চুলের যত্ন

কালার করা চুলের যত্ন: স্টেপ বাই স্টেপ টিপস।

Colored hair care

আমাদের মধ্যে অধিকাংশ মানুষই মূলত চুলের স্টাইল পরিবর্তনের জন্য হেয়ার কালার করে। বর্তমানে টিনেজ‌ থেকে শুরু করে প্রায় সকল‌ বয়সের মানুষেরা স্টাইল করতে কিংবা পাকা চুল কভার করতে বিভিন্ন কালারের হেয়ার কালার শেইড যেমন: লাল,পার্পল, পিঙ্ক, মেরুন, গোল্ডেন, নীল,ক্যারামেল, ব্লন্ডি, ব্রাউন, অম্ব্রে, গ্রেই ইত্যাদি শেইড চুলে এপ্লাই করে। এছাড়াও চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে হেয়ার কালার বা হেয়ার হাইলাইট করার ট্রেন্ড আগে থেকেই কিন্তু প্রচলিত ছিল।

হেয়ার কালার করার পর চুল দেখতে অনেক সুন্দর লাগে , কিন্তু হেয়ার কালারের পর চুলকে ঠিকমতো মেনটেইন করা অনেক কঠিন। হেয়ার কালারের পর চুল রুক্ষ হয়ে যায় ও চুল ঝরে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। কারণ ,হেয়ার কালারে রয়েছে ক্ষতিকর অ্যামোনিয়া যা এক ধরনের ক্যামিকেল ব্লিচিং এজেন্ট এবং এটি চুলকে কালার করার সঙ্গে সঙ্গে রুক্ষ ও নিষ্প্রাণ করে তোলে, চুলের গোড়া নরম করে ফেলে ফলে চুল পড়ার হারও বেড়ে যায়।তাই হেয়ার কালারের পর প্রয়োজন আলাদা হেয়ার রুটিনের।

আজকের ফিচারে আমরা জানবো, হেয়ার কালার করার পর কিভাবে চুলের যত্ন নিতে হবে।

কালার করা চুলের জন্য কেন আলাদা যত্নের প্রয়োজন।

হেয়ার কালারে ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ থাকে যেমন- অ্যামোনিয়া, পার অক্সাইড, রেজোরসিনল ইত্যাদি‌। এগুলো চুলকে শুষ্ক, রুক্ষ এবং ক্ষতিগ্রস্ত করে। চুল কালার করার ফলে চুলের অভ্যন্তরীণ কিউটিকল ওপেন হয়ে চুল কালার হয় এতে, চুলের প্রাকৃতিক সেবায় বা তেল চুলের গোড়ায় পৌঁছাতে পারে না‌ এবং চুল হয়ে ওঠে রুক্ষ ও শুষ্ক।

hair color

তাই চুলের প্রোপার যত্ন নিতে হবে, নয়তো আপনার চুলের কালার দ্রুত নষ্ট হয়ে যাবে ও হেয়ার ড্রাই অ্যান্ড ফ্রিজি হয়ে যাবে। তাই নরমাল চুলের কেয়ার এর তুলনায় কালার করা চুলের যত্ন আলাদাভাবে নিতে হয়। কালার করা চুলের যত্নে আলাদা হেয়ার প্রোডাক্টস আর এক্সট্রা কেয়ার প্রয়োজন।

চলুন জেনে নেওয়া যাক, কালার করা চুলের হেয়ার রুটিন সম্পর্কে।

কালার চুলের যত্নে সঠিক শ্যাম্পু সিলেকশন:

অনেকেই আছে যারা ‘শ্যাম্পু হলেই হল’ এমন অবস্থা , হাতের নাগালে যে ব্র্যান্ডের শ্যাম্পু পাচ্ছে সেটাই চুলে ব্যবহার করছে ,কালার করা হেয়ারের ক্ষেত্রে এমন করলে কিন্তু হবে না।কালার করা চুলের জন্য আলাদা শ্যাম্পু আছে যেগুলো চুলের কালার দ্রুত নষ্ট হওয়া থেকে রক্ষা করবে এবং চুলকে রাখবে সফট ও সিল্কি। তাই শ্যাম্পু সিলেকশনে দিতে হবে এক্সট্রা অ্যাটেনশন। কালার করা চুলের যত্নে আপনারা ব্যবহার করতে পারেন এই শ্যাম্পু গুলো-

শ্যাম্পুর পর কন্ডিশনার ব্যবহার:

শ্যাম্পু মেইনলি চুল ও স্ক্যাল্পে জমে থাকা ধুলা,ময়লা, তেল ও অন্যান্য পলিউশন রিমুভ করে। পাশাপাশি এটি চুলের কিছুটা প্রাকৃতিক তেল ও রিমুভ করে ফেলে তাই চুল শুষ্ক ও রুক্ষ হয়ে যায়। তাই শ্যাম্পুর পরে চুলে কন্ডিশনার ব্যবহার করতে হয়। কারণ কন্ডিশনার চুলের মশ্চারাইজড লেভেল লক করে, চুলের শুষ্কতা দূর করে চুলকে সফট ও সিল্কি করে। এছাড়াও কন্ডিশনার ব্যবহারের ফলে চুলে সহজেই জট লাগে না এবং চুল ঝরঝরে ও জোট মুক্ত থাকে।

সূর্যের ক্ষতিকারক ইউভি রশ্মির কারণে চুলের কালার দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়।তাই কালার করা চুলের যত্নে এমন কন্ডিশনার ব্যবহার করতে হবে যেগুলো -সূর্যের ক্ষতিকারক রশ্মি থেকে চুলকে রক্ষা করে । কালার করা চুলের যত্নে শ্যাম্পুর পর ব্যবহার করতে হবে কালার ট্রিটেড কন্ডিশনার যেমন-

ইত্যাদি, এতে চুল থাকবে ঝলমলে ও সুন্দর।

হেয়ার অয়েল ম্যাসাজ:

অর্গানিক বা ন্যাচারাল ওয়েল সব ধরনের চুলের জন্য বেস্ট । কারণ এটি ড্যামেজ ও কালার করা চুলকে মশ্চারাইজড রাখবে ও কালার লক করবে। কালার করা চুলের যত্নে ব্যবহার করতে হবে- আর্গন অয়েল, অলিভ অয়েল, কোকোনাট অয়েল । এছাড়াও ব্যবহার করতে পারেন প্যারাবেন ফ্রি ,পারফিউম ফ্রি ও লাইট ওয়েটের-ক্যাস্টর অয়েল ও গ্রেপ সিড অয়েল। যেকোনো অর্গানিক অয়েল বিশেষ করে কোকোনাট অয়েল চুলের ড্রাইনেস কমিয়ে চুলকে হাইড্রেট ও নারিশড করে। হেয়ার গ্রোথ করে, চুলের ড্যামেজড রিপেয়ার করে এবং চুলের কালার নষ্ট হতে দেয় না৷ তাই কালার করা চুলে নিয়মিত অর্গানিক অয়েল ম্যাসাজ করতে হবে। কালার করা চুলের যত্নে বেস্ট অয়েল-

হেয়ার মাস্ক:

হেয়ার মাস্ক চুলকে গভীর থেকে পুষ্টি যোগায় ও কালার প্রটেক্ট করে। তেল, শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার এর পাশাপাশি হেয়ার মাস্ক চুলে দেয় এক্সট্রা পুষ্টি । চুলের কন্ডিশন অনুযায়ী এটি সপ্তাহে একবার বা দুইবার ব্যবহার করলে হেয়ার গ্রোথ বৃদ্ধি পায় এবং চুল স্বাস্থ্যজ্জ্বল ও হেলদি হয়।

হেয়ার মাস্ক –

হেয়ার মাস্ক কিভাবে ব্যবহার করবেন?

hair care

অনেকেই হেয়ার মাস্ক ব্যবহারের সঠিক নিয়ম জানে না, চলুন জেনে নেই হেয়ার মাস্ক ব্যবহারের সঠিক পদ্ধতি সম্পর্কে। হেয়ার মাস্ক চুলের কন্ডিশন বুঝে সপ্তাহে একবার অথবা দুইবার ব্যবহার করা যায়। হেয়ার মাস্ক ব্যবহারের নিয়ম-

চুলে শ্যাম্পু করার পর চুলের অতিরিক্ত পানি তোয়ালে দিয়ে মুছে নিতে হবে , এরপর হাতের তালুতে পরিমাণ মতো হেয়ার মাস্ক নিয়ে চুলের মধ্যবর্তী লেভেল থেকে শেষভাগ পর্যন্ত লাগিয়ে নিন। হালকাভাবে চুল ম্যাসাজ করে ১৫-২০ মিনিট পর চুল স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

এবার আপনাদের সাথে আমি শেয়ার করব, ঘরোয়া কিছু হেয়ার প্যাক সম্পর্কে , যেটি আপনার চুলের গ্রোথ বৃদ্ধির সাথে সাথে চুলকে রাখবে হেলদি। চলুন জেনে নেই-

ঘরোয়া হেয়ার প্যাক

অলিভ অয়েল ও ডিমের হেয়ার মাস্ক: একটি পাত্রে ২ চামচ অলিভ অয়েল ও একটি ডিম মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করে নিন। এবার এটি চুলের গোড়া থেকে শেষভাগ পর্যন্ত লাগিয়ে নিন।১৫-২০ মিনিট পর এটি হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি চুলকে মশ্চারাইজড ও উজ্জল করবে।

অ্যাভোকেডো ও নারিকেল তেলের হেয়ার মাস্ক: একটি পাত্রে অর্ধেক পরিমাণ আ্যভোকেডো ম্যাস করে এতে দুই চামচ নারিকেল তেল মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন ,এবার এটি সম্পূর্ণ চুলে ১৫ – ২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন।

হেয়ার এসেন্স

হেয়ার এসেন্স চুলকে সফট, ম্যানেজেবল ও শাইনি রাখে।এছাড়াও এটি কালারড চুলের কালার দীর্ঘস্থায়ী রাখে ও চুলের গোড়া মজবুত করে হেয়ার গ্রোথে সাহায্য করে। চুলকে ম্যানেজেবল রাখতে হেয়ার কেয়ারে হেয়ার এসেন্স খুবই উপকারী। হেয়ার এসেন্স এর ক্ষেত্রে- আরগান অয়েল যুক্ত এসেন্স হতে পারে আপনার চুলের বেস্ট অপশন। কারণ আরগান অয়েল চুলের ব্রেকেজ কমিয়ে চুলে কন্ডিশনার হিসেবে কাজ করে।

সঠিক হেয়ার কম্ব

চুলের জোট ছারাতে ও আঁচড়াতে ব্যবহার করুন-মোটা দাঁতের কাঠের চিরুনি , প্যাডল ব্রাশ, সফ্ট ব্রিস্টল ব্রাশ অথবা সিলিকনের হালকা ওয়েটের হেয়ার কম্ব । শক্ত ধাচের চিরুনি ব্যবহারে চুলের ব্রেকেজ বাড়ে চুল ড্যামেজ হয় ও হেয়ার কালার ফেইড করে ফেলে । মনে রাখবেন ভেজা অবস্থায় চুল দুর্বল থাকে,তাই এই সময় চুল টেনে জট ছাড়ানোর চেষ্টা করবেন না । চুল আঁচড়ানো পূর্বে চুলে হালকা ময়শ্চারাইজার কিংবা হেয়ার সিরাম ব্যবহার করে হালকাভাবে জোট ছাড়াবেন। এতে চুলের ব্রেকেজ কম হবে।

কালার করা চুলের যত্নে উপরের স্টেপ গুলো নিয়মিত ফলো করলে আপনার চুল একদমই ড্যামেজ হবে না। সেই সাথে পাবেন স্বাস্থ্যোজ্জ্বল, হেলদি ও শাইনি চুল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *