ত্বকের যত্ন

ওপেন পোরস কেন হয়? ওপেন পোরস দূর করার উপায়।

ওপেন পোরস

সুন্দর,দাগহীন মসৃণ ত্বক সবারই কাম্য। তবে ত্বককে কাছ থেকে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, ত্বকের উপরিভাগে ছোট ছোট ছিদ্র আছে । ত্বকের উপরে থাকা এই ছোট ছোট ছিদ্রকেই ওপেন পোরস বলা হয়। ত্বকে পোরস থাকা কোন অস্বাভাবিক বা সমস্যার বিষয় না।

কারণ এটি প্রত্যেকের ত্বকেই থাকে, তবে ত্বকের উপরে থাকা পোরসের সাইজ যদি অনেক বড় হয় তাহলে, এটা চিন্তার বিষয়।বড় আকারের পোরসকে বলা হয় ওপেন পোরস। এগুলোতে সব ধরনের দূষণ ও ময়লা জমে ক্লগ হয়ে যায় এবং ত্বকের‌ মধ্যে ব্রণ ও অন্যান্য সমস্যার সৃষ্টি করে। তাই ওপেন পোরস দূর করার সমাধান জানার আগে , জানতে হবে ত্বকের‌ ওপেন পোরস কি ও এটি ত্বকের উপর কেন হয়?

ওপেন পোরস কি ও কেন হয়?

পোরস ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখে,তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে, তেলের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে ও শরীরের অতিরিক্ত দূষণ ঘামের মাধ্যমে বের করে দেওয়ার কাজ করে। স্বাভাবিক ভাবে ছোট ছোট পোরস সবার ত্বকেই থাকে। তখন স্কিনটা দেখতে অনেকটা কমলালেবুর খোসার মতে লাগে। তবে ত্বকের এই ছিদ্র গুলো যখন অনেকটা উন্মুক্ত হয়ে বড় আকারের হয় তখন এটাকে বলা হয় ওপেন পোরস যা দেখতে অনেকটা অস্বস্তি লাগে।

বয়স বাড়ার সাথে সাথে স্কিনের ইলাস্টিন ও কোলাজেন যখন লুজ হতে শুরু করে, তখনই ত্বকের পোরস বড় হয়। এছাড়াও দীর্ঘ সময় ধরে সূর্যের সংস্পর্শে থাকা, রেগুলার ত্বকের যত্ন না নেওয়ার কারণেও এনলার্জ পোরস হয়। বিশেষ করে ওয়েলি স্কিনে ওপেন পোরস বেশি ভিজিবল হয়।

ওপেন পোরস দূর করার উপায়

Why open pores occur and how to get rid of them

পোরস ,ত্বকে প্রাকৃতিক ভাবেই থাকে। যা ত্বক থেকে সম্পূর্ণভাবে দূর করা যায় না। তবে নিয়মিত ত্বকের যত্ন নিলে ওপেন পোরসের আকার ও দৃশ্যমানতা কমানো যায়। চলুন জেনে নেই ওপেন পোরসের আকার ও দৃশ্যমানতা কমানোর উপায় সম্পর্কে।

নিয়মিত ত্বক পরিষ্কার রাখুন:

প্রতিদিন সকালে ও রাতে ফোমিং ফর্মুলার ফেসওয়াশ বা স্যালিসাইলিক অ্যাসিডযুক্ত ক্লিনজার দিয়ে ত্বক পরিষ্কার করূন। এটি ত্বকের অতিরিক্ত তেল, ময়লা ও মেকআপ দূর করে ,পোরস ক্লগ হওয়া রোধ করে।

এক্সফোলিয়েশন :

ত্বককে মসৃণ রাখতে সপ্তাহে ১-২ বার কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েশন হিসেবে AHA/BHA ৫%- ৭%, গ্লাইকোলিক অ্যাসিড ৫%- ৭% বা স্যালিসাইলিক এসিড ২% মাত্রায় ব্যবহার করুন। এটি ত্বকের মৃত ত্বক কোষ রিমুভ করে ও পোরসের আকার কমাতে সাহায্য করে।

টোনার ব্যবহার:

রেগুলার স্কিন কেয়ারে ত্বকের ধরন বুঝে টোনার ব্যবহার ,শুরু করতে পারেন। কারণ টোনার পোরসের আকারকে ছোট করতে সাহায্য করে। বিশেষ করে অ্যাস্ট্রিনজেন্ট টোনার যেমন-উইচ হেজেল, রোজ ওয়াটার বা নায়াসিনামাইডযুক্ত টোনার। এটি ত্বকের পোরস ছোট করে, স্কিনকে টাইট করে ও তেল নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।

রেটিনয়েড বা রেটিনল:

যাদের বয়স ত্রিশ এর উপর তারা ডার্মাটোলজিস্টের পরামর্শ অনুযায়ী রেটিনয়েড ক্রিম (ভিটামিন A ডেরিভেটিভ) ব্যবহার করুন। কারণ এটি ত্বকের কোলাজেন উৎপাদন বাড়িয়ে ত্বককে তারুণ্যদীপ্ত রাখে ও পোরসের আকার কমাতে সাহায্য করে।

তেল মুক্ত প্রোডাক্ট ব্যবহার করুন:

সাধারণত স্কিন অনেক বেশি ওয়েলি থাকলে পোরসের আকার বড় হয়। তাই ত্বকের যত্নে ওয়েল ফ্রি ও নন গ্রেসি মশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।

সানস্ক্রিন ব্যবহার:

sunscreen cream

দীর্ঘ সময় সূর্যের সংস্পর্শে থাকলে সূর্যের ক্ষতিকর UV রশ্মি ত্বকের ইলাস্টিসিটি নষ্ট করে।এতে ত্বক ঝুলে যায় ও পোরসের আকার বেড়ে যায। তাই প্রতিদিন বাইরে বের হওয়ার আগে SPF 30+ যুক্ত সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন।

ফেইস মাস্ক ব্যবহার:

রেগুলার স্কিন কেয়ার রুটিন ফলো করার পাশাপাশি সপ্তাহে এক বার চারকোল মাস্ক , ফ্রুট মাস্ক বা শিট মাস্ক ব্যবহার করুন। এগুলো ত্বকের গভীর থেকে ময়লা ও তেল রিমুভ করে।

পর্যাপ্ত পানি পান করা:

ত্বককে হাইড্রেটেড ও স্বাস্থ্যকর রাখতে প্রতিদিন ৮ – ১০ গ্লাস পানি পান করুন। কারন পানি শরীর ও স্বাস্থ্য দুটোই ভালো রাখে।

স্বাস্থ্যকর খাবার:

প্রতিদিন খাবার ডায়েটে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার যেমন-সবুজ শাকসবজি, বেরি, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড যুক্ত খাবার- মাছ ,বাদাম, ডিম ও দুধ খান। আর অবশ্যই চিনি , ভাজাপোড়া , অয়েলি ও বেশি মসলাযুক্ত প্রসেসড ফুড এড়িয়ে চলুন।

ঘরোয়া উপায়:

ঘরোয়া কিছু উপাদান দিয়ে তৈরি কিছু ফেসপ্যাক বা রেমেডি ব্যবহার করেও ওপেন পোরস ছোট করা সম্ভব । চলুন জেনে নেই-

আলু / টমেটোর রস

আলুর রসে থাকা এনজাইম ও টমেটোর অ্যাস্ট্রিনজেন্ট প্রপার্টি ত্বকের পোরস টাইট করে এবং ত্বককে মসৃণ ও উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে।

আপেল সিডার ভিনেগার

একটি পার্টিতে ১ টেবিল চামচ আপেল সিডার ভিনেগার এবং ১ টেবিল চামচ পানি একসাথে মিশিয়ে নিন। একটি কটন প্যাডে বা তুলোর বল মিশ্রণটিতে ভিজিয়ে সম্পূর্ণ স্কিনে ম্যাসাজ করুন। স্কিন সম্পূর্ণ ড্রাই হওয়ার জন্য অপেক্ষা করুন। আপেল সিডার ভিনেগার স্কিনের পোরস ছোট করতে সাহায্য করে।

শশার রস

সপ্তাহে দুই বার শসার পেস্ট ত্বকে ব্যবহার করতে পারেন। এই পেস্টটি তৈরি করতে ৪-৫ টুকরো শসার টুকরোর সাথে ১ টেবিল চামচ লেবুর রস মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে ফুল স্কিনে ব্যবহার করুন। ১৫ মিনিট পর এটি ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। গরমের দিনে এই পেস্টটি বরফ আকারে তৈরি করে ত্বকের ওপর আইস ম্যাসাজ করে ব্যবহার করতে পারেন। এটি ত্বকের উপর ভিজিবল পোরস মিনিমাইজ করতে সাহায্য করে।

এইতো জেনে নিলাম, ত্বকের ওপেন পোরসের ভিজিবলিটি কম করার উপায় সম্পর্কে। ত্বকের পোরস কখনোই দূর করা সম্ভব নয় তবে এর, আকার ও দৃশ্যমানতা কমানো সম্ভব। আশা করি উপরের টিপস গুলো ফলো করলে ওপেন পোরস মিনিমাইজ হবে ও ত্বক অনেক বেশি মসৃণ দেখাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *