ত্বকের যত্ন

ব্ল্যাকহেডস কি? কেন হয়? ও দূর করার উপায় সমূহ।

Ways to remove blackheads

বাইরের দূষণ , ধুলো বালি এবং নিয়মিত স্কিন কেয়ার রুটিন সঠিকভাবে মেইন্টেইন করে না চললে নাকের দুপাশে, নাকের উপর, ঠোটের চারপাশে,গালে ও থুতনিতে কালো কালো দানার মতো স্পট অর্থাৎ ব্ল্যাকহেডস হয়ে যায়।

স্কিন প্রবলেম এর মধ্যে ব্ল্যাকহেডস খুবই কমন। বয়স বাড়ার সাথে সাথে ব্ল্যাকহেডস এর সমস্যা বেড়ে যায়। এই সমস্যাটা টিনেজ – সকল বয়সীদের মধ্যে কমন প্রবলেম। ছেলে এবং মেয়ে উভয়ের ক্ষেত্রেই নাকের উপর ও দু’পাশে দেখা যায় ছোট ছোট কালো, ব্ল্যাকহেডস। নিজেকে পরিপাটি রাখতে যতই ফিটফাট ওয়েল ড্রেসআপ করেন না কেন, যদি নাকের উপর, ঠোঁটের চারপাশে, থুতনিতে ও নাকের দু’পাশে ভিজিবল ব্ল্যাকহেডস দেখা যায় তাহলে আপনার লুক এবং কনফিডেন্স দুটোই কমে যায়। তাই এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে,আজ আমরা জানবো ব্ল্যাকহেডস দূর করার উপায় সম্পর্কে।

ব্ল্যাকহেডস কি?

আমাদের ত্বকের উন্মুক্ত লোমছিদ্রে তেলগ্রন্থি থেকে নিঃসৃত তেল বা সেবাম, মৃত কোষ ও ধুলোময়লা জমতে জমতে ব্ল্যাকহেডস হয় এবং এটি বাতাসের সংস্পর্শে এসে অক্সিডাইজ়ড হয়ে ব্ল্যাকহেডসের রং কালচে হয়ে যায়।

ব্ল্যাকহেডস কেন হয়?

blackheads

নিয়মিত ত্বকের যত্ন না নিলে, পোরসে ধুলোবালি, ময়লা ও তেল একত্রে জমতে থাকে এবং পোরস ক্লগ হয়ে যায় ফলে পোরসগুলোতে সঠিক পরিমাণে অক্সিজেন পায় না এবং ওই অংশে ব্ল্যাকহেডস হয়ে যায়। বিশেষ করে আমাদের ফেইসের টি-জোনে তেল্গ্রন্থিগুলো মুখের অন্যান্য অংশের তুলনায় বেশি সক্রিয় থাকে ফলে, সেবাম বা তেল প্রোডাকশন ওই অংশে বেশি হয় ও তেল নিঃসরণ বেশি হওয়ায় সেখানে ময়লা জমে ব্ল্যাকহেডস,হোয়াইটহেডস এবং ব্রণের মত সমস্যা তৈরি হয়। এছাড়াও ব্ল্যাকহেডস হওয়ার আরো কিছু কারণ রয়েছে, নিচে কারণ গুলো বিস্তারিত দেওয়া হল-

সেবাম নিঃসরণ: ত্বকের সেবাম গ্রন্থি থেকে অতিরিক্ত তেল উৎপন্ন হলে এটি পোরস ক্লগ করে দেয়।

ডেড সেলস জমা হওয়া: ত্বকের বাইরের অংশে জমতে থাকে মৃত কোষ যা পোরস ক্লগ করে ব্ল্যাকহেডস সৃষ্টি করে।

হরমোনাল ইম-ব্যালেন্স: বিশেষ করে টিনেজে ও প্রেগনেন্ট অবস্থায় হরমোনাল পরিবর্তনের কারণে ত্বকে সেবাম গ্রন্থি থেকে তেল নিঃসরণ বৃদ্ধি পায়, যা ব্ল্যাকহেডসের অন্যতম কারণ।

ডেইলি স্কিন কেয়ার রুটিন ফলো না করা: ত্বক নিয়মিত পরিষ্কার না করলে তেল, ময়লা এবং মেকাপের অবশিষ্ট ভগ্না্ংশ পোরস ক্লগ করে যা ব্ল্যাকহেডস তৈরি করে।

খাদ্যাভ্যাস: খাদ্য তালিকায় চর্বিযুক্ত ফ্যাটি খাবার এবং প্রসেসড ফুড,জাঙ্ক ফুড ইত্যাদি চিনিযুক্ত খাবার ব্ল্যাকহেডস হওয়ার কারণ।

মেইন কথা ,স্কিন পরিষ্কার না রাখলে ও বেসিক স্কিন কেয়ার রুটিন নিয়মিত মেইনটেইন না করলে স্কিনের এই সমস্যাটি আরও বেড়ে যায়। বিশেষ করে অয়েলি স্কিনে এই সমস্যাটা কমন।
হঠাৎ করে কোন ফাংশন বা অকেশনে এটেন্ড করতে ইন্সটেন্টলি ব্ল্যাকহেডসস রিমুভ করতে ব্যবহার করতে পারেন নোস পোর স্ট্রিপ।

নোস পোর স্ট্রিপ- এটি নোস সেইপে তৈরী তাই সহজেই নোস এরিয়ায় এটা লাগিয়ে নিতে পারবেন। লাগানোর দুই তিন মিনিট পর ধীরে ধীরে এটি উঠিয়ে ফেলবেন। নোস পোর স্ট্রিপ ব্যবহার করে কয়েক মিনিটে ইনস্ট্যান্টলি ব্ল্যাকহেডস রিমুভ করতে পারবেন।

এছাড়াও ব্ল্যাকহেডস দূর করার জন্য রয়েছে ঘরোয়া সমাধান চলুন জেনে নিই,

ব্ল্যাকহেডস দূর করার উপায়:

remove blackheads

ত্বক নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে হবে- নিয়মিত ত্বকের যত্নে ত্বক ক্লিন রাখতে মাইন্ড ক্লিনজার দিয়ে ত্বক পরিষ্কার করতে হবে। এক্ষেত্রে যাদের অয়েলি স্কিন ও ব্ল্যাকহেডসের প্রবলেম রয়েছে তারা স্কিনকে ডিপলি ক্লিন করতে এমন ফেসওয়াশ ইউজ করুন যেগুলোতে এক্টিভেটেড চারকোল, আ্যলোভেরা এক্সট্রাক্ট‌ ও টি ট্রি অয়েল আছে।

ফেইস মাস্ক ব্যবহার করা – ত্বকের কন্ডিশন বুঝে সপ্তাহে একবার অথবা দুইবার ফেইস মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। বিশেষ করে যারা স্কিন নিয়ে অনেক বেশি পজিটিভ তারা নির্দ্বিধায়- দি বডি শপ সপের এই চারকোল মাস্কটি ব্যবহার করতে পারেন-
The Body Shop Himalayan Charcoal Purifying Glow MaskSt. Ives Gentle Smoothing Oatmeal Face Scrub & Mask
এছাড়াও ব্যবহার করতে পারেন মাড মাস্ক- মাড মাস্ক ব্ল্যাকহেডস রিমুভ করতে অনেক কার্যকরী।এটি ত্বকের তেল এবং ময়লা শোষণ করে ব্ল্যাকহেডস দূর করে।

অ্যাকটিভেটেড চারকোল মাস্ক- এই মাস্কটি ত্বকের গভীরে প্রবেশ করে ব্ল্যাকহেডস এবং অন্যান্য ময়লা দূর করতে অনেক কার্যকরী।

ডিমের সাদা অংশ মাস্ক- একটি বাটিতে একটি ডিমের সাদা অংশ এবং ২ চামচ মধু মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন , এবার মিশ্রণটি ত্বকে ১০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। এই‌ ‌মাস্ক ব্ল্যাকহেডস দূর করে ও ত্বককে ডিপলি ক্লিন করে ।

হট ওয়াটার স্ট্রিম- ত্বকের যত্নে হট ওয়াটার স্ট্রিম খুবই জনপ্রিয় একটি পদ্ধতি। এটি ত্বককে ডিপলি ক্লিন করে। প্রথমেই একটি তলানি যুক্ত পাত্রে পরিষ্কার গরম পানি নিয়ে ৫ মিনিট ভাপ নিন। এরপর একটি পাত্রে লেবুর রস, মধু ও চিনি একত্রে মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন , এবার মিশ্রণটি মুখে আলতোভাবে ঘষে ঘষে ম্যাসাজ করুন। এরপর পরিষ্কার ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে গরম পানির ভাপ নিলে দ্রুত ব্ল্যাকহেডস রিমুভ হবে।

আ্যলোভেরা- অ্যালোভেরা ত্বকের যত্নে খুবই উপকারী একটি ভেষজ। এটি আমাদের ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখে এবং ব্ল্যাকহেডস দূর করতেও কাজ করে। এক্ষেত্রে প্রথমেই অ্যালোভেরার পাতার ভেতরের শাঁসটুকু বের করে নিতে হবে। এবার এটি পেস্ট করে যেখানে ব্ল্যাকহেডস আছে, সেখানে ভালোভাবে লাগাতে হবে। শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। এরপর পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। এভাবে প্রতিদিন আ্যলোভেরা ব্যবহার করলে ব্ল্যাকহেডস দূর হবে, পাশাপাশি ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা দূর হবে।

বেকিং সোডা- বেকিং সোডা এক্সফোলিয়েটর হিসেবে অনেক ভালো কাজ করে। এটি ত্বকের মরা চামড়া রিমুভ করে, ত্বক ক্লিন রাখে । এক্ষেত্রে একটি পাত্রে এক চামচ বেকিং সোডা আর ২ চামচ পানি দিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন। এবার এটি ত্বকে লাগিয়ে ২ মিনিট হালকা ম্যাসাজ করে ধুয়ে ফেলুন। এটি স্কিনের ব্যাকটেরিয়া দূর করে ও‌ ব্ল্যাকহেডস রিমুভ করতে সাহায্য করে।

আমন্ড ও গোলাপ জলের স্ক্রাব- একটি বাটিতে ২ চামচ আমন্ড পাউডার ও ১ চামচ গোলাপজল নিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। এবার এই পেস্টটি পাঁচ মিনিট ফুল ফেইসে ধীরে ধীরে মাসাজ করুন । এবার এটি ৩০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। এটি ব্যবহারে ব্ল্যাকহেডস রিমুভ হয় ও ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়।

টুথপেস্ট ও লবণের স্ক্রাব- একটি পাত্রে ২ চা চামচ লবণ ও ১ চা চামচ টুথপেষ্ট একত্রে মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করে নিন। এবার মিশ্রণটি যেখানে ব্ল্যাকহেডস আছে ওই অংশে পুরু করে লাগিয়ে রাখুন। এবার ৫ মিনিট ম্যাসাজ করে হালকা গরম পানি ও মাইল্ড ফেসওয়াশ দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই স্ক্রাব ব্যবহারে ত্বক গভীর থেকে পরিষ্কার হবে এবং ব্ল্যাকহেডস দূর হবে।

ওটস ও টক দইয়ের স্ক্রাব- একটি বাটিতে ২ টেবিল চামচ ওটস গুঁড়া , ২ টেবিল চামচ টক দই , ১ টেবিল চামচ লেবুর রস ও ১ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল ভালো করে মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন। পেস্টটি তৈরি হলে ত্বকে হালকা ভাবে ম্যাসাজ করে লাগান এবার ২০ মিনিট পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই স্ক্রাবটি ব্ল্যাকহেডস দূর করতে বেশ কার্যকর।

গুরুত্বপূর্ণ টিপস

নিত্যদিনে আপনার ব্যবহার করা সকল প্রকারের সামগ্রী যথা- বালিশের কভার ,চিরুনি, তোয়ালে , বেড শিট প্রতি সপ্তাহে চেঞ্জ করুন অথবা পরিষ্কার রাখুন। এতে ব্ল্যাকহেডস, পিম্পল, খুশকি ইত্যাদি সমস্যা থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি পাবেন।

যে কোন প্রোডাক্ট বা ঘরোয়া টোটকা এপ্লাই করা কিংবা ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই প্যাচ টেস্ট করে নিবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *