Ingredient

অ্যাসকরবিল গ্লুকোসাইড সলিউশন।

Ascorbyl Glucoside Solution

অ্যাসকরবিল গ্লুকোসাইড কি?

এটি ভিটামিন সি-এর একটি স্থিতিশীল ডেরিভেটিভ। অ্যাসকরবিক গ্লুকোসাইড আপনার উজ্জ্বল ত্বকের ভবিষ্যতের চাবিকাঠি বলতে পারেন।

বাজারে অনেক ধরনের ভিটামিন সি ডেরিভেটিভ পাওয়া যায়, কিন্তু অ্যাসকরবিক গ্লুকোসাইড- এর থেকে বেশি সুবিধা প্রদান করে থাকে। সরাসরি ভিটামিন সি এর ব্যবহার সবার ত্বকের জন্য নিরাপদ হয় না। অ্যাসকরবিল গ্লুকোসাইড ভিটামিন সি এর কম শক্তিশালী উপাদানের দ্বারা তৈরি করা হয়।

Ascorbyl Glucoside Solution 12%

তাই প্রায় সব ধরনের ত্বকে এটি ব্যবহার উপযোগী একটি ডেরিভেটিভ । এতে কোনও ত্রুটি নেই। মূলকথা, আপনার ত্বককে উজ্জ্বল করতে অ্যাসকরবিল গ্লুকোসাইড ব্যবহার করতে পারেন এবং এটি খুবই ভালো ফলাফল দিতে প্রতিশ্রুতি দেয়।

চলুন অ্যাসকরবিল গ্লুকোসাইড সলিউশন ১২% সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক।

অ্যাসকরবিল গ্লুকোসাইড সলিউশন ১২%

অ্যাসকরবিল গ্লুকোসাইড কে বাংলাতে অ্যাসকরবিক অ্যাসিড গ্লুকোসাইড বলা হয়ে থাকে। একে অ্যাসকরবিক অ্যাসিড ২-গ্লুকোসাইডও বলা হয়। সাধারণত এটি ভিটামিন সি বা ভিটামিন সি-এর ডেরিভেটিভ হিসেবেই বেশি পরিচিত।

বিশেষজ্ঞদের মতে, অ্যাসকরবিল গ্লুকোসাইড-এ ভিটামিন সি-কে ডেরিভেটিভ আকারেই পাওয়া যায়।

অ্যাসকরবিল গ্লুকোসাইড ত্বকের যত্নে ব্যবহৃত অন্যান্য উপাদান এর সাথেও ব্যবহার করা যায় যেমন, ভিটামিন ই, হায়ালুরোনিক অ্যাসিড। অ্যাসকরবিল গ্লুকোসাইড – কে সংক্ষেপে AA2G বলা হয়।

এটি প্রাকৃতিক ভিটামিন সি এর একটি চমৎকার জল-দ্রবণ, তাই এই ডেরিভেটিভটির স্থিতিশীলতা অন্যান্য সিরামের থেকে অনেকাংশে বেশি।

অ্যাসকরবিল গ্লুকোসাইড সলিউশন ১২% এর সুবিধাসমূহ

ভিটামিন সি আমাদের ত্বকের জন্য কতোটা উপকারী তা আমরা সবাই জানি। অ্যাসকরবিল গ্লুকোসাইড- এ আছে ভিটামিন সি বা এটি ভিটামিন সি এরই একটি বিশুদ্ধ জল দ্রবণ।

The Ordinary - Ascorbyl Glucoside Solution

এটি জলে অনেক দীর্ঘ সময় স্থায়ী হয়, এতে সরাসরি এল-অ্যাসকরবিক অ্যাসিড ব্যবহৃত হয় না। অ্যাসকরবিল গ্লুকোসাইড ডেরিভেটিভে কম শক্তিশালী ভিটামিন সি থাকায় এটি ত্বকের কোনো ক্ষতি ছাড়াই ত্বক উজ্জ্বল করতে সহায়তা করে।

এর বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো :

১. ত্বককে উজ্জ্বল করে রঙের বৈষম্য কমায়:

অ্যাসকরবিল গ্লুকোসাইড মেলানিন এর উৎপাদন কমাতে সহায়তা করে। অনেকের দেহে মেলানিন এর মাত্রা বেশি,এটি নির্ভর করে বংশগতির উপর। রোদে ত্বক পুড়ে গেলে বা দেহে মেলানিন উৎপাদন বেড়ে গেলে ত্বকের বর্ণ গাঢ় বা কালো হয়ে থাকে।

অ্যাসকরবিল গ্লুকোসাইড মেলানিন এর উৎপাদন কমিয়ে ত্বককে উজ্জ্বল করে তোলে। এভাবে উজ্জ্বল ত্বক প্রদান করতে অ্যাসকরবিল গ্লুকোসাইড সহায়তা করে।

২. সূর্যের ক্ষতি থেকে ত্বককে রক্ষা করে:

সূর্যের এক্সপোজার ত্বকের অনেক ক্ষতি করে থাকে, অ্যাসকরবিল গ্লুকোসাইড সূর্যের এসব ক্ষতিকারক উপাদান গুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করে ত্বককে রক্ষা করে। কোলাজেন ভাঙ্গন কমায় এবং এটি চেহারার সূক্ষ্ম রেখা ও বলি রেখাগুলি দূর করতে সাহায্য করে থাকে।

৩. কোলাজেন উৎপাদন বাড়ায়:

কোলাজেন হলো মানুষের দেহে সৃষ্ট প্রাকৃতিক প্রোটিন। বয়স বাড়ার সাথে সাথে শরীরে এর উৎপাদন স্বাভাবিক এর তুলনায় কমতে থাকে। অ্যাসকরবিল গ্লুকোসাইড এই কোলাজেন উৎপাদনকে বাড়িয়ে তোলে যা ত্বকের দৃঢ়তা ও স্থিতিস্থাপকতা বজায় রাখতে সহায়তা করে। এটি ত্বককে মসৃণ ও সুন্দর দেখাতে পারে।

৪. ত্বকের প্রদাহ দূর করে:

অ্যাসকরবিল গ্লুকোসাইডে ত্বকের প্রদাহ বিরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে। তাই এটি প্রদাহ যুক্ত ত্বকের চিকিৎসার জন্য সহায়তা করে থাকে।

৫. হাইপারপিগমেন্টেশন ও বয়সের ছাপ দূর করে:

মানুষের দেহের ত্বক ও চুলের রঙ আসে মেলানিন থেকে। এই পিগমেন্ট তৈরি হয় মেলানোসাইট নামক কোষ থেকে, যা অধিক মাত্রায় তৈরি হলে ত্বকে সৃষ্টি হয় হায়পারপিগমেন্টেশন। এর ফলে ত্বকে দাগ ছোপ বাড়িয়ে দেয় এবং ত্বক কালচে বর্ণ হয়ে যায়।

এতে বয়সের ছাপও বেড়ে যায়। অ্যাসকরবিল গ্লুকোসাইড এর চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়, এটি মেলানিন এর মাত্রা কমিয়ে ত্বককে উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে।

৬. অধিক স্থিতিশীলতা:

অ্যাসকরবিল গ্লুকোসাইড পানিতে দ্রবীভূত, এর ফলে ত্বক একে সহজেই শোষণ করে নিতে সক্ষম হয়। অ্যাসকরবিল গ্লুকোসাইড অন্যান্য ভিটামিন সি সিরামের তুলনায় অনেক বেশি স্থিতিশীল।

এটি ত্বকে ব্যবহারের পর দীর্ঘ সময় ত্বককে সুরক্ষা করে, সময়ের সাথে সাথে অ্যাসকরবিল গ্লুকোসাইড ত্বক থেকে অকার্যকর হয়ে যেতে পারে।

৭. ব্রণ কমাতে সাহায্য করে:

তৈলাক্ত ত্বকে ব্রণের ঝুঁকি বেশি থাকে। অ্যাসকরবিল গ্লুকোসাইড তৈলাক্ত ত্বকে খুব ভালো ফলাফল দিতে পারে। এর মধ্যে ব্রণ বিরোধী বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান থাকায় এটি ব্রণ এর বিরুদ্ধে কাজ করে, এতে নতুন ব্রণ হওয়ার হার কমে যায়।

৮. কম বিরক্তিকর:

অনেক সময় ভিটামিন সি ত্বকের বিরক্তিকর হয়ে থাকে, বিশেষ করে সংবেদনশীল ত্বকে ভিটামিন সি ব্যবহারের ফলে লালচে ভাব, চুলকানি ইত্যাদি সমস্যার সৃষ্টি করে। কিন্তু অ্যাসকরবিল গ্লুকোসাইড ব্যবহারে এধরনের সমস্যা দেখা যায় না, তাই সব ধরনের ত্বকের মানুষ এটি খুব পছন্দ করে থাকে।

৯. সুরক্ষা:

অ্যাসকরবিল গ্লুকোসাইডে তেমন কোনো প্বার্শ প্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হয় নি, তাই এটি ব্যবহার এর জন্য নিরাপদ বলে প্রমাণিত। সব ত্বকে অ্যাসকরবিল গ্লুকোসাইড নিরাপদ ভাবে ব্যবহার করা যায়।

এভাবেই অ্যাসকরবিল গ্লুকোসাইড সলিউশন আমাদের ত্বকের সমস্যা দূর করে ত্বককে ফর্সা ও উজ্জ্বল করতে সহায়তা করে থাকে। এতে অধিক সুবিধা থাকায় অন্যান্য ভিটামিন সি সিরাম, সানস্ক্রিন ও লোসনের তুলনায় এটি বেশি উপযোগী।

অধিকাংশ মানুষ এটি ব্যবহার করে সুফলতে পেয়ে থাকে, তাদের ত্বকে এটি সহ্য করে নেয়। তাই অ্যাসকরবিল গ্লুকোসাইড সলিউশন এতো জনপ্রিয়তা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।

এবার জেনে নেয়া যাক, অ্যাসকরবিল গ্লুকোসাইড সলিউশন কিভাবে আপনার ত্বকে ব্যবহার করবেন।

অ্যাসকরবিল গ্লুকোসাইড সলিউশন ১২% ত্বকে ব্যবহারের নিয়ম:

দিনে ও রাতে উভয় সময়েই অ্যাসকরবিল গ্লুকোসাইড ব্যবহার করা যায়। যেহেতু অ্যাসকরবিল গ্লুকোসাইডে ভিটামিন সি রয়েছে, তাই তৈলাক্ত ত্বকে দিনে ব্যবহারের জন্য খুবই উপকারী হতে পারে, যেমন সিরাম, মাস্ক, ক্রিম, সানস্ক্রিন ও ময়েশ্চারাইজার এর মতো পণ্য গুলিতে এটি অনেক কার্যকরী ভুমিকা পালন করে থাকে।

A vitamin C serum that brightens - The Ordinary - Ascorbyl Glucoside Solution

ত্বক সাবান বা পানি দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে, শুষ্ক হওয়ার পর অ্যাসকরবিল গ্লুকোসাইড সিরাম বা ময়েশ্চারাইজার প্রয়োগ করতে হয়। ভেজা ত্বকে সিরাম ব্যবহার করলে ত্বক এটি ভালো করে শোষণ করতে পারে না। তাই অবশ্যই শুষ্ক ত্বকে ব্যবহার করতে হবে।

মুখে ও ঘাড়ের কালো দাগ দূর করতে অ্যাসকরবিল গ্লুকোসাইড সিরাম ব্যবহার করা যায়। কয়েক ফোঁটা সিরাম লাগিয়ে মাসাজ করতে হয়ে, যতক্ষণ পর্যন্ত মসৃণ না হয়। মাসাজ করার মাধ্যমে ত্বক সহজে সিরামটি শুষে নিবে।

অ্যাসকরবিল গ্লুকোসাইড সলিউশন এর সেরা ফলাফল পেতে অ্যাসকরবিল গ্লুকোসাইড যুক্ত সানস্ক্রিন ব্যবহার করা যায়। এটি সূর্যের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে ত্বককে দীর্ঘ সময় রক্ষা করে এবং মেলানিন উৎপাদন কমিয়ে ত্বকের উজ্জ্বল রাখতে সহায়তা করে।

ভিটামিন সি বা অ্যাসকরবিল গ্লুকোসাইড মিশ্রিত মাস্ক সপ্তাহে একদিন ব্যবহার করলে এটি ভালো ফলাফল দিতে পারে।

রাতে ঘুমানোর আগে অ্যাসকরবিল গ্লুকোসাইড সলিউশন ব্যবহার করা যায়। এটি খুবই ভালো ফল প্রদান করে থাকে।

অ্যাসকরবিল গ্লুকোসাইড সলিউশন যারা ব্যবহার করতে পারবে:

এটি সব ধরনের ত্বকে ব্যবহারের উপযোগী একটি ডেরিভেটিভ। বিশেষ করে যাদের সংবেদনশীল ত্বক। ত্বকের কালো দাগ দূর করতে, প্রদাহ দূর করতে এবং যাদের ত্বক রোদে পুড়ে গেছে, যাদের হায়পারপিগমেন্টেশন রয়েছে তাদের এটি খুব ভালো ফল দিয়ে থাকে।

কিন্তু পুরো মুখে ব্যবহারের পূর্বে একটি প্যাচ পরীক্ষা করে নেওয়া ভালো।

যেভাবে প্যাচ পরীক্ষা করতে হবে:

আপনার হাতে বা মুখের ত্বকে অল্প জায়গায় অ্যাসকরবিল গ্লুকোসাইড সলিউশন ব্যবহার করুন।

এবার ২৪ ঘন্টার জন্য স্থানটি এভাবেই রাখুন। যদি কোনো প্রকার প্রতিকূল প্রক্রিয়া লক্ষ্য করেন,তাহলে এটি ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।

আর যদি কোনো পার্শ প্রতিক্রিয়া না দেখা যায় তাহলে নিরাপদে এটি ব্যবহার করতে পারেন।

আরো জানুন, টি ট্রি অয়েল (Tea Tree Oil) কি? ব্যবহারের নিয়ম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *