চুলের যত্ন

চুল পাতলা হওয়ার কারণ ও প্রতিকার জানেন কি?

চুল পাতলা হওয়ার কারণ

একসময় আমার মাথাভর্তি অনেক চুল ছিল, কিন্তু এখন চুল পড়ে যাচ্ছে ও পাতলা হয়ে যাচ্ছে। আপনিও কি এই সমস্যায় ভুগছেন? বর্তমানে চুল পড়ার এই সমস্যাটি ছেলে-মেয়ে উভয়ের ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে। মানসিক চাপ, পুষ্টির অভাব, অতিরিক্ত খুশকির সমস্যাসহ নানা কারণে চুলের স্বাভাবিক বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে , চুল ড্যামেজ হচ্ছে ও পড়ে যাচ্ছে যা আমাদের সৌন্দর্য ও আত্মবিশ্বাসে প্রভাব ফেলছে। তাই সময় থাকতে, নিতে হবে চুলের সঠিক যত্ন। চলুন জেনে নেই, চুল পাতলা হওয়ার কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে।

চুল পাতলা হওয়ার কারণ

hair care

মানসিক চাপ:

গবেষণায় দেখা গেছে,দুশ্চিন্তা আর মানসিক চাপের প্রভাবে স্নায়ুবিক ও হজম প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটে। এতে দেহের ভিতরে ভারসাম্যহীনতার সৃষ্টি হয়। যে কারণে পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার গ্ৰহন করার পরও দেহে পর্যাপ্ত পুষ্টি সরবারহ হয় না । এছাড়াও মানসিক চাপের কারনে শরীরে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং এই অতিরিক্ত তাপমাত্রার ফলে চুল পড়ে যেতে শুরু করে।

সঠিক খাদ্যাভ্যাস:

খাবার ডায়েটে পুষ্টিকর খাবার না রাখলে শরীর ও চুলে পুষ্টির ঘাটতি হয়। বিশেষ করে -বায়োটিন, জিংক এবং ভিটামিন ডি এর ঘাটতি থাকলে চুল পড়ার সমস্যা বেশি হয়। এছাড়াও ভিটামিন ডি এর অভাবে অ্যালোপেসিয়া হয়। তাই রেগুলার খাবার ডায়েটে পুষ্টিকর খাবার রাখতে হবে।

খুশকি:

চুল পড়ার অন্যতম কারণ হল অতিরিক্ত খুশকির সমস্যা। কারন, চুলের গোড়ায় অতিরিক্ত খুশকি জমা হলে মাথার ত্বকের ক্ষতি হয়। খুশকির প্রভাবে মাথায় চুলকানি তৈরি হয় এবং অতিরিক্ত চুলকানোর কারনে চুলের স্ট্যান্ড দুর্বল হয়ে ঝরে পড়ে।

পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব:

পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম না হলে, এটি শরীরে হরমোনের ওপর প্রভাব ফেলে। এই হরমোনাল ইমব্যালেন্সডের কারনে চুল পড়া বৃদ্ধি পায় ও চুল পাতলা হয়ে যায়। তাই রেগুলার ৮-৯ ঘন্টা পর্যন্ত ঘুমানো উচিত। কারন, পর্যাপ্ত ঘুম শরীরকে স্বাস্থ্যকর ও সতেজ রাখতে সাহায্য করে।

পরিবেশগত দূষন:

বাতাসে থাকা ধুলিকনা,ধোঁয়া‌ ও বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ মাথার স্কেল্পে জমে খুশকি তৈরি করে। এছাড়াও চুলে বিষাক্ত পানি ব্যবহার করলে ,এটি চুলের আদ্রতা নষ্ট করে ও ড্যামেজড করে ফেলে।

ঔষুধের প্রভাবে চুল পড়া:

বিভিন্ন হরমোনাল ঔষুধ যেমন- জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি,থাইরয়েড চিকিৎসায় ব্যবহৃত ঔষুধ , উচ্চমাত্রায় ভিটামিন এ এর সাপ্লিমেন্ট, ক্যান্সার ও কেমোথেরাপির ঔষুধ ইত্যাদি সেবনে চুল পড়া সমস্যা তৈরি হয়। এছাড়াও ঔষধের ডোজ বেশি,হয়ে গেলে এর প্রভাবে চুল পড়ার সমস্যা বৃদ্ধি পায়।

কেমিকেল ট্রিটমেন্ট:

আমরা চুলের স্টাইল করতে পার্লারে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল হেয়ার ট্রিটমেন্ট, হেয়ার কালার করা ও হিট মেশিন দিয়ে চুল স্ট্রেট বা কার্লি করি। এসব ব্যবহারের ফলে চুল ড্যামেজ হয় ও চুল পড়ে পাতলা হয়ে যায়।

প্রতিকার

  • চুলে ঘন ঘন শ্যাম্পু করবেন না, সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার শ্যাম্পু করলেই যথেষ্ট। চুলের যত্নে এন্টি ড্যানড্রাফ অথবা অ্যান্টি হেয়ার ফল জাতীয় শ্যাম্পু ব্যবহার করুন।
  • চুলের যত্ন নিতে সপ্তাহে দুই দিন প্রাকৃতিক বা অর্গানিক তেল ব্যবহার করুন। নারিকেল তেল ক্যাস্টর অয়েল ও অনিয়ন অয়েল চুল পড়া কমাতে খুবই কার্যকর।
  • নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার ও পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি গ্ৰহন করূন। আর রেগুলার লাইফস্টাইলে ৮ – ৯ ঘণ্টা ঘুমের অভ্যাস করে তুলুন।
  • সব সময় স্ট্রেস মুক্ত থাকতে চেষ্টা করুন। প্রয়োজনে মেডিটেশন ও ব্যায়ামের অভ্যাস করে তুলেন।
  • চুলে অতিরিক্ত প্রোডাক্ট ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।
  • চুলের অবস্থা খুব বেশি খারাপ হলে বাইরের কেমিক্যাল ট্রিটমেন্ট না নিয়ে ঘরোয়া উপাদানে তৈরি হেয়ার প্যাক ব্যবহার করুন।

চুলে নারীর সৌন্দর্য ফুটে ওঠে। কেশবতী নারীর কেশভর্তি চুলের মায়ায় সবাই মোহিত হয়। তাই চুলকে অবহেলা করলে চলবে না। তাই রেগুলার স্বাস্থ্যকর রুটিন ফলো করে চলুন ও যথাযথ উপায়ে চুলের যত্ন নিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *