায় ফলে ত্বক হারাতে থাকে উজ্জ্বলতা, নমনীয়তা ও তারুণ্যতা। নিয়মিত রেটিনল ব্যবহারে ত্বকে কোলাজেন প্রোডাকশন বাড়ে। ফলে ত্বক উজ্জ্বল হয় এবং ত্বকে তারুণ্যতা ফিরে আসে।

৫. আন্টি এজিং ফর্মুলেশন-

স্বাভাবিকভাবে বয়স ত্রিশের পর থেকে ত্বকে বয়সের ছাপ পড়তে শুরু করে কারণ প্রাকৃতিক ভাবেই এই বয়সে ত্বকে কোলাজেন প্রোডাকশন কমে যায়। যেহেতু রেটিনল ত্বকে কোলাজেন প্রোডাকশন বাড়ায়, ফলে ত্বক টানটান হয় এবং ত্বকে বয়সের ছাপ পড়ে না।

৬. স্পট এবং পিগমেন্টেশন রিমুভ করে-

রেটিনল স্কিনের মেলানিন প্রোডাকশন কমিয়ে স্কিনের অবাঞ্চিত দাগ বা পিগমেন্টেশন রিমুভ করতে সাহায্য করে। যাদের ত্বকে মেছতার সমস্যা আছে, তাদের ক্ষেত্রে রেটিনল সমৃদ্ধ প্রডাক্ট ব্যবহারে ত্বকে দারুন কার্যকারিতা পাওয়া যাবে।

৭. স্কিন মশ্চারাইজড ও ব্রাইট করে-

রেটিনল আমাদের স্কিনে মশ্চারাইজিং ক্রিম এর মত ত্বককে ময়শ্চারাইজড করে ফলে নিউলি রেটিনল ব্যবহারের শুরুতে ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়ার সমস্যা তৈরি হয় এবং ধীরে ধীরে এই সমস্যা পরিবর্তিত হয়ে শুষ্ক ত্বককে নরমাল স্কিনে রূপান্তর করে।

রেটিনল ত্বকের ডেড সেলস রিমুভ করে , পিগমেন্টেশন কমায় ,কোলাজেন প্রোডাকশন বাড়ায় এতে ত্বক টানটান হয়, বয়সের ছাপ পড়ে না ফলে ত্বক ব্রাইট হয়।

কোন বয়সে রেটিনল ব্যবহার করতে হয় ?

মুখে ব্রণের সমস্যা কিংবা পিগমেন্টেসন কমাতে বয়স বিশের পর থেকে মধ্য ত্রিশের মধ্যে রেটিনল ব্যবহার করা ত্বকের জন্য সেভ। অ্যান্টি এজিং ট্রিটমেন্টের জন্য যদি ত্বকে রেটিনল ব্যবহার করতে চান তাহলে বয়স ত্রিশের পর থেকে এটি ত্বকে ব্যবহার করবেন।

কারণ বয়স ত্রিশের পর প্রাকৃতিকভাবেই ত্বকে বয়সের ছাপ পড়ে। এই সময়ে ত্বকে বয়সের প্রভাব কমানোর জন্য রেটিনল সমৃদ্ধ সিরাম, ক্রিম ব্যবহার করা শুরু করবেন।

রেটিনল ব্যবহারের নিয়ম-

ত্বকের ধরন অনুসারে রেটিনলের প্রভাব ভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। অনেকের ত্বক অতিরিক্ত সেনসিটিভ প্রকারের আবার অনেকের শুষ্ক ও আ্যলার্জি গত সমস্যা থাকতে পারে। তাই ত্বকে নিউলি রেটিনল ব্যবহার শুরুর ক্ষেত্রে ধীরে এগোতে হবে। এক্ষেত্রে সপ্তাহে দুইবার , আস্তে আস্তে সপ্তাহে তিনবার বা চারবারে বাড়াতে হবে।

ত্বকে বিরূপ কোন প্রতিক্রিয়া না হলে অর্থাৎ ত্বকে যখন রেটিনল সয়ে যাবে সেক্ষেত্রে সপ্তাহে ছয় দিন ব্যবহার করা যাবে।রেটিনল খুবই লো কনসেনট্রেশনের পণ্য। ত্বকের চাহিদার উপর নির্ভর করে রেটিনলের কনসেনট্রেশনের মান কমবেশি পরিবর্তনের প্রয়োজন হয়।

dark spot remove deference

রেটিনল মূলত ত্বকে দুটি পারপাসে ব্যবহার করা হয় , যেমন- এজিং সাইন্স প্রিভেন্ট ও ব্রণ নিরাময়ের ট্রিটমেন্ট হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এক্ষেত্রে এজিং সাইন্স প্রিভেন্ট করতে বয়সসীমা ৩০ এরপর ব্যবহার করা হয় এবং ব্রণ নিরাময়ের ট্রিটমেন্টের ক্ষেত্রে ডার্মাটলজিস্টের পরামর্শ অনুযায়ী যে কোন বয়সে ব্যবহার করা যায় তবে অবশ্যই ডার্মাটোলজিস্ট এর পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবহার করতে হবে।

রেটিনলের বিভিন্ন ফরম্যাট রয়েছে। এজিং সাইন্স প্রিভেন্ট করতে ০.০১% পার্সেন্টেজ দিয়ে রেটিনল ব্যবহার শুরু করতে পারেন কারণ এই পারসেন্টেজ ত্বকের জন্য সেইভ। এরপর ধীরে ধীরে ত্বকে সয়ে গেলে এর কনসেন্ট্রেশন বাড়াতে হবে, এক্ষেত্রে ০.০৩ -১% ব্যবহার করা যায়।

রেটিনল ব্যবহারে ভালো ফলাফল পেতে, রাতে ব্যবহার করুন। প্রথমেই ক্লেনজার দিয়ে মুখ পরিষ্কার করে ভালোভাবে তোয়ালে দিয়ে মুখ শুকিয়ে নিবেন, এবার এক অথবা দুই ফোঁটা রেটিনল সিরাম হাতে নিয়ে ঠোঁট এবং চোখের এরিয়া বাদ দিয়ে পুরো মুখে ভালোভাবে লাগিয়ে নিন, এর কিছুক্ষণ পর আপনার ব্যবহৃত মশ্চারাইজিং ক্রিম মুখে লাগিয়ে নিবেন।

রেটিনল ব্যবহারে সর্তকতা-

১. দিনের বেলায় রেটিনল প্রোডাক্ট ব্যবহার করা যাবে না, এতে ত্বকের ক্ষতি হতে পারে, এছাড়াও রেটিনল ব্যবহারে ত্বক সান সেনসিটিভ হয়ে যায়, তাই দিনের বেলায় বাইরে বের হলে অথবা ঘরে থাকলে ও ত্বকে সানস্ক্রিম লাগাবেন।
২. রেটিনল ব্যবহারে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়, এক্ষেত্রে ত্বককে মশ্চারাইজড রাখতে হবে।
৩. গর্ভাবস্থায়, বাচ্চাকে দুধ খাওয়ান এমন অবস্থায় এবং বাচ্চা নেওয়ার পরিকল্পনা করছেন ইত্যাদি অবস্থায় রেটিনল ব্যবহার করা যাবে না। কারণ এর প্রভাবে বাচ্চার গঠনগত বিভিন্ন ত্রুটি দেখা দেয়।
৪. অন্যান্য এক্সফোলিয়েটিং এজেন্ট যেমন- AHA, BHA এর সাথে মিক্স করে ব্যবহার করবেন না।
৫. ত্বকে খুবই অল্প পরিমাণ রেটিনল এপ্লাই করবেন।
৬. ভেজা ত্বকে রেটিনল ব্যবহার করবেন না এতে ত্বকে ইরিটেশনের সমস্যা হতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *