হরমোনাল একনে ও সিস্টিক একনের মধ্যে প্রধান পার্থক্য কী?
টিনেজ থেকে থার্টিজ সকল বয়সে স্কিনের একনে বা ব্রণের সমস্যা হলো সবচেয়ে কমন স্কিন কনসার্নগুলোর মধ্যে একটি। এটি মুখের পাশাপাশি চিবুক, কপাল, গালে,পিঠ ও বুকেও হয়। একনে বা ব্রনের বিভিন্ন ধরন রয়েছে, যার মধ্যে হরমোনাল একনে ও সিস্টিক একনে বেশি পরিচিত। অনেকেই ভাবে, ‘ব্রণ তো ব্রণই’ সব ধরনের ব্রনের চিকিৎসা পদ্ধতি নিশ্চয়ই এক! কিন্তু না, স্কিনে হরমোনাল একনে এবং সিস্টিক একনে হওয়ার কারণ ও সমাধানের উপায় উভয়ই আলাদা।
সিস্টিক একনে আর হরমোনাল একনে উভয়ই একে অপর থেকে কিছুটা ভিন্ন বৈশিষ্ট্য বহন করে। ত্বকে হরমোনাল একনে নাকি সিস্টিক একনে হয়েছে? অনেকেই এই বিষয়ে কনফিউশড থাকে। যদি একনে বা ব্রনের টাইপ (হরমোনাল নাকি সিস্টিক ) সঠিক ভাবে আইডেন্টিফাই না করতে পারি ,তাহলে এর সমাধান করবেন কিভাবে। তাই আজকের ফিচারে আমি হরমোনাল একনে এবং সিস্টিক একনে কি ? এদের মধ্যে প্রধান পার্থক্য কী? এই সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। চলুন জেনে নেই।
হরমোনাল একনে কী?
হরমোনাল একনে হলো এক ধরনের প্রদাহজনিত দানাদার বা পুঁজ ভর্তি ব্রণ, যা শরীরের হরমোনাল ইমব্যালেন্সের কারণে হয়। এটি সাধারণত বয়ঃসন্ধিকালে, মাসিক চক্রের সময়, গর্ভাবস্থায় বা পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম (PCOS) এর মতো হরমোনজনিত সমস্যার কারণে হয়। এটি মুখের চোয়ালের কাছে, থুতনিতে এবং কপালে – বাম্পস, পিম্পলস, হোয়াইটহেডস, ব্ল্যাকহেডস ও সিস্ট ফর্মে পুঁজভর্তি দানা আকারে থাকে। এটি মূলত অতিরিক্ত স্ট্রেস, অপর্যাপ্ত ঘুম , হরমোনাল ইমব্যালেন্স ও কমেডোজেনিক স্কিনকেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহার করার কারনে হয়। শরীরে যখন এস্ট্রোজেন-টেস্টোস্টেরনের ভারসাম্যহীনতা প্রকট হয় তখন,ত্বকের সেবাম গ্রন্থি অতিসক্রিয় হয় ফলে ত্বকে ব্যাকটেরিয়া ও প্রদাহের প্রোকোপ বেড়ে যায়। যা পরবর্তীতে ত্বকে, হরমোনাল একনের সৃষ্টি করে।
সিস্টিক একনে কী?
এটিও এক ধরনের একনে বা ব্রণের টাইপ। যা ত্বকের গভীর স্তরে (ডার্মিস) প্রদাহ সৃষ্টি করে। এটি ব্রনের সবচেয়ে গুরুতর ও বেদনাদায়ক রূপ, যা সাধারণ ব্রণ বা হরমোনাল একনের চেয়ে আলাদা। সাধারণত এটি বড়, ফোলা, লালচে বা সাদা রঙের ব্রণে পুঁজভর্তি দানা বা সিস্ট আকারের হয় যা ত্বকে অনেকদিন পর্যন্ত থাকে ও স্থায়ী দাগ সৃষ্টি করে যায়। এটি ত্বকের নিচে শক্ত পিণ্ডের মতো হয় যা হাত দিয়ে স্পর্শ করলে দানাদার বস্তুর মত অনুভূত হয় এবং চাপ দিলে ব্যথা লাগে। এটি সাধারণত হরমোনের পরিবর্তন,ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ,ত্বক অতিরিক্ত তৈলাক্ত হলে, পোরস ক্লগ হওয়া , ত্বকে ডেড সেলস জমে থাকা ও জেনেটিক কারনে হয়।
হরমোনাল একনে এবং সিস্টিক একনের প্রধান পার্থক্য
হরমোনাল একনে হরমোন পরিবর্তনের কারণে হয় যেমন-বয়ঃসন্ধি, ঋতুস্রাব, গর্ভাবস্থা, PCOS বা এন্ড্রোজেন হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধির কারনে। অপরদিকে সিস্টিক একনে হয় ত্বকের গভীর স্তরে জমে থাকা সেবাম,মৃত কোষ ও ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশনের কারনে।
হরমোনাল একনে দেখতে গোটা, শক্ত ,পুঁজযুক্ত দানা বা ছোট আকারের লাল ফুসকুড়ির মতো যা ধরলে বেশি ব্যাথা অনুভূত হয় না। এটি মুখের পাশাপাশি চিবুক, গাল ও গলার কাছেও হয়। অপরদিকে সিস্টিক একনে দেখতে বড়, লাল ও ফোলা আকারের পুঁজ যুক্ত ব্রণ, যা স্পর্শ করলে ত্বকের নিচে দানাদার অনুভূত হয় ও ধরলে প্রচণ্ড ব্যথা লাগে। এটি মুখ ছাড়াও বুক, পিঠ ও কাঁধেও হয়।
(হরমোনাল ও সিস্টিক) এই উভয় টাইপের একনে সারাতে মেডিকেটেড ট্রিটমেন্ট হিসেবে অ্যান্টিবায়োটিক অথবা স্টেরয়েড জাতীয় মেডিসিন প্রেসক্রাইব করা হয়। তবে সিস্টিক একনে সারাতে ডার্মাটোলজিস্টের তত্ত্বাবধানে দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা লাগে।
হরমোনাল একনে সাধারণত মুখের নিচের অংশ- চিবুক, গাল ও গলায় হয়। অপরদিকে সিস্টিক একনে মুখ, পিঠ, বুক ও কাঁধসহ যেকোনো জায়গায় হতে পারে।
হরমোনাল একনে থেকে সিস্টিক একনে হতে পারে। হরমোনাল একনের তুলনায় সিস্টিক একনে বেশি দীর্ঘস্থায়ী হয় ও ত্বকে গভীর দাগ রেখে যায়।
হরমোনাল একনে এবং সিস্টিক একনের সমাধান
রেগুলার লাইফ স্টাইলে নিয়মিত,বেসিক স্কিন কেয়ার রুটিন ভালোভাবে ফলো করে চলতে হবে। আর খেয়াল রাখতে হবে স্কিন কেয়ারে ব্যবহৃত সকল প্রোডাক্ট যেন নন কমোডোজেনিক হয়। এছাড়াও স্কিন কেয়ার প্রোডাক্টে ইনক্লুড করূন সালিসাইলিক অ্যাসিড যুক্ত ক্লিনজার,নিয়াসিনামাইড সিরাম,বেঞ্জয়েল পারঅক্সাইড,সানস্ক্রিন SPF 30+ ও রেটিনয়েড। স্কিন কেয়ার রুটিন ফলো করার পাশাপাশি খাদ্যাভাস ও স্ট্রেস ম্যানেজমেন্টেও মনোযোগ দিতে হবে। খাবার তালিকায় ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড (মাছ, বাদাম) অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার রাখুন ও অতিরিক্ত সুগার যুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন।পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন। স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট করতে রেগুলার যোগব্যায়াম ও মেডিটেশন করূন।
কারণ মেডিটেশন, কর্টিসল হরমোন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। ত্বকের একনে পপ করা থেকে বিরত থাকুন। উইকলি স্কিন কেয়ারে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল ইনগ্রেডিয়েন্ট যেমন-গ্রিন টি এক্সট্রাক্ট ও টি ট্রি অয়েল ব্যবহার করে ফেসপ্যাক তৈরি করে লাগাতে পারেন অথবা ক্লে বেইজড মাস্ক ব্যবহার করতে পারেন। সাধারণত হরমোনাল একনে কিছুদিনের মধ্যেই ঠিক হয়ে যায় কিন্তু সিস্টিক একনের ক্ষেত্রে ডার্মাটলিস্টের পরামর্শ অনুযায়ী – এন্টিবায়োটিক,আইসোট্রেটিনয়িন,কর্টিকোস্টেরয়েড ইনজেকশন,এজেলাইক অ্যাসিড ও ক্লিনডামাইসিন জেল ব্যবহার করা যেতে পারে।
আশা করি,যারা দীর্ঘদিন ধরে একনের প্রবলেমে ভুগছেন ও একনের টাইপ কী ? তা আইডেন্টিফাই করতে পারছেন না! সঠিক ট্রিটমেন্ট ও নিতে পারছেন না। তারা আজকের ফিচারের মাধ্যমে উপকৃত হবেন। স্কিন কেয়ারে ব্যবহৃত অথেনটিক ও অরিজিনাল প্রোডাক্ট পারচেজ করতে ভিজিট করুন Hretu’s World এর ওয়েবসাইটে।