আরগান অয়েল। ত্বক, চুল ও নখের যত্নে আরগান অয়েলের ব্যবহার।
বর্তমানে নখ,চুল এবং ত্বকের যত্নে আরগান অয়েল বেশ জনপ্রিয়। এর রয়েছে অনেক গুনাগুণ , তাই তো এত কদর। যারা নিজে নিজে নিয়মিত ত্বকের যত্ন নিতে পছন্দ করি, তাদের জন্য এই অয়েলটি মাস্ট হ্যাভ।
আমরা অনেকেই জানি না, আরগান অয়েলের গুনাগুণ ও ব্যবহার প্রক্রিয়া সম্পর্কে। তাই আজ আমি শেয়ার করবো , মরোক্কান আরগান অয়েল কী? নখ,চুল এবং ত্বকের যত্নে এর উপকারিতা ও ব্যবহার প্রক্রিয়া সম্পর্কে।
আরগান অয়েল কী?
মরক্কোর আর্গান গাছের (Argania spinosa) বাদাম জাতীয় বীজ থেকে পাওয়া যায় এই প্রাকৃতিক তেল। বিশেষ পদ্ধতিতে এই তেল নিষ্কাশন করা হয় যাতে প্রাকৃতিক গুণাগুণ অক্ষুণ্ণ থাকে। এটি নখ , চুল এবং ত্বকের যত্নে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয় । আর্গান অয়েলে প্রচুর পরিমাণে ‘ভিটামিন ই’, ফ্যাটি অ্যাসিড ,ভিটামিন এ ,ওমেগা ৬ ,(অলিক অ্যাসিড এবং লিনোলিক অ্যাসিড) এর মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে । ব্যাপক গুনাগুণ এর জন্য আরগান অয়েলকে লিকুইড গোল্ড বলা হয়।
আর্গান অয়েল সাধারণত ময়েশ্চারাইজার, ফেসিয়াল অয়েল, এবং চুলের কন্ডিশনার হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
ত্বকের যত্নে আরগান অয়েলের গুনাগুণ
ত্বকের যত্নে আরগান অয়েল খুবই উপকারী। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা ত্বকের জন্য উপকারি। এছাড়াও অয়েলি স্কিনে অতিরিক্ত সিবাম প্রোডাকশন কন্ট্রোল করে আরগান অয়েল। যারা অ্যান্টি এজিং স্কিন কেয়ার রুটিন ফলো করতে চাচ্ছেন, তাদের জন্য এই তেলটি যথেষ্ট উপকারে আসবে।
১.ময়েশ্চারাইজার- আরগান অয়েল খুবই লাইট ওয়েটের এবং সহজে ত্বকে মিশে যায়।এটি ত্বকের হাইড্রেশন লক করে রাখে এবং ময়েশ্চারাইজার হিসেবে ত্বকে ব্যবহার করা যায় । ড্রাই স্কিনের পাশাপাশি নরমাল টু কম্বিনেশন স্কিনেও ইউজ করা যায় এই অয়েল। এটি নিয়মিত ব্যবহারে ত্বকের গভীরে পুষ্টি যোগায় এবং শুষ্ক ত্বককে নরম ও মসৃণ রাখে।
২.ব্রণ প্রতিরোধ- আরগান অয়েলে রয়েছে লিনোলিক এসিড যা ব্রণ প্রতিরোধে খুবই কার্যকরী। এটি ত্বকের অতিরিক্ত তেল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে ফলে ত্বকে ব্রণ হয় না । আরগান অয়েল নন-কমেডোজেনিক তাই এটা আপনার স্কিনের পোরস ক্লগ করবে না । এছাড়াও ত্বকে ছোটখাটো কাটাছেঁড়া বা দাগ থাকলে আরগান অয়েল দ্রুত নিরাময়ে সাহায্য করে। এতে থাকা ভিটামিন ই এবং ফ্যাটি এসিড ত্বকের পুনরুজ্জীবনে সহায়ক ভূমিকা রাখে।
৩.অ্যান্টি-এজিং- আরগান অয়েলে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে।এটি বয়সের ছাপ কমায়,বলিরেখা কমায়, ফ্রি রেডিক্যালের (সূর্য এবং দূষণের ক্ষতি) বিরুদ্ধে লড়াই করে, ত্বকের ইরিটেশন কমায় এবং ত্বককে কোমল রাখে।। নিয়মিত ব্যবহারে এটি ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা বাড়ায়।
৪.ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়- আরগান অয়েল ত্বকের প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে। এটি ত্বককে হাইড্রেট রাখে এবং নিয়মিত ব্যবহারে ত্বক উজ্জ্বল ও স্বাস্থ্যকর হয়।
৫.ত্বকের ইরিটেশন কমায় – আরগান অয়েল ত্বকের লালচেভাব এবং প্রদাহ কমাতে সহায়তা করে। এছাড়াও একজিমা বা রোসেসিয়ার মতো ত্বকের সমস্যায়ও ডার্মাটোলজিস্টরা আরগান অয়েল সাজেস্ট করে।
ত্বকের যত্নে আরগান অয়েল কীভাবে ব্যবহার করবেন?
১.সরাসরি ত্বকে ব্যবহার – আরগান অয়েল ত্বকে ময়েশ্চারাইজার, ব্রণ নিরাময় এবং অ্যান্টি এজিং সিরাম হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এক্ষেত্রে ত্বককে মশ্চারাইজড করতে কয়েক ফোঁটা আরগান অয়েল হাতে নিয়ে মুখ ও গলায় ভালোভাবে ম্যাসাজ করুন। এটি রাতের বেলা ব্যবহার করলে ত্বক গভীরভাবে ময়েশ্চারাইজ হয়। নিয়মিত আরগান অয়েল ব্যবহারে ত্বক নরম ও মসৃণ হয়।
ব্রণ নিরাময়ের জন্য কয়েক ফোঁটা আরগান অয়েল ব্রণের উপরে লাগিয়ে হালকা ম্যাসাজ করে সারারাত রেখে দিন। এভাবে নিয়মিত ব্যবহারে ব্রণ কমে আসবে এবং নতুন ব্রণ হওয়ার সম্ভাবনাও কমে যাবে। এছাড়াও বলিরেখা বা বয়সের ছাপ কমানোর জন্য আরগান অয়েল সরাসরি ত্বকে ব্যবহার করতে পারেন। এক্ষেত্রে ত্বক ক্লিনজার দিয়ে পরিষ্কার করে কয়েক ফোঁটা আরগান অয়েল নিয়ে বলিরেখার উপরে হালকা ম্যাসাজ করুন।
এটি ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা বাড়ায় এবং বয়সের ছাপ কমাতে সহায়তা করে। শীতকালে নিয়মিত ব্যবহারে ত্বককে শুষ্কতা থেকে রক্ষা করে।
২.এক্সফোলিয়েটর হিসেবে- আরগান অয়েল ত্বকে এক্সফোলিয়েটোর হিসেবে কাজ করে। সেক্ষেত্রে কয়েক ফোঁটা আরগান অয়েল ,চিনি বা বেকিং সোডার সাথে মিশিয়ে এক্সফোলিয়েটর হিসেবে ত্বকে ব্যবহার করা যায়। সেক্ষেত্রে মিশ্রণটি মুখে লাগিয়ে হালকা হাতে ম্যাসাজ করুন এবং তারপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি মৃত কোষ দূর করতে এবং ত্বককে উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে।
৩.ফেইস মাস্কে মিশিয়ে- সপ্তাহে একবার এই আরগান অয়েল মিশ্রিত ফেইস মাস্ক ব্যবহার করলে ত্বক স্বাস্থ্যকর ও উজ্জ্বল হয়।
আরগান অয়েল যেহেতু প্রাকৃতিক তেল তাই এটি সব ধরনের ত্বকের জন্য উপযুক্ত। তবে প্রথমবার ব্যবহার করার আগে অ্যালার্জি পরীক্ষা অর্থাৎ প্যাচ ট্যাস্ট করে নেওয়া ভাল।
আরগান অয়েল মিশ্রিত কিছু ফেইস মাস্ক
দই ও মধুর ফেইস মাস্ক- এক্ষেত্রে একটি বাটিতে ১ চা চামচ আরগান অয়েল,১ চা চামচ মধু ও ১ চা চামচ দই একসাথে মেশান। এবার মিশ্রণটি ভালোভাবে মিশিয়ে নিন, যাতে একটি মসৃণ পেস্ট তৈরি হয়। এখন প্রথমে মুখ ভালোভাবে পরিষ্কার করুন। তারপর এই মাস্কটি সারা মুখে এবং ঘাড়ে লাগিয়ে নিন।
১৫-২০ মিনিট অপেক্ষা করুন ,এরপর হালকা গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। আরগান অয়েল ত্বককে গভীর থেকে ময়েশ্চারাইজ করে। মধুতে রয়েছে প্রাকৃতিক অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান, যা ব্রণ কমাতে সাহায্য করে। দই ত্বককে নরম করে এবং এর প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে। এই মাস্কটি সপ্তাহে ২-৩ বার ব্যবহার করলে ত্বক উজ্জ্বল এবং মসৃণ হবে।
আরগান অয়েল এবং বেন্টোনাইট ক্লে মাস্ক – একটি পাত্রে ১ চা চামচ আরগান অয়েল,১ টেবিল চামচ বেন্টোনাইট ক্লে ও ২ টেবিল চামচ গোলাপ জল একসাথে মেশান। এবার মিশ্রণটি ভালোভাবে মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন। এবার মুখে লাগিয়ে ১০-১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
এই মাস্কটি ত্বক থেকে অতিরিক্ত তেল এবং ময়লা শোষণ করে এবং ত্বককে ডিটক্সিফাই করে।
আরগান অয়েল এবং ওটমিল মাস্ক- একটি পাত্রে ১ চা চামচ আরগান অয়েল,২ টেবিল চামচ ওটমিল,১ চা চামচ মধু মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন। এবার মিশ্রণটি মুখে লাগিয়ে ৫ মিনিট আলতোভাবে ঘষুন। পরবর্তীতে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
এই মাস্কটি ত্বক এক্সফোলিয়েট করতে সাহায্য করে এবং ত্বকের মৃত কোষ দূর করে।
আরগান অয়েল এবং অ্যাভোকাডো মাস্ক- একটি বাটিতে ১ চা চামচ আরগান অয়েল, কয়েক কিউব আধা পাকা অ্যাভোকাডো ম্যাস করে সাথে ১ চা চামচ দই নিয়ে একত্রে পেস্ট তৈরি করুন। এবার মিশ্রণটি মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট অপেক্ষা করুন। হালকা গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
অ্যাভোকাডো এবং আরগান অয়েল একসাথে ত্বককে গভীর থেকে ময়েশ্চারাইজ করে এবং ত্বকের নমনীয়তা বাড়ায়।
আরগান অয়েল এবং বেসন মাস্ক – একটি পাত্রে ১ চা চামচ আরগান অয়েল,১ টেবিল চামচ বেসন , ১ চা চামচ মধু ও সামান্য দুধ মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন। মিশ্রণটি মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। এবার ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এই মাস্কটি ত্বককে উজ্জ্বল ও মসৃণ করে, এবং নিয়মিত ব্যবহারে ত্বকের অবাঞ্চিত কালো দাগ রিমুভ হয়।
এই ফেইস মাস্কগুলো প্রয়োজন অনুযায়ী সপ্তাহে ১-২ বার ব্যবহার করতে পারেন।
চুলের যত্নে আরগান অয়েলের গুনাগুণ
আরগান অয়েলকে “লিকুইড গোল্ড” বলা হয়, কারণ এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই, ফ্যাটি অ্যাসিড, এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা চুলের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
১.চুল ময়েশ্চারাইজ করে- আরগান অয়েল চুলের রুক্ষতা কমাতে সাহায্য করে এবং চুলের আর্দ্রতা ধরে রাখে। নিয়মিত ব্যবহারে এটি চুলকে নরম ও মসৃণ রাখে।
২.চুল পড়া কমাতে সহায়ক- আরগান অয়েলে রয়েছে ‘ভিটামিন ই’ যা চুলের গোঁড়া মজবুত করে এবং চুল পড়া কমাতে সহায়তা করে। এটি চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এবং চুল ঘন করে।
৩.খুশকি দূর করে- আরগান অয়েল চুলের স্ক্যাল্পে প্রাকৃতিক তেল সরবরাহ করে যা স্ক্যাল্পের শুষ্কতা কমায় এবং খুশকির সমস্যা দূর করে চুলের গোড়া হেলদি রাখে।
৪.চুল কন্ডিশনিং করে – আরগান অয়েল চুলে ব্যবহারে ফ্রিজি ও উড়ন্ত চুল সহজেই নিয়ন্ত্রণে আসে। এটি চুলকে সোজা ও ঝলমলে করে।
৫.সূর্যের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে চুল রক্ষা করে- আরগান অয়েল চুলের উপরে একটি প্রাকৃতিক সুরক্ষা স্তর তৈরি করে যা চুলকে সূর্যের ক্ষতিকর ইউভি রশ্মি থেকে রক্ষা করে।
৬.চুলের ভাঙ্গন কমায়- আরগান অয়েলে থাকা ফ্যাটি অ্যাসিড এবং ভিটামিন চুলের গোড়া থেকে ডগা পর্যন্ত মজবুত করে। এটি চুলের ডগা ফাটা কমায় এবং চুলের স্বাস্থ্য বজায় রাখে।
৭.চুল উজ্জ্বল ও সিল্কি করে- নিয়মিত আরগান অয়েল ব্যবহারে চুলে প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা ও চকচকে ভাব আসে, যা চুলকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে।
চুলের যত্নে আরগান অয়েল কিভাবে ব্যবহার করবেন
১.চুলের ময়েশ্চারাইজার হিসেবে- কোথাও বের হওয়ার সময় বা ট্রাভেলিংয়ে চুল শুকনো লাগলে বা যখনই চুল ফ্রিজি লাগে, তখন হাতে কয়েক ফোঁটা আরগান অয়েল হাতের তালুতে ভালভাবে ঘষে চুলের গোড়া থেকে ডগা পর্যন্ত লাগান। এতে চুল নরম ও মসৃণ হবে এবং শুষ্কতা দূর হবে।
২.হট অয়েল ট্রিটমেন্ট- এক্ষেত্রে প্রথমে প্রয়োজন অনুসারে আরগান অয়েল নিয়ে হালকা গরম করুন । এবার এই হালকা গরম তেল চুলের গোড়া থেকে ডগা পর্যন্ত ভালোভাবে লাগান। অবশ্যই এই তেল যেন হাতে সহনীয় হয় এমন অবস্থায় ব্যবহার করতে হবে। কয়েক মিনিট আলতো করে মাথায় ম্যাসাজ করুন। এরপর গরম পানিতে চুবানো একটি গরম তোয়ালে পেঁচিয়ে চুল ঢেকে রাখুন ৩০-৪৫ মিনিট বা সারা রাতের জন্য। পরের দিন শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। এটি চুলকে গভীর থেকে ময়েশ্চারাইজ করে এবং রুক্ষতা কমায়।
৩. কন্ডিশনার হিসেবে- শ্যাম্পু করার পর ভেজা চুলে কয়েক ফোঁটা আরগান অয়েল লাগান। বিশেষ করে চুলের ডগায় ভালোভাবে লাগান, কারণ ডগা শুষ্ক হয়ে থাকে বেশি।
এটি কন্ডিশনার হিসেবে কাজ করবে এবং চুলকে নরম ও চকচকে করবে। চাইলে এটি ধুয়ে ফেলতে পারেন বা লিভ-ইন কন্ডিশনার হিসেবে রাখতে পারেন।
৪. স্ক্যাল্প ট্রিটমেন্ট- চুলের স্ক্যাল্পে সরাসরি কয়েক ফোঁটা আরগান অয়েল লাগিয়ে ভালভাবে ম্যাসাজ করুন। ৩০ মিনিট রেখে দিন, তারপর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।এটি স্ক্যাল্পের শুষ্কতা এবং খুশকির সমস্যা দূর করে।
৫. চুল স্টাইলিং এর জন্য – চুল ধোয়ার পর যখন চুল প্রায় শুকিয়ে আসছে, তখন কয়েক ফোঁটা আরগান অয়েল চুলে লাগান। এটি চুলকে ফ্রিজি হওয়া থেকে রক্ষা করে এবং সুন্দর, ঝলমলে লুক দেবে। এটি চুল সোজা বা কার্লি করার সময়ও ব্যবহার করা যায়।
৬. চুলের ডগা ফাটা রোধে- এক্ষেত্রে হাতের তালুতে সামান্য আরগান অয়েল নিয়ে চুলের ডগায় লাগান। এটি চুলের ডগাকে মজবুত করে এবং ডগা ফাটা রোধে সাহায্য করে। আরগান অয়েল নিয়মিত ব্যবহারে চুলের স্বাস্থ্য এবং সৌন্দর্য বজায় থাকে এবং চুলকে প্রাকৃতিকভাবে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে।
নখের যত্নে আরগান অয়েলের গুনাগুন
নখের যত্নে আরগান অয়েল খুবই উপকারী, কারণ এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই এবং ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে যা নখকে মজবুত, মসৃণ এবং স্বাস্থ্যকর রাখতে সাহায্য করে।
১.নখ মজবুত করে- আরগান অয়েল নখের শুষ্কতা দূর করে এবং নখকে মজবুত করে, যাতে নখ ভাঙা বা ফাটা কম হয়।
২.কিউটিকল নরম করে- নখের চারপাশের ত্বককে কিউটিকল বলে, আরগান অয়েল কিউটিকল ময়েশ্চারাইজ করে, ফলে কিউটিকল নরম হয় এবং লাল হওয়া বা ফাটার প্রবণতা কমে যায়।
৩.নখের স্বাস্থ্য বজায় রাখে- নিয়মিত ব্যবহারে নখে প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে যা নখকে মসৃণ, উজ্জ্বল এবং স্বাস্থ্যকর রাখে।
৪. সংক্রমণ প্রতিরোধ করে- আরগান অয়েল এ রয়েছে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য যা নখের সংক্রমণ রোধ করে।
নখের যত্নে আরগান অয়েল কিভাবে ব্যবহার করবেন
সরাসরি নখে ম্যাসাজ- কয়েক ফোঁটা আরগান অয়েল নখ এবং কিউটিকলে লাগিয়ে আলতো করে ২-৩ মিনিট ম্যাসাজ করুন, যাতে অয়েল নখ এবং কিউটিকলের ভেতরে ভালোভাবে প্রবেশ করে।এই পদ্ধতি রাতে ঘুমানোর আগে করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে।
কিউটিকল তেল হিসেবে- নিয়মিত ব্যবহারের জন্য একটি ছোট কন্টেইনারে কয়েক ফোঁটা আরগান অয়েল রাখুন এবং প্রতিদিন এটি কিউটিকলে লাগান।এটি ব্যবহারে কিউটিকল নরম থাকে এবং নখ শক্ত হয়।
নখের যত্নে আরগান অয়েলের কিছু মিশ্রণ সমূহ
১.আরগান অয়েল এবং লেবুর রসের মিশ্রণ- একটি বাটিতে সমপরিমাণ আরগান অয়েল এবং লেবুর রস মিশিয়ে নিন। মিশ্রণটি নখ এবং কিউটিকলে লাগান এবং ১০-১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন।এরপর হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
লেবুর রস নখের হলদে ভাব দূর করতে সাহায্য করে এবং আরগান অয়েল নখ মজবুত করে।
২.আরগান অয়েল এবং টি ট্রি অয়েল মিশ্রণ- নখের সংক্রমণ হলে,এই মিশ্রণটি কাজে লাগবে।এক্ষেত্রে ২-৩ ফোঁটা টি ট্রি অয়েল এবং ১ চা চামচ আরগান অয়েল মিশিয়ে সংক্রামিত অংশে মিশ্রণটি নখের গোড়ায় লাগিয়ে রাখুন, তবে প্রতিদিন লাগানোর প্রয়োজন নেই। এতে সংক্রমিত অংশ অনেকাংশেই কমে যাবে।
আরগান অয়েল এবং গরম পানির ম্যানিকিউর পদ্ধতি
একটি তলানি বিশিষ্ট পাত্রে হালকা গরম পানি নিন ও ১-২ চা চামচ আরগান অয়েল মিশিয়ে নিন। এই পানিতে আপনার নখ ৫-১০ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন। নখ ভিজিয়ে রাখার ফলে নখ এবং কিউটিকল নরম হয়ে যায়। তাই এই অবস্থায় নখ কাটুন এবং কিউটিকল পুশ করুন। এটি সপ্তাহে একবার করলে নখ মজবুত থাকবে এবং কিউটিকল নরম থাকবে।