ত্বকের যত্ন

ফেসিয়াল করার উপকারিতা: ত্বকের ধরন ও বয়স অনুযায়ী ফেসিয়াল।

Benefits of having a facial

নিজেকে সুন্দর ও আকর্ষণীয় করে তুলতে নারী-পুরুষ উভয়েই বিভিন্ন ধরনের বিউটি ট্রিটমেন্ট অনুসরণ করে থাকি‌। অনেকেই মনে করি,ঘরোয়া পদ্ধতিতে সব সময় ত্বক পরিষ্কার রাখি, তাহলে ফেসিয়ালের কি দরকার?

জি হ্যাঁ ঘরোয়া পদ্ধতিতে ত্বকের যত্নের পাশাপাশি প্রফেশনাল ফেসিয়াল ট্রিটমেন্টের দরকার আছে। ঘরোয়া পদ্ধতিতে নিয়মিত ত্বক পরিষ্কার করলেও ত্বকের ভেতরের ময়লা ভেতর থেকে পরিষ্কার হয় না, এই কারণে দরকার হয় পেশাগত ফেসিয়ালের। নিয়মিত ত্বকের যত্ন করলে বয়স বাড়ার সাথে সাথে তার ইতিবাচক ফল পাওয়া যায়। এক কথায় ত্বক সুন্দর ও সুস্থ রাখার জন্য নিয়মিত ফেসিয়াল করা প্রয়োজন।

চলুন জেনে নেই ফেসিয়াল কি এবং ফেসিয়াল করলে ত্বকে কি কি বেনিফিট পাওয়া যায়।

ফেসিয়াল কি?

মুখের সৌন্দর্য বাড়াতে সুন্দর ,সতেজ এবং স্বাস্থ্যজ্জ্বল, টানটান ত্বক পেতে ফেসিয়াল করা হয়। ফেসিয়াল হচ্ছে একটি বিউটি কেয়ার প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ায় রয়েছে বিভিন্ন ধাপ যেমন- ক্লিনজিং, স্ক্রাবিং, ফেস ম্যাসাজ, ফেসপ্যাক ইত্যাদি এবং আরো অনেক প্রক্রিয়া আছে ফেসিয়াল করার।

ফেসিয়াল করা হয় ত্বকের ধরন , বয়স এবং আপনি ত্বকে কিরকম প্রভাব চাইছেন এগুলোর উপরে নির্ভর করে করা হয়। অর্থাৎ ফেসিয়াল আমাদের ত্বকে একটি সুন্দর , টানটান,সতেজ ও স্বাস্থ্যজ্জ্বল আভা প্রদান করে।

ফেসিয়াল মাসে একবার অথবা ত্বকের চাহিদা অনুযায়ী মাসে দুইবার অর্থাৎ ১৫ দিন অন্তর একবার করা ভালো।

ফেসিয়াল করলে ত্বকে কি কি বেনিফিট পাওয়া যায়?

Girls Benefits with facial

১. ব্রণের দাগ কমাতে সাহায্য করে
২. ত্বকে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে
৩. ব্ল্যাক হেডস দূর করে
৪. ত্বকের আদ্রতা বজায় রাখে
৫. ত্বককে নরম ও মসৃণ রাখে।
৬. বলিরেখা কমায়।
৭. ত্বক টানটান রাখে।

আমরা বেশিরভাগ মানুষই জানি না নির্দিষ্ট কোন ত্বকের জন্য কোন ফেসিয়ালটা গুরুত্বপূর্ণ। ত্বকের ধরন এবং চাহিদা না বুঝেই ফেসিয়াল করার ফলে ত্বকে ভালো ফলাফল পাওয়া যায় না। তাই ত্বকের ধরন ও বয়স অনুযায়ী ফেসিয়াল করতে হবে ফলস্বরূপ ত্বক হবে সুস্থ, পরিছন্ন ও টানটান।

তবে চলুন জেনে নেই ফেসিয়ালের বিভিন্ন ধরণ ও কোন ধরনের ত্বকে কোন ধরনের ফেসিয়াল প্রয়োজন সেই সম্পর্কে।

বলিরেখা দূর করতে ,আ্যন্টি রিংকেল ফেসিয়াল:

যাদের ত্বক শুষ্ক, সে ক্ষেত্রে এমন ত্বকে খুব দ্রুত বলিরেখা পড়ার আশঙ্কা থাকে। এছাড়াও শুষ্ক ত্বকে বয়স বাড়ার সাথে সাথে চামড়া কুঁচকে যাওয়া, চামড়ায় ভাজ পরা ও চামড়া ঝুলে যাওয়ার সমস্যা তৈরি হয়। এক্ষেত্রে বলিরেখা প্রতিরোধ করতে অ্যান্টি রিংকেল ফেসিয়াল করলে ত্বকের এসব সমস্যা সমাধান হবে এবং ত্বক হবে টানটান ও তারুণ্যতা ফিরে আসবে।

ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে, ফ্রুট ফেসিয়াল:

ফল হচ্ছে প্রয়োজনীয় ভিটামিনের উৎস। ফল আমাদের ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। বিভিন্ন ফলের ফেসিয়ালকে মূলত ফ্রুট ফেসিয়াল বলা হয়। সব ধরনের ত্বকের জন্য ফ্রুট ফেসিয়াল উপযোগী। কারণ এই ফেসিয়ালে ব্যবহার করা হয় মিক্সড ফ্রুট ক্রিম যা সব ধরনের ত্বকের জন্যই মানানসই।

ফ্রুট ফেসিয়াল করার ফলে ত্বক ভেতর থেকে পরিষ্কার হয় , ত্বক টানটান হয় ও ত্বকে আসে ইনস্ট্যান্ট উজ্জ্বলতা ।

স্কিন টাইটেনিং ফেসিয়াল:

বয়স এবং ওজন বাড়ার সাথে সাথে ত্বক ঝুলে পড়ার সমস্যা তৈরি হয়। ব্যতিক্রম ক্ষেত্রে গর্ভকালীন সময়ে ওজন বাড়ার কারণে ত্বক কুঁচকে যাওয়ার সমস্যা তৈরি হয়। এক্ষেত্রে ত্বকের টানটান ভাব বজায় রাখতে স্কিনৎ টাইটেনিং ফেসিয়াল করা হয়।

ব্রণ নিরাময়ে, স্টিম ফেসিয়াল:

Steam facial
Steam facial

স্টিম ফেসিয়ালে স্টিম নেওয়ার ফলে ত্বকে ঘামের সৃষ্টি হয় এবং ত্বকের আদ্রতা বাড়ে, ত্বকের লোমকূপ প্রসারিত করে ফলে ত্বক ভেতর থেকে সম্পূর্ণরূপে পরিষ্কার হয় এবং ত্বকে ব্রণের সমস্যা কমে যায়। এছাড়াও স্টিম ফেসিয়াল ত্বকের রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়, ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে এবং ব্রণের সমস্যা দূর করে

ত্বককে গ্লোয়িং ও উজ্জ্বল করতে , গোল্ড ফেসিয়াল:

সাধারণত বিশেষ দিনগুলোর জন্য নিজেকে আকর্ষণীয় ও সুন্দর করতে গোল্ড ফেসিয়াল করা হয়। গোল্ড ফেসিয়াল সব ধরনের ত্বকের জন্যই প্রযোজ্য শুধু সেনসিটিভ ত্বকে এই ফেসিয়াল করা যাবে না।

বর্তমানে গোল্ড ফেসিয়াল খুবই জনপ্রিয় এর বেনিফিটের কারণে। গোল্ড ফেসিয়াল ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে, ত্বকের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে, বলিরেখা কমায়, সান টেন ড্যামেজ রিপেয়ার করে, ত্বকের আদ্রতা ঠিক রাখে, ত্বকের জালা ভাব কমায়। বিয়ের কনের জন্য এই ফেসিয়াল করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। এই ফেসিয়াল করার ফলে ত্বকে সুন্দর সোনালী আভা আসে

ত্বকে দীর্ঘস্থায়ী হোয়াইটেনিং আভা পেতে‌ পার্ল ফেসিয়াল:

প্রায় সব ধরনের ত্বকে পার্ল ফেসিয়াল করা যায় কিন্তু সেনসিটিভ ত্বকের ক্ষেত্রে এই ফেসিয়াল করা যাবে না। পার্ল ফেসিয়াল করার ফলে ত্বকে একটা হোয়াইটেনিং আভা আসে যা অনেক দিন পর্যন্ত দীর্ঘস্থায়ী হয়।

ত্বকের অবাঞ্ছিত দাগ কমাতে আ্যলোভেরা ফেসিয়াল:

সব ধরনের ত্বকের জন্য আ্যলোভেরা ফেসিয়াল প্রযোজ্য ,শুধু সেনসিটিভ ত্বকের ক্ষেত্রে এই ফেসিয়াল করা যাবে না । যাদের ত্বকে অবাঞ্চিত দাগ আছে , ব্রণের দাগ ,রোদে পোড়া দাগ ইত্যাদি সেক্ষেত্রে আ্যলোভেরা ফেসিয়াল করলে ত্বকের দাগ কমে যায়। শুষ্ক ত্বকের জন্য এই ফেসিয়াল খুবই উপকারী।

বয়স ভেদে ত্বকে কোন ফেসিয়াল

Different age girls

এবার আমরা জানব বয়স ভেদে ত্বকে কোন ফেসিয়াল করা যায় সে সম্পর্কে।

১৫- ২০ বছর বয়সের ফেসিয়াল:

এই বয়সে ত্বকে তৈলাক্ত ভাব বেশি হয় এবং ত্বকে ব্রণের প্রবণতা বেশি থাকে। তাই এই বয়সে ত্বককে পরিষ্কার রাখা বেশি জরুরি। এক্ষেত্রে এই বয়সীদের জন্য হারবাল ফেসিয়াল উপযুক্ত। কারণ হারবাল ফেসিয়াল করার ফলে ত্বকের মশ্চারাইজিং ব্যালেন্স ঠিক থাকে এবং সব ধরনের ত্বকের জন্য এই ফেসিয়াল প্রযোজ্য এবং ত্বকে কোন ক্ষতিকর ইফেক্ট হয় না। এক্ষেত্রে হানি ফেসিয়াল, কিউকাম্বার ফেসিয়াল, অরেঞ্জ ফেসিয়াল ,আ্যলোভেরা ফেসিয়াল, স্টিম ফেসিয়াল বেছে নিতে পারেন।

২১ – ৩০ বছরের ফেসিয়াল:

২০ বছর বয়সের পর থেকেই প্রায় সবাই ত্বকে ফেসিয়াল কেয়ার করতে পারেন। এক্ষেত্রে ত্বকে ব্রণের সমস্যা না থাকলে পার্ল ফেসিয়াল ,গোল্ড ফেসিয়াল, অ্যান্টি রিংকেল ফেসিয়াল, স্কিন টাইটেনিং ফেসিয়াল করতে পারেন। তবে এই ফেসিয়াল গুলো স্পর্শ কাতর স্কিনে করা যাবে না।

৩১ – ৪০ বছর বয়সের ফেসিয়াল:

এই বয়সে ত্বকে কোলাজেন প্রোডাকশন কমে যায় ,ত্বকে অ্যান্টি এজিং এর সমস্যা তৈরি হয় ফলে ত্বকে ভাজ পড়া ,ত্বক কুঁচকে যাওয়া, রিংকেল ,বলিরেখা ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয় অর্থাৎ এই বয়সে ত্বক পরিবর্তন হতে থাকে। এক্ষেত্রে ত্বকে আ্যন্টি রিংকেল ফেসিয়াল, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ফেসিয়াল, ফ্রুট ফেসিয়াল, স্টিম ফেসিয়াল করতে পারেন

৪১ -৫০ বছর বয়সের ফেসিয়াল:

এই বয়সের পর প্রাকৃতিকভাবেই ত্বকে বলি রেখা , তারূন্যতা কমে যাওয়া , বয়সের ছাপ ইত্যাদি পড়বেই। তাই পুরোপুরি ভাবে এগুলো কমানো যাবে না কিন্তু ত্বককে টানটান ও সতেজ দেখাতে আপনি বেছে নিতে পারেন ভেজিটেবল পিলিং, থার্মো হার্ভের ফেসিয়াল, অ্যান্টি রিংকেল ফেসিয়াল, চকলেট ফেসিয়াল ও আ্যন্টি আক্সিডেন্ট ফেসিয়াল ।

One thought on “ফেসিয়াল করার উপকারিতা: ত্বকের ধরন ও বয়স অনুযায়ী ফেসিয়াল।

  1. Anti aging amader face a jeno na poray.Ageing er chap ta jeno na asey face ta healthy rakhar jonno ami Facial must monthly 1br kore thaki 🥰r pasa pasi Sheet Mask use kori weekly 2ta.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *