চুলের যত্ন

চুলের যত্নে মেথির ব্যবহার ও এর উপকারিতা।

fenugreek for hair care

নারী-পুরুষ সবারই কমবেশি চুল পড়ার সমস্যা রয়েছে। চুল পড়ার সমস্যা রোধে মেথি খুবই কার্যকরী। গবেষণায় দেখা গেছে, মেথির বীজে রয়েছে একাধিক উপকারী উপাদান যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ করে, শরীরের রোগ জীবাণু ধ্বংস করে, কৃমি নিয়ন্ত্রণে রাখে, রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে, ত্বকের তারুণ্যতা ধরে রাখে, রক্তে ক্ষতিকর কলেস্টেরলের মাত্রা কমায় , চুল পড়া কমায় ইত্যাদি।

মেথি কি?

মেথি হচ্ছে ওষুধি গাছ। মেথির বৈজ্ঞানিক নাম- Trigonella foenum graecum ও মেথির ইংরেজি নাম fenugreek। মেথি গাছে একবারই ফুল এবং ফল হয়। আমরা স্কিন কেয়ার এবং হেয়ার কেয়ারে যে মেথি ব্যবহার করি ,সেটা হচ্ছে মেথির ফলের বীজ। মেথির পাতা ও বীজের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, প্রোটিন, ভিটামিন, এবং খনিজ উপাদান রয়েছে, যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।

মেথির কোন অংশ কিভাবে ব্যবহার করা হয়?

fenugreek seed

মেথির পাতা এবং বীজ এই উভয় অংশই ব্যবহারযোগ্য।

মেথির বীজ এর ব্যবহার –

মেথির বীজই সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়। এটি তিতা স্বাদের এবং এতে অনেক ঔষধি গুণাগুণ রয়েছে। বীজ থেকে চা, পেস্ট, তেল ইত্যাদি তৈরি করা হয়। মেথির বীজ থেকে যে তেল তৈরি করা হয় তা ত্বক ও চুলের যত্নে ব্যবহার করা হয়।মেথির তেল চুলের বৃদ্ধি, খুশকি প্রতিরোধ এবং ত্বকের সমস্যা সমাধানে খুবই কার্যকরী । এছাড়াও শুকনো মেথির বীজ গুঁড়ো করে পাউডার তৈরি করা হয়, যা বিভিন্ন ধরনের খাবারে মসলা হিসেবে এবং ঔষধি পেস্ট তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়।

মেথির পাতার ব্যবহার –

মেথির পাতা সাধারণত শাক হিসেবে রান্নায় ব্যবহৃত হয়। এটি তাজা বা শুকিয়ে মসলা হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। মেথির পাতায় আয়রন, ক্যালসিয়াম, এবং ভিটামিন রয়েছে যা দেহের জন্য ভালো। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য, অ্যানিমিয়া এবং রক্তশূন্যতা কমাতে সাহায্য করে।

চুলের যত্নে মেথির উপকারিতা-

১. চুল পড়া কমায় – মেথির বীজে রয়েছে প্রোটিন ও নিকোটিনিক অ্যাসিড যা চুলের গোড়াকে মজবুত করে ফলে চুল পড়া কমে যায়।

২.খুশকি দূর করে- মেথিতে রয়েছে অ্যান্টিফাঙ্গাল এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণাগুণ যা চুলের খুশকি ও মাথার ত্বকের সংক্রমণ দূর করে নিয়মিত মেথির পেস্ট বা তেল ব্যবহারে খুশকির সমস্যা কমে যায়।

৩.চুলের বৃদ্ধি বাড়ায়- মেথির বীজে লেসিথিন নামক একটি উপাদান থাকে, যা চুলের কোষে পুষ্টি যোগায় এবং নতুন চুল গজাতে সহায়তা করে। এটি ব্যবহারে চুলের ঘনত্ব ও দৈর্ঘ্য দ্রুত বৃদ্ধি পায় ।

৪. চুলের রুক্ষতা ও শুষ্কতা কমায়- মেথির বীজের পেস্ট বা তেল চুলে প্রাকৃতিক কন্ডিশনার হিসেবে কাজ করে। এটি চুলের রুক্ষতা দূর করে এবং চুলকে কোমল ও উজ্জ্বল করে তোলে।

৫. চুলের আগা ফাটা প্রতিরোধ- মেথির বীজের পুষ্টিগুণ চুলের আগা ফাটার সমস্যা কমাতে সাহায্য করে। এটি চুলের ডগার শুষ্কতা দূর করে ফলে চুলের আগা ফাটা রোধ হয়।

চুলের যত্নে মেথি কিভাবে ব্যবহার করব:

fenugreek

১. মেথির বীজের পেস্ট-

একটি পাত্রে এক রাত পানিতে ভিজিয়ে রাখা মেথির বীজের পেস্ট ২ চামচ এবং সামান্য পানি দিয়ে একটি ঘন মসৃণ পেস্ট তৈরি করে নিন।

এবার এই পেস্টটি চুলের গোড়া থেকে ডগা পর্যন্ত লাগিয়ে নিন । ৩০-৪৫ মিনিট পর সাধারণ পানি অথবা হালকা শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।

এটি চুল পড়া কমায়, খুশকি দূর করে এবং চুলের দ্রুত বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

২. মেথির তেল-

প্রথমেই মেথির বীজ শুকিয়ে হালকা ভেজে নিন। এরপর একটি হাঁড়িতে মেথির বীজ ২ চামচ ও নারকেল/তিল/জবার তেল এক কাপ পরিমাণে একত্রে তেলের মধ্যে ঢেলে মাঝারি আঁচে কিছুক্ষণ গরম করুন, যতক্ষণ না তেল হালকা বাদামি রঙ ধারণ করে। এবার তেলটি ঠান্ডা হলে ছেঁকে একটি বোতলে সংরক্ষণ করুন।

সপ্তাহে ২-৩ বার চুলের গোড়ায় এই তেল ম্যাসাজ করে ব্যবহার করূন। এটি ব্যবহারে চুলের রুক্ষতা কমবে, চুল পড়া রোধ হবে, এবং চুলের গোড়া মজবুত হবে।

৩. মেথির পানির স্প্রে-

মেথির বীজ সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। এরপর সকালে সেই পানি ছেঁকে একটি স্প্রে বোতলে ঢালুন।এই মেথির পানি চুলের গোড়ায় এবং চুলের আগায় স্প্রে করুন।‌কিছুক্ষণ পর চুল ধুয়ে ফেলুন। এটি চুল মজবুত করে এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।

মেথির হেয়ার মাস্ক –

১. মেথি এবং দইয়ের হেয়ার মাস্ক-

মেথির বীজ এক রাত পানিতে ভিজিয়ে রাখার পর ভেজা মেথি পিষে একটি মসৃণ পেস্ট তৈরি করুন। এবার একটি পাত্রে মেথির পেস্ট ২ চামচ ও টক দই ১/২ কাপ একসাথে মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন। এবার এই পেস্টটি চুলের গোড়া ও চুলের সম্পূর্ণ অংশে লাগান।

৩০-৪৫ মিনিট অপেক্ষা করে শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। এটি চুলকে নরম ও মসৃণ করে, খুশকি দূর করে এবং চুলের দ্রুত বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

২. মেথি এবং নারকেল তেলের হেয়ার মাস্ক-

একটি পাত্রে মেথির বীজের পেস্ট দুই চামচ ও নারকেল তেল ২ চামচ একসাথে মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন। এবার এই পেস্টটি চুলের গোড়া থেকে ডগা পর্যন্ত লাগিয়ে রাখুন। ৩০-৪৫ মিনিট পর শ্যাম্পু দিয়ে ভালোভাবে চুল ধুয়ে ফেলুন। এটি চুলের রুক্ষতা দূর করে, চুলকে মজবুত করে এবং চুল পড়া কমায়।

৩. মেথি এবং অ্যালোভেরার হেয়ার মাস্ক-

মেথির বীজের পেস্ট ২ টেবিল চামচ ও অ্যালোভেরা জেল ২ টেবিল চামচ একসঙ্গে মিশিয়ে চুলের গোড়ায় এবং চুলের সম্পূর্ণ অংশে লাগিয়ে নিন।৩০-৪৫ মিনিট রেখে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি মাথার ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখে, চুলের রুক্ষতা দূর করে এবং খুশকি প্রতিরোধ করে।

৪. মেথি এবং ডিমের হেয়ার মাস্ক-

একটি পাত্রে মেথির বীজের পেস্ট ২ টেবিল চামচ ও একটি ডিমের কুসুম একসঙ্গে মিশিয়ে একটি ঘন পেস্ট তৈরি করুন।এটি চুলের গোড়া থেকে শুরু করে পুরো চুলে লাগিয়ে ৩০ মিনিট পর শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। এটি চুলকে পুষ্টি যোগায়, চুলের বৃদ্ধি বাড়ায় এবং চুলকে উজ্জ্বল ও শক্তিশালী করে তোলে।

৫. মেথি এবং অলিভ অয়েলের হেয়ার মাস্ক

একটি পাত্রে মেথির পেস্ট ২ টেবিল চামচ ও অলিভ অয়েল ২ টেবিল চামচ একসাথে মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন। এবার এই পেস্টটি চুলে লাগিয়ে ৩০-৪৫ মিনিট রেখে শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। এটি চুলের আর্দ্রতা বজায় রাখে এবং চুলকে নরম ও মসৃণ রাখে।

সতর্কতা

নিয়মিত মেথির হেয়ার মাস্ক ব্যবহার করলে চুল পড়া, রুক্ষতা এবং খুশকির মতো সমস্যার সমাধান হতে পারে, এবং চুল আরও উজ্জ্বল ও মজবুত হয়ে উঠবে।

তবে অতিরিক্ত ব্যবহার সুফল বয়ে আনে না। তাই সপ্তাহে ১-২ বার মেথির হেয়ার মাস্ক ব্যবহার করবেন আশা করি এতে চুলের সমস্যাগুলো কমে যাবে।

আরো পড়ুন, চুলের যত্নে অলিভ অয়েল এর উপকারিতা ও ব্যবহারের নিয়ম।

One thought on “চুলের যত্নে মেথির ব্যবহার ও এর উপকারিতা।

  1. Mitu Akter says:

    Thank you so much for this information❣️

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *