সিরাম ব্যবহারের সঠিক নিয়ম।
সিরাম কি?
সিরাম হলো হালকা ঘন ও জেলি টাইপের স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট, যা চুল ও ত্বকের যত্নে ব্যবহার করা হয়। ত্বকের যত্নে ও চুলের যত্নে আলাদা সিরাম ব্যবহার করতে হয়।
সিরামের মলিকিউল টেক্সচার হালকা ও লাইট ওয়েটের যা খুব দ্রুত শোষিত হয়। ত্বক ও চুলের যত্নে সিরাম খুবই কার্যকর কারণ সিরামে রয়েছে একটিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট যা ত্বক ও চুলের সমস্যা সমাধানে একটিভ থাকে।
স্কিন কেয়ার সিরামে রয়েছে-
- ভিটামিন সি ,হায়ালুরোনিক অ্যাসিড, স্যালিসাইলিক অ্যাসিড ও রেটিনল এর মতো একটিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট যা,
- ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে
- ত্বককে হাইড্রেটেট রাখে
- ব্রন, ফুসকুড়ি ও ছোপ ছোপ কালো দাগ রিমুভ করে
- ত্বকের অ্যান্টি এজিং সাইন্স প্রিভেন্ট করে
- ত্বককে স্বাস্থ্যজ্জ্বল ও সতেজ রাখে।
হেয়ার কেয়ার সিরামে রয়েছে-
- সিলিকন, প্রোটিন, এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মতো একটিভ ইনগ্ৰেডিয়েন্ট যা,
- চুলকে শাইনি ও সিল্কি করে
- ফ্রিজি হেয়ার স্মুথ ও মসৃণ করে
- চুলকে গভীর থেকে পুষ্টি যোগায়
- বাইরের দূষণ ও ক্ষতি থেকে চুলকে রক্ষা করে।
- স্কিন কেয়ার সিরাম ও হেয়ার সিরাম দুটি আলাদা প্রোডাক্ট, কিন্তু এ দুটিই ত্বক ও চুলকে স্বাস্থ্যজ্জল এবং হেলদি রাখতে ব্যবহৃত হয়।
সিরাম কেন ব্যবহার করবেন?
আমরা রেগুলার স্কিন কেয়ারে ক্লিনজার,মশ্চারাইজার ও টোনার ব্যবহার করে স্কিনকে হাইড্রেটেড, সতেজ ও উজ্জল রাখার চেষ্টা করি । কিন্তু এগুলো রেগুলার ব্যবহারের পরেও যদি আপনি মনে করেন আপনার ত্বক সজীব ও স্বাস্থ্যজ্জল হচ্ছে না তখনই আপনি সিরাম ব্যবহার শুরু করতে পারেন। কারণ সিরামে রয়েছে একটিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট এবং এর মলিকিউল স্ট্রাকচার খুবই লাইট ওয়েটের হওয়ায় এটি ত্বকের গভীরে খুব দ্রুত প্রবেশ করে ত্বকের সমস্যা গুলো সলভ করে। সিরাম ত্বকে সরাসরি কাজ করে তাই এর কার্যকারিতাও দারুন।
আমরা চুলে সাধারণত হেয়ার অয়েল, শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার ব্যবহার করে চুলকে স্বাস্থ্যজ্জ্বল ও মজবুত রাখার চেষ্টা করি। কিন্তু এগুলো ব্যবহারের পরেও যদি আপনি লক্ষ্য করেন চুল অনেক বেশি নিষ্প্রাণ ,ফ্রিজি, চুল ভাঙ্গা ও অতিরিক্ত পরিমাণে চুল পড়ছে তাহলে এই অবস্থায় আপনি হেয়ার সিরাম ব্যবহার শুরু করতে পারেন । কারণ হেয়ার সিরামে রয়েছে সিলিকন, অর্গানিক অয়েল, ভিটামিন ই, প্রো ভিটামিন ও প্রোটিন যা চুলকে সাইনি ও সিল্কি করে। চুলের ফ্রিজিনেস দূর করে চুলকে সফট ও মসৃণ করে। চুলকে গভীর থেকে পুষ্টি যোগায়। চুলের ড্যামেজ রিপেয়ার করে চুলকে স্বাস্থ্যজ্জল ও ওয়েল ফিনিশড লুক ক্রিয়েট করে।
ত্বকে কিভাবে সিরাম ব্যবহার করতে হয়?
আমরা অনেকেই সিরাম ব্যবহার করার সঠিক নিয়ম জানি না । কিন্তু ত্বকে সিরাম ব্যবহারের সঠিক পদ্ধতি সম্পর্কে জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারন সঠিক ভাবে ত্বকে সিরাম ব্যবহার করলে আপনার কাঙ্খিত উপকারিতা পাওয়া যাবে। চলুন জেনে নেই ত্বকের যত্নে সিরাম ব্যবহারের সঠিক নিয়ম-
ত্বক পরিস্কার করার পর সিরাম ব্যবহার করতে হয় অর্থাৎ ত্বকে যখন হালকা ভেজা ভাব থাকে তখন। তাই প্রথমেই আপনার স্কিন ভালোভাবে ক্লিনজার দিয়ে পরিষ্কার করে নিন। কারণ ক্লিয়ার স্কিনে সিরাম ভালোভাবে শোষিত হয়।
এবার পরিষ্কার স্কিনে আপনার পছন্দের টোনার ব্যবহার করুন। কারণ টোনার ত্বকের পিএইচ ব্যালান্স ঠিক রাখে এবং সিরামের কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে।
টোনার লাগানোর পর এটি ত্বকে পুরোপুরি শোষিত হওয়ার আগে অর্থাৎ ত্বকে হালকা ভেজা ভাব থাকা অবস্থায় সিরাম এপ্লাই করুন। হাতের তালুতে অথবা কটন প্যাডে ২-৩ ফোঁটা সিরাম নিয়ে হালকা ভাবে ফুল ফেইসে এবং চোখের চারপাশ, ডেকোলেট ও গলায় এপ্লাই করবেন। অবশ্যই হালকা ভাবে ট্যাপিং বা ম্যাসাজ করে ত্বকে এপ্লাই করুন।
সিরাম ব্যবহারের পর ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করতে ভুলবেন না। কারণ সিরাম ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করে না, তাই সিরাম ব্যবহারের পর ত্বকের ধরন অনুযায়ী ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করুন।
সিরাম মেইনলি রাতে ব্যবহার করা ভালো। কারণ রাতে ত্বক পুনর্জীবিত হয় তাই রাতে ব্যবহার করলে বেশি কার্যকর ফলাফল পাওয়া যাবে। তবে আপনি যদি দিনের বেলায় ব্যবহার করতে চান,তাহলে অবশ্যই সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে ভুলবেন না, কারণ সিরামে রয়েছে কিছু এক্টিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট যা সূর্যের আলোতে ত্বককে সংবেদনশীল করে দিতে পারে।
চুলে কিভাবে সিরাম ব্যবহার করতে হয়?
চুলে সিরাম ব্যবহার করার সঠিক পদ্ধতি সম্পর্কে জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ সঠিক ব্যবহারে সঠিক রেজাল্ট পাওয়া যায়। এখন আমরা জেনে নেব চুলে সিরাম অ্যাপ্লাইয়ের সঠিক নিয়ম সম্পর্কে-
প্রথমেই চুল শ্যাম্পু দিয়ে ভালোভাবে ক্লিন করে ,টাওয়েল দিয়ে হালকা চুলের পানি শোষণ করে নিন। চুলে ভেজা অবস্থায় কখনোই সিরাম ব্যবহার করবেন না কারন ভেজা অবস্থায় সিরাম চুলে শোষিত হয় না এবং এর কার্যকারিতা কম হয় । তাই চুল ভেজা অবস্থায় সিরাম ব্যবহার না করাই ভালো। তাই চুল কিছুটা শুকানোর পর সিরাম ব্যবহার করুন।
এবার হাতের তালুতে ২-৩ ফোঁটা সিরাম নিয়ে ঘষে গরম করে নিন এতে এটি চুলে ভালোভাবে স্প্রেড হবে।তবে চুল যদি বেশি লম্বা হয় তাহলে চুলের দৈর্ঘ্য অনুযায়ী আরো কয়েক ফোটা সিরাম ব্যবহার করতে পারেন।
চুলের মাঝখান থেকে শুরু করে শেষ প্রান্ত পর্যন্ত সিরাম ভালোভাবে লাগান। মাথার স্কেল্পে সিরাম লাগানোর প্রয়োজন নেই । তাই চুলের মাঝ প্রান্ত থেকে শেষ প্রান্ত পর্যন্ত সিরাম লাগাবেন এতে চুল সিল্কি এবং মসৃণ হবে
নিয়মিত সিরাম ব্যবহারে চুল হেভি হয়ে যেতে পারে, তাই সপ্তাহে ২-৩ বার ব্যবহার করা ভালো। তবে চুলের কন্ডিশন যদি অনেক বেশি ভঙ্গুর হয় তাহলে রেগুলার ব্যবহার করতে পারেন।
সিরাম ব্যবহারের পূর্বে যে বিষয়গুলো মাথায় রাখবেন
চুল বা ত্বকের যত্নে সিরাম এর সঠিক কার্যকারিতা পেতে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় মেনে চলতে হবে ,চলুন এই বিষয়ে জেনে নেই।
ত্বকের ক্ষেত্রে
- সিরাম ব্যবহারের আগে অবশ্যই হাতে বা কানের পেছনে অল্প একটু সিরাম লাগিয়ে প্যাচ টেস্ট করে বুঝে নিবেন, এটি ব্যবহারে আপনার ত্বকে কোন প্রকারের রিয়াকশন হচ্ছে কিনা।
- ত্বকের ধরন অনুযায়ী সিরাম নির্বাচন করুন।
- দিনের বেলায় সিরাম ব্যবহার করলে অবশ্যই সানস্ক্রিন ব্যবহার করবেন।
- ২-৩ ফোঁটার বেশি সিরাম ব্যবহার করবেন না এতে ত্বকে শুষ্কতা ও ইরিটেশন হতে পারে।
চুলের ক্ষেত্রে
- চুলের ধরন ও প্রয়োজন অনুযায়ী সঠিক সিরাম ব্যবহার করতে হবে।
- ভেজা চুলে সিরাম ব্যবহার করা যাবে না।
- বেশি পরিমাণে সিরাম ইউজ করা যাবে না।
- মাথার স্কেল্পে সিরাম লাগানো যাবে না এতে স্কেল্প তৈলাক্ত হয়ে যায়।
আশা করি এই লেখাটি পড়ে সিরাম এর ব্যবহার সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতে পেরেছেন। সঠিকভাবে সিরাম ব্যবহার করলে অবশ্যই আপনার কাঙ্খিত রেজাল্ট পাবেন খুব শীঘ্রই।