ত্বকের যত্ন

কাঁচা হলুদের উপকারিতা ও সঠিক ব্যবহার।

Benefits and proper use of raw turmeric

রান্নার কাজে ব্যবহৃত বহুল পরিচিত একটি মশলা হলো হলুদ। তবে এটি শুধু রান্নার কাজেই ব্যবহৃত হয় না, রূপচর্চায়ও ব্যবহৃত হয়। প্রাচীনকাল থেকেই এটি রূপচর্চায় ব্যবহার হয়ে আসছে। কালচে দাগ,ব্রণ ও ফুসকুড়ি সারাতে কাঁচা হলুদ খুবই কার্যকর। হলুদ মাখলে ত্বক ফর্সা হয়,এমন ধারনায় বাঙালির বিয়ের অনুষ্ঠানেও হলুদ লাগানোর রেওয়াজ প্রচলিত রয়েছে। হলুদের মধ্যে রয়েছে কারকিউমিন নামক বিশেষ উপাদান। যা কেবল হলুদেই পাওয়া যায়। বিশেষজ্ঞরা এটিকে জাদুকরি উপাদানও বলে থাকেন।

কারন এই উপাদানটি ত্বকের অধিকাংশ সমস্যা সমাধান করতে সাহায্য করে। এছাড়া হলুদে রয়েছে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিবায়োটিক গুণাবলী যা ত্বকের রং ফর্সা করে, ত্বক উজ্জ্বল করে, ব্রণ কমায়, বার্ধক্যের ছাপ প্রতিরোধ করে,হোয়াইট হেডস ও ব্ল্যাক হেডসের সমস্যা দূর করে। তবে কাঁচা হলুদ ব্যবহার করার নিয়ম সঠিক নিয়ম সম্পর্কে অনেকেই জানেন না। তাই আপনাদের সুবিধার্থে আজকের ফিচারে আমি কাঁচা হলুদের উপকারিতা ও সঠিক ব্যবহার সম্পর্কে জানাবো, চলুন জেনে নেই।

কাঁচা হলুদের উপকারিতা

কাঁচা হলুদে রয়েছে কারকিউমিন,ভিটামিন C, টারমারোন,অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট,অ্যান্টি-সেপটিক ও অ্যান্টি-ফাঙ্গাল প্রপার্টিজ। যা ত্বকের যাবতীয় সমস্যা সমাধানে দারুন কার্যকর। চলুন জেনে নেই কাঁচা হলুদের উপকারিতা সম্পর্কে।

১. ব্রণ ও ফুসকুড়ি দূর করে:

কাঁচা হলুদে থাকা অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিসেপটিক গুণাবলী ত্বকের মধ্যে থাকা ব্রণের জীবাণু ধ্বংস করে ,ব্রণকে শুকিয়ে ফেলতে সাহায্য করে।

২. দাগ ও পিগমেন্টেশন কমায়:

রূপচর্চায় নিয়মিত কাঁচা হলুদ দিয়ে তৈরি কিছু ফেসপ্যাক ব্যবহার করলে মুখের কালো দাগ, ব্রণের দাগ, ও পিগমেন্টেশন কমে যায়।

৩. ত্বক উজ্জ্বল করে:

কাঁচা হলুদ ব্যবহারে ত্বক হয় উজ্জ্বল ও প্রাণবন্ত।

৪. ত্বকের লালচে ভাব কমায়:

সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি ও ফ্রি রেডিকেলের প্রভাবে ত্বকে যে কালচে দাগ ও লালচে ভাব হয় তা, কমাতে কাঁচা হলুদ খুবই কার্যকরী একটি উপাদান।

৫. বার্ধক্যের ছাপ কমায়:

কাঁচা হলুদের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান ত্বকের কোষকে সতেজ রাখে ও বলিরেখা প্রতিরোধ করে। এতে ত্বক থাকে তারুণ্য দীপ্ত ও স্বাস্থ্যজ্জল।

কাঁচা হলুদ ব্যবহারের পদ্ধতি

raw turmeric

কাঁচা হলুদ সেনসিটিভ বা সংবেদনশীল ত্বকের যত্নে সরাসরি ব্যবহার না করাই ভালো। নিয়মিত কাঁচা হলুদ ব্যবহার করতে চাইলে কাঁচা হলুদের সাথে অন্যান্য উপাদান মিশিয়ে ফেসপ্যাক তৈরি করে ব্যবহার করুন। এতে ভালো ফলাফল পাবেন। চলুন কাঁচা হলুদের কিছু ফেসপ্যাক সম্পর্কে জেনে নেই।

১. কাঁচা হলুদ, অ্যালোভেরা ও মধুর ফেসপ্যাক

একটি বাটিতে কাঁচা হলুদের পেস্ট ১ চা চামচ, অ্যালোভেরা জেল ১ চা চামচ ও মধু ১/২ চা চামচ পরিমাণে নিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন। এবার এটি ত্বকে ১০ মিনিট রেখে, ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এই ফেসপ্যাক ব্যবহারে আপনার ত্বকর ব্রণ ও র‍্যাশ কমবে, উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে ও ত্বক থাকবে সতেজ।

২. কাঁচা হলুদ, চন্দনের গুঁড়া ও দুধের ফেসপ্যাক

এই প্যাকটি তৈরি করতে আমাদের লাগবে কাঁচা হলুদের পেস্ট ১ চা চামচ,চন্দনের গুঁড়া ১ চা চামচ,কাঁচা দুধ ২ চা চামচ। এবার এই উপকরণগুলো একসাথে মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করে নিন। ফেসপ্যাকটি মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এই ফেসপ্যাকটি ব্যবহারে ত্বকের কালো দাগ-ছোপ দূর হবে ও ত্বক হবে ফর্সা ও মসৃণ।

৩. কাঁচা হলুদ,টমেটোর রস ও চালের গুঁড়ার ফেসপ্যাক

এটি একটি এক্সফোলিয়েটর ফেসপ্যাক। এটি তৈরি করতে, আমরা একটি বাটিতে কাঁচা হলুদের পেস্ট ১ চা চামচ,টমেটোর রস‌ ১ চা চামচ ও চালের গুঁড়া ১ চা চামচ নিয়ে ভালোভাবে নেড়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন। এবার মিশ্রণটি ঘষে ঘষে স্ক্রাবিং করে ১০ মিনিট পর্যন্ত লাগিয়ে ধুয়ে ফেলুন। টমেটোতে থাকা আ্যন্টিঅক্সিডেন্ট
ফর্মূলা ত্বকের ট্যান দূর করতে সাহায্য করে ও আনইভেন স্কিন টোন ইভেন করে।

৪. কাঁচা হলুদ ,লেবুর রস ও ওটসের ফেসপ্যাক

এটিও একটি এক্সফোলিয়েটর ফেসপ্যাক। এটা তৈরি করতে আমরা প্রথমেই একটি বাটিতে নিব কাঁচা হলুদের পেস্ট ১ চা চামচ, লেবুর রস ২ ফোঁটা ও ওটস ১ চা চামচ। এবার এই মিশ্রণ গুলো একসাথে মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করে নিন। এবার এটি আপনার পুরো স্কিনে স্ক্রাবের মতো করে লাগিয়ে ,৫-৭ মিনিট ম্যাসাজ করে ধুয়ে ফেলুন। এই ফেসপ্যাকটি ত্বকের মৃত কোষ দূর করতে ও স্কিন ব্রাইট করতে খুবই কার্যকর।

৫. কাঁচা হলুদ, দুধ ও বেসনের ফেসপ্যাক

এই ফেসপ্যাকটি যেকোনো অকেসন কিংবা ইভেন্টে অংশ নেওয়ার আগে ব্যবহার করলে ত্বকে আসবে ইনস্ট্যান্ট উজ্জ্বলতা। এটা তৈরি করতে আমাদের লাগবে কাঁচা হলুদের পেস্ট ১ চা চামচ,বেসন – ১ চা চামচ ও কাঁচা দুধ পরিমাণমতো। এবার সবগুলো উপাদান একসাথে মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন। ফেসপ্যাকটি ফুল ফেইসে লাগিয়ে ১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।

হলুদ ব্যবহারে সাবধানতা

  • সংবেদনশীল ত্বকে ব্যবহারের আগে প্যাচ টেস্ট করে এর রিঅ্যাকশন পর্যবেক্ষণ করূন। যদি এগুলো ব্যবহারে ত্বকে র‍্যাশ বা অ্যালার্জির রিঅ্যাকশন না দেখা দেয় তাহলে এটি ত্বকের জন্য সেইভ।
  • হলুদের প্যাক অ্যাপ্লাই এর পরপরই সরাসরি সূর্যালোক এড়িয়ে চলুন।
  • ত্বকে দীর্ঘ সময় ধরে কাঁচা হলুদ রাখলে ত্বকে হলুদ বর্ণ ধারণ করে যা উঠানো খুবই কষ্টসাধ্য।
  • অতিরিক্ত কাঁচা হলুদ ব্যবহার করলে ত্বক শুষ্ক ও সংবেদনশীল হয়ে যায়।

এইতো জেনে নিলাম কাঁচা হলুদের উপকারিতা ও সঠিক ব্যবহার সম্পর্কে। আশাকরি আজকের ফিচারের মাধ্যমে আপনারা সবাই উপকৃত হবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *