ত্বক নিয়ে আমাদের দুশ্চিন্তার শেষ নেই। ত্বকের যত্নে নিয়মিত আমরা বিভিন্ন প্রসাধনী ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু ত্বকের ধরন না বুঝে প্রসাধনী ব্যবহার করার ফলে সুন্দর, সুস্থ বা কাঙ্খিত ত্বক আমরা পাইনা।
বায়োলজিক্যালি ত্বকের ধরন নির্ভর করে-ত্বকের সেবাম ও আদ্রতার ভারসাম্যের উপর। সেবাম ও আদ্রতার ওপর নির্ভর করে ত্বক চার ধরনের হয়ে থাকে।
যথা-
১. নরমাল ত্বক।
২. শুষ্ক ত্বক।
৩. তৈলাক্ত ত্বক।
৪. সেনসিটিভ ত্বক।
প্রথমেই জেনে নেব সেবাম কি?
আমাদের ত্বকের লোমকূপের নিচে সেবেশাস নামক গ্রন্থি রয়েছে। এই গ্রন্থি সেবাম নামক প্রাকৃতিক তেল উৎপাদন করে , সেবাম হলো এক প্রকারের প্রাকৃতিক তেল। সেবামের কাজ হল ত্বককে আর্দ্র ও সুস্থ রাখা।
ত্বকে সেবামের উৎপাদন বৃদ্ধি হলে ত্বক তেলতেলে হয়ে যায় অনুরূপভাবে ত্বকে সেবামের উৎপাদন কম হলে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়।
আজকে আমরা জানব, আপনি কিভাবে বুঝবেন আপনার ত্বকের ধরন ড্রাই বা শুষ্ক ধরনের এবং কিভাবে ড্রাই বা শুষ্ক ত্বকের যত্ন নেব সে সম্পর্কে।
আমরা জানি উজ্জ্বল , দাগহীন ও সুন্দর ত্বক ব্যক্তির আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেয়। সুন্দর ও স্বাস্থ্যজ্জ্বল ত্বক পেতে রেগুলার কিছু বেসিক স্কিন কেয়ার রুটিন ফলো করতে হবে। স্কিন টাইপ বুঝে স্কিন কেয়ার করা খুবই ইম্পোরটেন্ট।
ড্রাই বা শুষ্ক ত্বকের বৈশিষ্ট্য-
- ত্বক রুক্ষ,শুষ্ক বা নিষ্প্রাণ দেখায়।
- ত্বকে ইচিনেস এর সমস্যা হয়।
- ত্বকে নির্দিষ্ট বয়সের আগেই বয়সের ছাপ, ফাইন লাইনস খুব দ্রুতই চলে আসে।
- ত্বকে সাদা কালো ছোপ ছোপ দাগ ও প্যাচিনেসের সমস্যা হয়।
- স্কিন অতিরিক্ত ড্রাই হয়ে গেলে স্কিন খসখসে হয়ে যায় ফলে অনেক সময় চামড়া উঠে আসে।
- ত্বকে মেসতার সমস্যা দেখা দেয়।
- স্কিনে লালচে আভা ও বলিরেখা দেখা দেয়।
- শুষ্ক ত্বক হলে কনুই,হাত-পা এবং মাথার ত্বকে শুষ্কতা দেখা যাবে।
উপরে উল্লেখিত বৈশিষ্ট্য থেকে বুঝতে পারবেন আপনার ত্বক শুষ্ক কিনা।
ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া এটা বিভিন্ন কারনে হতে পারে- জন্মগতভাবে, ত্বকের জন্য ক্ষতিকর প্রসাধনী ইউজ করার ফলে , ত্বকের যথাযথ যত্ন না করলে , হরমোনাল ইনব্যালেন্স এর কারনে ও ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়।
চলুন জেনে নেই কি কি কারনে ত্বক শুষ্ক হয়ে যেতে পারে-
- বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে এবং হরমোনাল ইনবালেন্স এর কারণে ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়ার সমস্যা তৈরি হয়।
- বৈশ্বিক আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণেও ত্বক শুষ্ক হয়ে যায় যেমন- অতিরিক্ত রোদ, বৃষ্টি ,শীত ইত্যাদি মৌসুম।
- গরম পানিতে অত্যাধিক সময়ধরে গোসল করার ফলে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়।
- শরীরে অত্যাধিক সাপ্লিমেন্টারি ওষুধ সেবন করার ফলেও ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়।
- আল্ট্রা ভায়োলেট রশ্নি ত্বকের সান্নিধ্যে এলে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়।
- ঘরের অভ্যন্তরীণ উত্তাপের কারণে ত্বকে সমস্যা হয়।
- জন্মগত, জিনগত বৈশিষ্ট্যের কারণে ত্বক শুষ্ক থাকে।
এখন আমরা জানবো, ড্রাই বা শুষ্ক ত্বকের যত্ন রেগুলার স্কিন কেয়ার রুটিন মাফিক কিভাবে করব সেই সম্পর্কে।
ড্রাই ত্বককে বার বার মশ্চারাইজ রাখতে হয়। ড্রাই বা শুষ্ক ত্বকের যত্ন নিতে হয় বারবার ও ত্বকের জন্য মানানসই সঠিক প্রসাধনি দিয়ে।
শুষ্ক ত্বকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ টিপস।
চলুন জেনে নেওয়া যাক ,শুষ্ক ত্বকের জন্য রুটিন মাফিক রেগুলার স্কিন কেয়ার করার গুরুত্বপূর্ণ টিপস।
১. ঠান্ডা পানির ঝাপটা দেওয়া-
সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে কয়েক ঝাপটা ঠান্ডা পানি দিয়ে ত্বককে সতেজ করে তুলুন।
২. মাইল্ড ক্লিনজার দিয়ে ত্বক পরিষ্কার করা-
ময়েশ্চারাইজিং ক্লিনজার দিয়ে ত্বক আলতো ভাবে মেসাজ করে ধুয়ে ফেলুন। যতটা সম্ভব অর্গানিক ফেসওয়াশ ব্যবহার করার ট্রাই করবেন।
৩. টোনার ব্যবহার –
ক্লিনজার দিয়ে ত্বক পরিষ্কার করার পর আলতোভাবে ত্বক তোয়ালে দিয়ে মুছে নিন এবং ত্বকে টোনার আলতোভাবে এ্যপ্লাই করে নিন।
৪. সিরাম ব্যবহার –
শুষ্ক ত্বকের জন্য হাইড্রেটিং সিরাম ব্যবহার করা ভালো। এক্ষেত্রে হায়ালুরনিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ সিরাম ব্যবহার করলে ত্বক হাইড্রেটেট , নরম ও উজ্জ্বল থাকে।
৫. মশ্চারাইজার অ্যাপ্লাই-
ড্রাই স্কিনে এমনিতেও বারে বারে মশ্চারাইজিং লাগাতে হয় ত্বক হাইড্রেট রাখার জন্য। টোনার ব্যবহারের পর ত্বকে ভালো মানের মশ্চারাইজার আলতো ভাবে এপ্লাই করে নিন।
৬. সানস্ক্রিম ব্যবহার-
আমরা অনেকে শুধু বাইরে বের হওয়ার সময় সানস্ক্রিম লাগানোকে জরুরী ভাবি। কিন্তু এটা একদমই ঠিক না, মশ্চারাইজার ব্যবহারের পর ত্বকে সানস্ক্রিম লাগাবেন। বাইরে বের না হলেও হালকা করে সানস্ক্রিন ত্বকে এপ্লাই করবেন। আর যদি বাইরে বের হন তাহলে কয়েক ঘন্টা পর পর ত্বকে সানস্ক্রিন লাগাবেন।
৭. ঠোঁটে লিপ বাম ব্যবহার-
ত্বকের সাথে সাথে লিপ ও শুষ্ক হয়ে যায়। তাই সব সময় লিপের যত্নের জন্য ব্যবহার করুন বাটারি লিপ বাম। ঠোঁট শুষ্ক হয়ে যাওয়ার আগেই বারে বারে ঠোটে লিপ বাম, লিপজেল বা লিপ গ্লোস লাগিয়ে ঠোঁটকে মশ্চারাইজড রাখুন।
৮. পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন-
ত্বককে বাহ্যিকভাবে হাইড্রেট রাখার পাশাপাশি, ভেতর থেকেও হাইড্রেট রাখা জরুরি। তাই পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন এবং বাইরে বের হলে অবশ্যই সাথে পানি নিয়ে যাবেন। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করবেন এতে ত্বক ভেতর থেকে হাইড্রেট থাকবে।
৯. ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ-
আপনার ত্বকের কোমলতা ও আদ্রতা বজায় রাখতে ভিটামিন সমৃদ্ধ শাকসবজি ও ফলমূল সাহায্য করবে। অতিরিক্ত পরিমাণে ভাজাপোড়া খাবার এড়িয়ে চলবেন এবং খাবার তালিকায় কাঁচা এবং তাজা ফলমূল ও শাকসবজি রাখবেন।
১০. উষ্ণ গরম পানি দিয়ে মুখ পরিষ্কার –
কর্মসংস্থান থেকে ফিরে বা সারাদিনের ক্লান্তির পর ত্বকে থাকা ময়লা পরিষ্কার করার জন্য উষ্ণ গরম পানি দিয়ে ত্বকে ঝাপটা দিন। ত্বকে মেকাপ ব্যবহার করলে ত্বক তেল বা মেকআপ রিমুভার দিয়ে ত্বক পরিষ্কার করে, ক্লিনজার দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
১১. রাতের যত্ন-
সারাদিনের ক্লান্তির পর ত্বক রাতে রিপেয়ার করার জন্য রাতে স্কিন কেয়ার করা খুবই জরুরি। এক্ষেত্রে সকালের মতোই ত্বক ক্লিনজার দিয়ে পরিষ্কার করে ,টোনার ব্যবহার করে মশ্চারাইজিং ক্রিম ব্যবহার করতে হয় এবং সর্বশেষে নাইট ক্রিম ব্যবহার করলে ত্বক ফুলনাইট রিপেয়ার হয় এবং ত্বক ময়েশ্চারাইজড থাকে।
১২. ফেইস মাস্ক ব্যবহার –
সপ্তাহে এক বা দুইবার ত্বক এবং লিপকে এক্সফোলিয়েট করবেন, ত্বকে ফেস মাস্ক,মাড মাস্ক, ফ্রুট মাস্ক ইত্যাদি ব্যবহার করতে ভুলবেন না। এটা আপনার ত্বককে দিবে বাড়তি পরিচর্যা।
Very Well Suggestion❣️