অলিভ অয়েল ত্বক এবং চুলের যত্নে ব্যবহারের পাশাপাশি কুকিং অয়েল হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। এর রয়েছে বহু উপকারিতা তাইতো এর ব্যবহারের পরিধি ও ব্যাপক।
অলিভ অয়েলকে ‘লিকুইড গোল্ড’ বলা হয়, কারণ এটি শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কার্যক্ষমতা উন্নত করে এবং সার্বিক স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।অলিভ অয়েল (Olive Oil) একটি প্রাকৃতিক তেল।
পুষ্টিগুণে ভরপুর অলিভ অয়েলে রয়েছে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যেমন- ভিটামিন এ, ডি,কে এবং ই । ‘ভিটামিন ই’ চুল এবং ত্বকের জন্য অত্যন্ত উপকারী।অলিভ অয়েলে পলিফেনলস এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা শরীরের ফ্রি র্যাডিক্যাল ক্ষতি রোধ করে এবং বয়সজনিত সমস্যা প্রতিরোধে সহায়তা করে। এতে রয়েছে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান যা প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
অলিভ অয়েলে রয়েছে মনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড যা খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) কমাতে এবং ভালো কোলেস্টেরল (HDL) বাড়াতে সহায়তা করে। যা আমাদের শরীরের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। এছাড়াও এটি আমাদের ত্বকে প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে।
নিয়মিত চুলে অলিভ অয়েল ব্যবহার করলে চুলের আর্দ্রতা বজায় থাকে, চুলের খুশকি প্রতিরোধ করে এবং চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে। এছাড়াও এটি চুলকে নরম, মসৃণ এবং উজ্জ্বল করে তোলে।
চুলের যত্নে অলিভ অয়েল এর উপকারিতা
আজকে আমরা জানবো চুলের যত্নে অলিভ অয়েল ব্যবহারে কি কি বেনিফিট পাওয়া যায় এবং অলিভ অয়েল ব্যবহারের কিছু সঠিক পদ্ধতি সম্পর্কে –
প্রাকৃতিকভাবে চুলের স্বাস্থ্য বৃদ্ধিতে অলিভ অয়েল সহায়ক ভূমিকা রাখে। এখন আমরা জানবো,চুলের যত্নে অলিভ অয়েল ব্যবহারে কি কি বেনিফিট পাওয়া যায়।
১. চুলকে ময়েশ্চারাইজড রাখে-
অলিভ অয়েল চুলের গোড়ার গভীরে প্রবেশ করে চুলকে ভেতর থেকে মজবুত করে এবং শুষ্ক ও ক্ষতিগ্রস্ত চুলকে আর্দ্রতা প্রদান করে। এতে চুল নরম ও মসৃণ হয়।
২. খুশকি দূর করে-
চুলের শুষ্কতা ও খুশকি দূর করতে অলিভ অয়েল খুবই কার্যকর। এটি মাথার স্কাল্পের ত্বককে আর্দ্র রাখে এবং খুশকির সমস্যা কমায়।
৩. চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে-
অলিভ অয়েলে রয়েছে ভিটামিন ই এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট । নিয়মিত অলিভ অয়েল ব্যবহারে মাথার ত্বকের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায় এবং চুল দ্রুত লম্বা হয় ।
৪. চুলের ডগা ফাটা প্রতিরোধ-
নিয়মিত অলিভ অয়েল ব্যবহারে চুলের ডগা ফাটা কমে এবং চুলের ভঙ্গুরতা কমায়, যা চুলকে দীর্ঘায়িত করতে সহায়ক। এতে চুল পড়া কমে যায় এবং চুল মজবুত হয়।
৫. প্রাকৃতিক কন্ডিশনার-
অলিভ অয়েল চুলের প্রাকৃতিক কন্ডিশনার হিসেবে কাজ করে।এটি চুলের শুষ্কতা দূর করে এবং চুলকে ঝলমলে মসৃণ করে তোলে।
৬. চুলের রুক্ষতা কমানো-
কাজের তাগিদে কিংবা কোন ফাংশন উপলক্ষে চুলের স্টাইলিংয়ের জন্য আমরা চুলে বিভিন্ন প্রকারের হেয়ার কেয়ার সামগ্রী ব্যবহার করে থাকি এতে আমাদের চুল অনেকাংশে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়াও যারা চুলে রাসায়নিক প্রসেস (যেমন: রং করা, স্ট্রেটেনিং বা পার্মিং) করে থাকেন, তাদের চুলে প্রোটিনের ক্ষতি হয়।এক্ষেত্রে আমরা অলিভ অয়েল ব্যবহার করে চুলের রুক্ষতা কমাতে পারি।
৭. প্রাকৃতিক প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট-
অলিভ অয়েলে রয়েছে ভিটামিন ই এবং ফ্যাটি অ্যাসিড যা চুলের প্রোটিন স্তরকে পুষ্টি যোগায়। এটি চুলকে প্রাকৃতিক কন্ডিশনিং করে, যা চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। চুলের প্রধান উপাদান হলো কেরাটিন, যা একটি প্রোটিন। অলিভ অয়েল ব্যবহার করলে চুলের প্রোটিনের ক্ষতি কমে এবং চুল শক্তিশালী ও স্বাস্থ্যজ্জ্বল হয়। এছাড়াও অলিভ অয়েল চুলের কিউটিকল গুলোকে সুরক্ষিত করে, যা প্রোটিন লস প্রতিরোধ করে। এটি চুলের কেরাটিন স্তরকে মজবুত করে এবং প্রোটিন ক্ষতি কমায়। ফলে চুলের ভঙ্গুরতা কমে যায় এবং চুল মজবুত ও স্বাস্থ্যকর হয়।
চুলের যত্নে অলিভ অয়েল ব্যবহারের ক্ষেত্রে অনেক ধরনের পদ্ধতি রয়েছে, যা চুলের ধরণ ও চুলের সমস্যার উপর নির্ভর করে এপ্লাই করা হয়।
চুলের যত্নে আমরা এই অলিভ অয়েল ব্যবহার করতে পারি – Skin Cafe Cold Pressed Olive Oil, RiBANA Organic Olive Oil.
অলিভ অয়েল ব্যবহারের নিয়ম
এখন আমরা জানবো চুলে অলিভ অয়েল ব্যবহারের কিছু সঠিক পদ্ধতি সম্পর্কে-
১. চুলের তেল ম্যাসাজ (Hot Oil Treatment)-
- অল্প পরিমাণ অর্থাৎ যতটুকু প্রয়োজন সেই অনুযায়ী অলিভ অয়েল একটি পাত্রে কুসুম গরম করুন। এবার চুলের গোড়ায় এবং ত্বকে আঙুল দিয়ে আলতো করে ম্যাসাজ করার পর পুরো চুলে তেল লাগিয়ে নিন।
- এরপর একটি তোয়ালে গরম পানিতে ভিজিয়ে চিপে নিয়ে মাথা ঢেকে রাখুন, যাতে তেল ভালোভাবে চুলে শোষিত হয়। এ পদ্ধতিতে অলিভ অয়েল পুরো মাথায় ৩০-৪০ মিনিট বা সারারাত রেখে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
এটি চুলের আর্দ্রতা ধরে রাখে,খুশকি দূর করে এবং চুলকে উজ্জ্বল ও মসৃণ করে তোলে।
২. ডিপ কন্ডিশনিং-
একটি বাটিতে চাহিদা অনুযায়ী অলিভ অয়েল নিয়ে, চুলের প্রান্তগুলোতে এবং চুলের লম্বা অংশে ভালোভাবে লাগিয়ে নিন। এবার ১৫-২০ মিনিট রেখে দিন।এরপর শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।
এটি চুলের শুষ্কতা কমায়, চুল নরম করে এবং ডগা ফাটা প্রতিরোধ করে
৩. প্রি- শ্যাম্পু ট্রিটমেন্ট-
শ্যাম্পু করার আগে চুলে অলিভ অয়েল লাগান এবং ১৫-৩০ মিনিট অপেক্ষা করুন।এরপর শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।
এটি চুলে প্রাক-শ্যাম্পু কন্ডিশনিং হিসেবে কাজ করে এবং শ্যাম্পুর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে চুলকে রক্ষা করে।
অলিভ অয়েল হেয়ার মাস্ক
এখন আমরা জানবো, অলিভ অয়েল এর কিছু হেয়ার মাস্ক সম্পর্কে।
অলিভ অয়েল ও মধুর হেয়ার মাস্ক-
একটি বাটিতে ২ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল, ১ টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন। এবার পুরো চুলে এই মিশ্রণটি লাগিয়ে ৩০ মিনিট পর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
এটি চুলকে ময়েশ্চারাইজড করে এবং প্রাকৃতিকভাবে চুলকে উজ্জ্বল করে তোলে।
অলিভ অয়েল ও ডিমের হেয়ার মাস্ক-
একটি বাটিতে ২ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল ও ১টি ডিমের সাদা অংশ মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন।এই মিশ্রণটি চুলে ২০-৩০ মিনিট লাগিয়ে রেখে দিন। এরপর শ্যাম্পু দিয়ে চুল ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন।
এটি চুলে প্রোটিন যোগায় এবং চুলের ভঙ্গুরতা কমায়।
অলিভ অয়েল ও লেবুর হেয়ার মাস্ক-
অলিভ অয়েলের সাথে লেবুর রস মিশিয়ে মাথার ত্বকে ২০-৩০ মিনিট লাগিয়ে ম্যাসাজ করুন। এরপর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি ত্বকের শুষ্কতা কমায় এবং খুশকি দূর করতে সাহায্য করে।
অলিভ অয়েল ও কলার হেয়ার মাস্ক-
একটি বাটিতে ২ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল ও ১টি পাকা কলা মিহি করে অলিভ অয়েলের সাথে মিশিয়ে নিন। মিশ্রণটি চুলে লাগিয়ে ২০-৩০ মিনিট অপেক্ষা করুন।এরপর শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।
কলা চুলের আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে এবং চুলকে নরম ও চকচকে করে তোলে।
অলিভ অয়েল ও অ্যাভোকাডো হেয়ার মাস্ক-
একটি পাত্রে ২ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল ও ১টি পাকা অ্যাভোকাডোর পেস্ট একসাথে মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন। এবার মিশ্রণটি চুলের গোড়া থেকে শুরু করে পুরো চুলে ৩০ মিনিট লাগিয়ে রাখুন।এরপরে শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।
এই মাস্ক চুলকে মসৃণ ও আর্দ্র রাখে।
অলিভ অয়েল ও দুধের হেয়ার মাস্ক-
একটি বাটিতে ২ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল ও ১/২ কাপ দুধের সাথে মিশিয়ে নিন।এই মিশ্রণটি চুলে লাগানোর পর ৩০ মিনিট রেখে দিন। এরপর শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।
দুধ চুলকে পুষ্টি দেয় এবং চুলকে শক্তিশালী করে।
অলিভ অয়েল ও নারিকেল তেলের হেয়ার মাস্ক-
প্রথমেই ২ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল ও ২ টেবিল চামচ নারিকেল তেল একটি বাটিতে একসঙ্গে মিশিয়ে হালকা কুসুম গরম করুন। এবার তেলের মিশ্রণটি চুলে লাগিয়ে ১ ঘণ্টা রাখুন। তারপর ধুয়ে ফেলুন।
এটি চুলকে মজবুত করে এবং চুলের ভেঙে যাওয়া রোধ করে।
উপরিউক্ত হেয়ার মাস্কগুলো সপ্তাহে ১-২ বার ব্যবহার করলে চুলের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে এবং চুলের রুক্ষতা ও ক্ষতিগ্রস্ততা কমে যাবে।