আমাদের দেহের সংযোগকারী টিস্যু, জয়েন্ট এবং ত্বকে প্রাকৃতিকভাবে হায়ালুরোনিক এসিড উৎপাদিত হয়। এটি এক প্রকারের চিনির অনু। হায়ালুরোনিকএসিড নিজের ওজনের চেয়ে ১০০০ গুন বেশি পরিমাণে পানি ধরে রাখতে পারে। এটি স্কিনের উপরিভাগে পানির কণাকে ধরে রাখে ফলে স্কিন হাইড্রেট এবং গ্লোয়িং লুকিং হয়।
হায়ালুরোনিক এসিড ত্বকের আদ্রতা ধরে রাখে, মশ্চারাইজড করে এবং দেহের টিস্যু গুলিকে লুবিক্রেন্ট করে। হায়ালুরোনিক এসিডে থাকা অ্যান্টি এজিং ফর্মুলা ত্বককে সুন্দর ও মসৃণ রাখে।
কোলাজেনের মধ্যেই রয়েছে হায়ালুরোনিক এসিড। হায়ালুরোনিক এসিড কোলাজেনকে বুস্ট আপ করে এবং ত্বক ভিতর থেকে হেলদি ও মসৃন হয়।
রোদে পোড়া ত্বক বা ত্বকে লাল ভাব থাকলে হায়ালুরোনিক এসিড ব্যবহার করলে ত্বক হাইড্রেট হয় ও লাল ভাব কমে যায় ।আপনি হায়ালুরোনিক এসিড সিরাম, মশ্চারাইজিং, শীট মাস্ক হিসেবে প্রতিদিন স্কিন কেয়ার রুটিনে রাখতে পারেন।
হায়ালুরোনিক এসিড ত্বককে হাইড্রেটিং করে, বয়সের ছাপ জনিত বলিরেখা ও সূক্ষ্ম ছাপ কমাতে সাহায্য করে।
হায়ালুরোনিক এসিড তৈলাক্ত ত্বক ,শুষ্ক ত্বক অর্থাৎ প্রায় সব ধরনের ত্বকেই ব্যবহার উপযোগী। হায়ালুরোনিক এসিড ব্যবহারে এলার্জির মাত্রা বা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া আছে খুবই কম পরিমাণে। তবুও হায়ালুরোনিক এসিড প্রথমত ব্যবহার করার পূর্বে ত্বকে প্যাচ টেস্ট করে নিবেন।
প্যাচ টেস্টর ক্ষেত্রে ত্বকে অল্প পরিমাণে হায়ালুরোনিক এসিড লাগিয়ে দেখতে পারেন যদি লাগানো স্থানে লাল ভাব বা চুলকানি না হয় তাহলে নিয়মিত হায়ালুরোনিক এসিড ব্যবহার করতে পারেন।
যে কোন প্রোডাক্ট ব্যবহার করার পূর্বে অবশ্যই চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ বা ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবহার করবেন।
হায়ালুরোনিক এসিডের ব্যবহার-
হায়ালুরোনিক এসিড ব্যবহৃত হয় ত্বকের যত্নে ,যৌথ স্বাস্থ্য ,চোখের ড্রপ, ইনজেকশনযোগ্য ফীলার এবং ক্ষত নিরাময়ে ।
পাতলা ও শুষ্ক ত্বকের জন্য উপকারী-
যাদের স্কিন পাতলা ও শুষ্ক তাদের ক্ষেত্রে হায়ালুরোনিক এসিড একটি গুরুত্বপূর্ণ স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট। হায়ালুরোনিক এসিড ব্যবহারে ত্বক মোটা ,মসৃণ এবং ত্বকের তারুণ্যতা বৃদ্ধি পায়।
ইনজেকশনযোগ্য ফীলার হিসেবে হায়ালুরোনিক এসিডের ব্যবহার-
বয়স বাড়ার সাথে সাথে ত্বকে প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত হাইলোরনিক এসিড এর পরিমাণ কমে যায়। ফলে ত্বকে বয়সের ছাপ ,ভাঁজ পরা ,বলিরেখা ও সূক্ষ রেখা স্পষ্ট হয়।
এক্ষেত্রে ত্বকের ডিপ সার্কেল ভরাট করতে, বলিরেখা, ভাজ পড়া ,সুক্ষরেখা কভার করার জন্য হায়ালুরোনিক এসিড ফিলার হিসেবে ত্বকে ব্যবহার হয়।
হায়ালুরোনিক এসিড সিরাম-
হায়ালুরোনিক এসিড ত্বকে স্পঞ্জ এর মত কাজ করে। হায়ালুরোনিক এসিড এর সিরাম ফর্মুলেশনে এটি ত্বকের ৫৫% হাইড্রেশন ল্যাভেল বৃদ্ধি করে। ত্বকে মেকাপ, সানস্ক্রিন ব্যবহারের পূর্বে হায়ালুরোনিক এসিড সমৃদ্ধ সিরাম ব্যবহার করতে পারেন।
হায়ালুরোনিক এসিড এর সিরাম ফর্মুলেশন টি সকালে ব্যবহার করলে অবশ্যই সাথে সানস্ক্রিন লাগাবেন এবং রাতে সিরাম ফর্মুলেশনটি ব্যবহার করলে এই সিরামটির সাথে অবশ্যই নাইট ক্রিম ব্যবহার করবেন।
হায়ালুরোনিক এসিডের উপকারীতা:
বর্তমানে হায়ালুরোনিক এসিড সমৃদ্ধ সিরাম, লোশন, টোনার এসেন্স ক্লিনজার পাওয়া যায়। হায়ালুরোনিক এসিডে থাকা বেনিফিট ত্বকের মসৃনতা ও তারুণ্যতা বৃদ্ধি করে। তাই এর পপুলারিটি দিন দিন বেড়েই চলেছে।
স্কিন কেয়ারে হায়ালুরোনিক এসিডের বিভিন্ন উপকারী দিক –
১.ত্বক হাইড্রেটিং রাখা:
হায়ালুরোনিক এসিড ত্বকের উপরিভাগে পানির ভারসাম্য বজায় রাখে ফলে ত্বকের আদ্রতা বৃদ্ধি পায় স্কিন হয় হেলদি ও ইউথফুল। তাই হায়ালুরোনিক এসিড সমৃদ্ধ মশ্চারাইজিং ,ক্রিম ,সিরাম,লোশন ক্লিনজার ব্যবহার করতে পারেন।
২.ত্বক নরম ও প্লাম্পি হয়:
শুষ্ক ও ড্রাই স্কিনে পানির আদ্রতা কমে যায় ফলে স্কিন নিষ্প্রাণ হয়ে যায়। যদি আপনার ত্বক শুষ্ক ও ড্রাই হয় তাহলে অবশ্যই হায়ালুরোনিক এসিড সমৃদ্ধ স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহার করবেন। এর ফলে আপনার ত্বক নরম ও প্লাম্পি হবে।
৩.বলিরেখা , রিংকেল এর দাগ কমায়:
এই ইনগ্ৰিয়েন্টে এর আ্যকটিভিটিতে সেল রিনিউয়াল হয়। বয়স বাড়ার সাথে সাথে ত্বকে রিংকেল, বলিরেখা , সূক্ষ্ম রেখা দেখা যায়। যাদের এই সমস্যা গুলো আছে তারা অবশ্যই হায়ালুরোনিক এসিড সমৃদ্ধ ক্রিম ব্যবহার করবেন। যাদের বয়স ৩০ এর কাছাকাছি তাদের এটি অবশ্যই ব্যবহার করতে হবে। এছাড়াও বয়ঃসন্ধিকাল থেকেই রিংকেল, ফাইন লাইনস হওয়ার আগেই এই ইনগ্ৰিয়েন্ট সমৃদ্ধ প্রডাক্ট ব্যবহার করতে পারেন।
৪.সান বার্ন হওয়া থেকে ত্বককে রক্ষা করে:
হায়ালুরোনিক এসিড ত্বকের পানির ভারসাম বজায় রেখে ত্বক হাইড্রেট রাখে পাশাপাশি এতে আছে এন্টি অক্সিডেন্ট ফর্মুলা, যা ত্বককে সানবার্ন হওয়া থেকে রক্ষা করে। আমাদের স্কিনে যে ফ্রি রেডিকেল তৈরি হয় সূর্য থেকে সেগুলোকে হায়ালুরোনিক এসিড প্রিভেন্ট করে।
৫.ত্বকে চুলকানি বা ইরিটেশন কমায়:
হায়ালুরোনিক এসিড ত্বকের একটিভ ইনগ্ৰিডিয়েন্ট। এতে আছে আন্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান। এটি স্কিনে হওয়া রেশ,একনে , চুলকানি হওয়া স্থানে বেশি পরিমাণে ব্লাড ভেসেল তৈরির সিগনাল দেয়। ফলে এফেক্টেড এরিয়াটি দ্রুত সেরে যায়।
৬.ত্বকে কোলাজেনের মাত্রা বাড়ায়:
ত্বকে প্রাকৃতিকভাবেই উৎপাদিত হয় কোলাজেন। বয়স বাড়ার সাথে সাথে দেহে কোলাজেনের মাত্রা কমে যায়। যার ফলে ত্বকে ফাইন্ লাইন্স, রিংকেল ,বয়সের ছাপ পড়ে। এই সময় ত্বকে আন্টি এজিং ফর্মুলা সমৃদ্ধ ক্রিম ব্যবহার করা হয় যার মূল উপাদান হায়ালুরোনিক এসিড। এটি ত্বকে কোলাজেন বুষ্ট আপ করে ত্বকের ইলাস্টিসিটি বৃদ্ধি করে এবং ত্বকে বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না।
৭.পোরস টাইট করতে সাহায্য করে:
বয়স বাড়ার সাথে সাথে ত্বকের চামড়া ভাজ হয় ফলে ত্বকে থাকা পোরস বড় হয়ে যায়। এই পোরস গুলোকে টাইট করে হায়ালুরোনিক এসিড। এতে ত্বক মসৃণ দেখায়।
৮.ত্বকের টেকচার স্মুথ হয়:
হায়ালুরোনিক এসিড ব্যবহারে ত্বকের পানির ভারসাম্য বজায় থাকে ফলে ত্বকের টেকচার স্মূথ হয় এবং ইভেন টোন বৃদ্ধি পায়।
হায়ালুরোনিক এসিড ত্বকে কিভাবে ব্যবহার করবেন-
হায়ালুরোনিক এসিড ব্যবহারের ভালো উপায় হচ্ছে ত্বক হালকা ভেজা থাকা অবস্থায় টোনার বা এসেন্স হিসেবে ব্যবহার করা। ব্যবহারের পর অবশ্যই ময়েশ্চারাইজার বা সানস্ক্রিম ব্যবহার করে এটিকে লক করে রাখতে হবে।
হায়ালুরোনিক এসিড ত্বকে কখন ব্যবহার করবেন-
প্রতিদিন ত্বকের যত্নে ত্বককে সুন্দর রাখতে সকালে হায়ালুরোনিক ফর্মুলেশন সমৃদ্ধ সিরাম, টোনার অথবা এসেন্স ত্বকে হালকা ভেজা অবস্থায় ব্যবহার করবেন। ব্যবহারের পর অবশ্যই সানস্ক্রিন অথবা ময়েশ্চারাইজিং ক্রিম ব্যবহার করবেন। ফলে এটি ত্বকে লক হয়ে যাবে।
যদি দুইবার ব্যবহার করতে চান তাহলে রাতে ব্যবহারের পর অবশ্যই মশ্চারাইজিং ক্রিম বা নাইট ক্রিম ব্যবহার করবেন।