হেয়ার কালার করার আগে চুলের সঠিক যত্ন নেওয়ার উপায়।
চুল কালার করা বর্তমান ফ্যাশনের একটি অংশ। চুলকে নতুন রঙে রাঙাতে বা নিজস্ব ফ্যাশনে কিছুটা চেঞ্জ আনতেই অনেকে কালার করছেন চুল। হেয়ার কালার করলে চুল এবং ফেইসে একটু ডিফারেন্ট টাইপের নতুনত্ব ফুটে উঠে। হেয়ার কালার করা কিন্তু খুব একটা কঠিন বিষয় না, অনেকে ঘরে বসেই হেয়ার কালার করে ফেলে আবার অনেকে পার্লারে গিয়ে হেয়ার কালার করে। হেয়ার কালার করার আগে চুলকে সেট আপ করতে কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়। নিয়মগুলো সঠিক ভাবে মেনে চললেই চুল সুস্থ ও সুন্দর থাকবে। কিন্তু নিয়মগুলো যদি সঠিক ভাবে মেইনটেইন না করেন, তাহলে চুল হয়ে উঠবে রুক্ষ ও শুষ্ক।
আপনি যদি হেয়ার কালার করার কথা ভেবে থাকেন তাহলে আজকের ফিচারটি আপনার জন্য।আজকের ফিচারে আমরা হেয়ার কালার করার আগে করনীয় কিছু স্টেপ সম্পর্কে আলোচনা করব।
হেয়ার কালার করার আগে ওয়েল ম্যাসাজ করা যাবে না
হেয়ার কালার করার আগে অনেকেই চুল ঝরঝরে রাখার জন্য চুলে অয়েল ম্যাসাজ করে তারপর শ্যাম্পু করে নেয় ; যা একদমই ঠিক না । কারণ হেয়ার কালার করার পূর্বে চুলে অয়েল ম্যাসাজ করলে চুলের ওপর একটি প্রটেকশন লেয়ার তৈরি হয় যা হেয়ার কালার সঠিকভাবে বসতে বাধা দেয় এবং এতে হেয়ার কালার চুলের সব জায়গায় সঠিকভাবে স্প্রেড হয় না ও কালার ও ফেইড হয়ে যায়।তবে, চুল যদি অনেক বেশী শুষ্ক ,রুক্ষ ও ভঙ্গুর থাকে তাহলে কালার করার ২-৩ দিন আগে অয়েল মাসাজ করতে পারে। তবে অবশ্যই মাথায় রাখবেন কালার করার সময় যেন চুল অয়েলি না থাকে।
হেয়ার কালার করার আগে শ্যাম্পু করার সঠিক নিয়ম
হেয়ার কালার করার আগে শ্যাম্পু করা উচিত নয়। কারণ আমাদের মাথার স্কেল্পে ন্যাচারাল অয়েল থাকে যা স্কেল্প ও হেয়ার স্ট্যান্ড প্রটেক্ট করে। চুল কালার করার আগে শ্যাম্পু করলে এই ন্যাচারাল অয়েল ধুয়ে যায় এবং এতে চুল ড্রাই হয়ে হেয়ার ব্রেকেজ হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।তাই যখন আপনি হেয়ার কালার করবেন বলে মনস্থির করবেন তার, ১২ থেকে ২৪ ঘন্টা আগে শ্যাম্পু করে নিবেন। এতে এই অল্প সময়ের মধ্যে স্ক্যাল্পে কিছু ন্যাচারাল অয়েল বিল্ড আপ হবে যা হেয়ার স্ট্র্যান্ডকে রাসায়নিক ক্ষতির প্রভাব থেকে সুরক্ষিত রাখবে।
এতে এক্সেস হেয়ার ফল, স্ক্যাল্প ড্যামেজ ও ইরিটেশনের প্রবলেম প্রিভেন্ট করবে। চুল পরিষ্কার করতে অবশ্যই ক্ল্যারিফাইয়িং শ্যাম্পু ব্যবহার করবেন। এই শ্যাম্পু স্ক্যাল্পে থাকা অয়েল, সিরাম ভালোভাবে ক্লিন করে।
হেয়ার কালার করার আগে চুল পরিষ্কার করার জন্য যে শ্যাম্পু ব্যবহার করছেন সেই একই প্রোডাক্ট হেয়ার কালার করার পর ব্যবহার করা নাও যেতে পারে।কারন তখন কালার প্রোটেক্ট করবে এমন শ্যাম্পু ও অন্যান্য প্রোডাক্ট ইউজ করতে হবে।
চুলের অবস্থা বুঝে ডিপ কন্ডিশনিং করা
চুল যদি রুক্ষ ও শুষ্ক হয় তাহলে চুলে ডিপ কন্ডিশনিং করা খুবই জরুরী।ড্যামেজ হেয়ারে কালার ভালোভাবে বসে না ,তাই চুল স্বাস্থ্যজ্জ্বল ও শাইনি রাখার জন্য হেয়ার কালার করার কমপক্ষে এক সপ্তাহ আগে থেকে ডিপ কন্ডিশনিং হেয়ার মাস্ক ব্যবহার করুন। এতে চুল ড্যামেজ হওয়ার হাত থেকে সুরক্ষিত থাকবে ও হেয়ার কালারও সুন্দরভাবে স্প্রেড হবে।হেয়ার কালার করার ঠিক আগ মুহূর্তে কিন্তু ডিপ কন্ডিশনিং হেয়ার মাস্ক ব্যবহার করা যাবে না । হেয়ার কালার করার আগে কমপক্ষে ১২-২৪ ঘন্টা আগে ডিপ কন্ডিশনিং করা ভালো। ডিপ কন্ডিশনিং চুলের শুষ্কতা দূর করে চুলকে মসৃণ করে, হেয়ার ড্যামেজ ও ব্রেকেজ রিপেয়ার করে ও চুলের স্পিল্ট এন্ড মসৃণ রাখে ।এতে হেয়ার কালার ও চুলে ভালোভাবে বসে।
ডাই রিমুভারস
অনেকেই আছে যারা হেয়ার কালার করতে পছন্দ করে। চুলকে নানা রঙের সাজাতে বিভিন্ন শেইডের হেয়ার কালার করে থাকে। এক্ষেত্রে যাদের চুলে আগে থেকেই কালার করা থাকে এবং সেই কালার চেঞ্জ করে যদি নতুন শেইডের কালার করাতে চান, তাহলে ডাই রিমুভারস ব্যবহার করতে পারেন। তবে হুট করে মনে চাইলেই, চুলে ডাই রিমুভারস ব্যবহার করবেন না। ব্যবহারের আগে অবশ্যই একজন হেয়ার এক্সপার্ট বা স্যালুনে এ সম্পর্কে বিস্তারিত ভালোভাবে জেনে ব্যবহার করবেন।
ঘরোয়া উপায়ে কাঁঠালের বীজের হেয়ার মাস্ক
কাঁঠাল আমাদের জাতীয় ফল। সুমিষ্ট এই ফলের সাথে তার বীজের ও কিন্তু অনেক গুণাবলী রয়েছে। স্বাস্থ্যজ্জল , মজবুত চুলের জন্য কাঁঠালের বীজের হেয়ার মাস্ক খুবই উপকারী। এক্ষেত্রে নতুন কাঁঠালের বীজ হলে এগুলো পানিতে এক ঘন্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে। কারণ এগুলো কিছুটা অ্যাসিডিক।ভিজিয়ে রাখার ফলে এর ভিতরে থাকা আ্যসিডিক ভাবটা চলে যায়। এরপর বীজগুলো অল্প পরিমাণ দুধে ভিজিয়ে কিছুটা নরম করে নিন। এবার কাঁঠালের বীজ ও দুধ একত্রে ব্লেন্ডারে মিক্স করে পেস্ট তৈরি করে নিন। এবার এই মিশ্রণটি মাথার স্কেল্প সহ চুলে ৩০ মিনিট রাখুন। এরপর কুসুম গরম পানি ও শ্যাম্পু দিয়ে চুল পরিষ্কার করে নিন। এই হেয়ার মাস্কটি সপ্তাহে দুইবার ব্যবহার করবেন। এতে চুল পড়া কমবে এবং চুল মজবুত ও স্বাস্থ্যজ্জ্বল হবে।
হেয়ার কালার করার আগে যা করা যাবে না:
১. চুল শ্যাম্পু করার পর কন্ডিশনার এপ্লাই করা যাবে না। কারণ কন্ডিশনার চুলের ওপর একটি আলাদা লেয়ার তৈরি করে এবং চুলকে মসৃণ করে যা হেয়ার কালার বসতে সমস্যা তৈরি করে।
২. হেয়ার কালার করার আগে চুলে ওয়েল ম্যাসাজ করা যাবে না।
৩. ড্রাই শ্যাম্পু ,হেয়ার জেল,সিরাম ও হেয়ার স্প্রে জাতীয় সকল প্রকার হেয়ার স্টাইলিং প্রোডাক্ট ব্যবহার করবেন না। কারন এই প্রোডাক্টগুলো চুলের কিউটিকল এর উপর একটি এক্সট্রা লেয়ার তৈরি করে যা হেয়ার কালার বসতে বাধা দেয় ।
৪. হেয়ার কালারের আগে স্ট্রেইটার ,ব্লো ড্রায়ার অর্থাৎ সকল প্রকার হিট স্টাইলিং প্রোডাক্ট ব্যবহার করবেন না। হিট স্টাইলিং প্রোডাক্ট ব্যবহারে চুলের আদ্রতা কমে যায় এবং চুল রুক্ষ ও শুষ্ক হয়ে যায় ফলে হেয়ার কালার করার পরে চুলের আরো ক্ষতি হতে পারে।
৫. ভেজা চুলে হেয়ার কালার করবেন না। কারণ ভেজা চুলে কালার করলে ,কালার সঠিকভাবে হেয়ারে বসে না এবং কালারের শেইড ও ভালোভাবে ফুটে ওঠে না।
৬. হেয়ার কালার করার আগে অবশ্যই আপনি যেই ব্র্যান্ডের হেয়ার কালার ব্যবহার করছেন সেটা আপনার স্কিনে কোন রিয়েকশন দিবে কিনা? সে ব্যাপারে নিশ্চিন্ত হতে অবশ্যই প্যাচ টেস্ট করে নিবেন।
হেয়ার কালার করার আগে কিভাবে চুলের যত্ন নিতে হবে, এবং কি কি বিষয় এড়িয়ে চলতে হবে সে সম্পর্কে অনেকেই জানেন না। এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়ে দিলাম আজকের ফিচারে। আশা করি হেয়ার কালার করার আগে কীভাবে চুলের যত্ন নিবেন তা নিয়ে আর কোন কনফিউশন থাকবে না।