শীতে পা ফাটার কারণ ও দূর করার উপায়। জেনে নিন।
শীতকালের রুক্ষ এবং শুষ্ক আবহাওয়ার প্রভাবে পা ফাটা সমস্যার তৈরি হয়। পা ফাটা সমস্যার কারণ গরমকাল এবং শীতকালভেদে আলাদা প্রকৃতির হয়। গরমকালের ক্ষেত্রে , শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানির ঘাটতি হলে ত্বক শুষ্ক হয়ে পা ফাটার সমস্যা তৈরি হয়। কিন্তু শীতকালের ক্ষেত্রে, বাহ্যিক ঠান্ডা ও আদ্র আবহাওয়ার প্রভাবে ত্বক শুষ্ক এবং রুক্ষ হয়ে পা ফাটার সমস্যা তৈরি করে।
শীতের রুক্ষতায় অনেকের পা ফাটা সমস্যা অনেক মারাত্মক আকার ধারণ করে। অনেকের পায়ের গোড়ালি ফেটে ঐ ফাটা গোড়ালি দিয়ে রক্ত ঝরতেও শুরু করে। যা খুবই যন্ত্রনাদায়ক।
আমাদের প্রথমেই জানতে হবে, কি কি কারনে পা ফাটা সমস্যা তৈরি হয়।
পা ফাটার কারণ:
১। আমাদের ত্বকের গ্রন্থি থেকে প্রতিনিয়ত সেবাম বা তেল নিঃসরণ হয়। তাই প্রাকৃতিকভাবে ত্বকে চকচকে ভাব থাকে অর্থাৎ আমাদের ত্বক হাইড্রেটেট থাকে। কিন্তু শীতের ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় ত্বক শুষ্ক হয়ে উঠলে গ্রন্থি থেকে আর সেবাম বা তেল নিঃসরণ হয় না। যেকারণে ত্বক শুষ্ক হতে শুরু করে এবং পা ফাটা শুরু হয়।
২। কাজের তাগিদে আমাদের কর্মস্থলে থাকতে হয় , অনেকের ক্ষেত্রে , দীর্ঘ সময় ধরে দাঁড়িয়ে থাকার ফলে পায়ে অতিরিক্ত চাপ পড়ে, যা পায়ের ত্বক ফাটার অন্যতম কারণ । এছাড়াও আমরা যে জুতা পরি সেক্ষেত্রে যদি জুতা শক্ত এবং বায়ু চলাচল বন্ধ করে দেয় সেই অবস্থায় পা ঘেমে গিয়ে, পা শুষ্ক হয়ে ওঠে ফলে পা ফাটার সমস্যা তৈরি হয়।
তাই জুতা ব্যবহারের ক্ষেত্রে নরম, কমফোর্টেবল এবং পায়ের তলায় সাপোর্ট দিবে এমন জুতা ব্যবহার করা উচিত।
৩। আমাদের অনেকের বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকি রয়েছে এর মধ্যে -ডায়াবেটিস, হাইপোথাইরয়েডিজম, একজিমা, সোরিয়াসিস, ওবেসিটি বা দীর্ঘস্থায়ী ত্বকের সমস্যার কারণে পা ফাটা সমস্যার দেখা দিতে পারে।
৪। আমরা ত্বকের যত্ন যেভাবে নেই সেভাবে পায়ের যত্নে গুরুত্ব দেই না। নিয়মিত পা পরিষ্কার না করা এবং ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার না করার ফলে পায়ের ত্বক ফেটে যায়।
৫। শীতকালের ঠান্ডা আবহাওয়ায় ত্বকে পর্যাপ্ত পরিমাণে আর্দ্রতার অভাবে ত্বক বেশি পরিমাণে শুষ্ক ও রুক্ষ হয়ে যায়, ফলে পা ফাটার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
পা ফাটা সমস্যা রোধে আমাদের করণীয়
দেখতে দেখতে চলে এলো শীতকাল। সাথে সাথে আমাদের ত্বকেও চলে এসেছে পরিবর্তন। পরিবর্তনগুলো অবশ্যই আপনারা লক্ষ্য করছেন তবে শীতকালে শুধু মুখের যত্নই যে নিতে হবে তা কিন্তু নয় পাশাপাশি পা ও কিন্তু আমাদের সৌন্দর্যের অনেক বড় একটা অংশ । তাই মুখের যত্নের পাশাপাশি পায়েরও সমান যত্ন নিতে হবে। আজ আমরা জানবো কিভাবে পায়ের যত্ন নিলে পা ফাটা সমস্যা দূর হবে।
১। স্ক্রাবিং :
প্রথমে একটি তলানি বিশিষ্ট পাত্রে কুসুম গরম পানি নিন। এবার এই উষ্ণ পানিতে পা ডুবিয়ে রাখুন কিছুক্ষণ। পায়ের ত্বক নরম হতে শুরু করলে সুতি কাপড়ে সামান্য পরিমাণ চিনি নিয়ে পা ঘষতে থাকুন। এই স্ক্রাবের মাধ্যমে জমে থাকা ময়লা, ত্বকের মৃত চামড়া রিমুভ হবে।
এছাড়াও ঘরোয়া পদ্ধতিতে স্ক্রাবিং করতে পারেন। চলুন পায়ের যত্নে উপকারী কিছু স্ক্রাবিং প্যাক সম্পর্কে জেনে নেই।
মধু ও অ্যালোভেরা প্যাক –
পায়ে মধু ও অ্যালোভেরার প্যাক এপ্লাই করুন। এক্ষেত্রে একটি পাত্রে মধু এবং আ্যলোভেরা দিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন। এবার এই মিশ্রণটি পায়ে ভালোভাবে লাগিয়ে ম্যাসাজ করুন। দুই মিনিট পর পা পানিতে ধুয়ে নিন।
গোলাপজল ও গ্লিসারিন এর প্যাক-
এবার একটি পিউমিক স্টোনের সাহায্যে পা ভালোভাবে স্ক্রাব করে নিন। এবার একটি পাত্রে গ্লিসারিন ও গোলাপ জল মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন। মিশ্রণটি পায়ের গোড়ালিতে ভালো করে লাগিয়ে নিন। এটি সারা রাত রেখে দিতে পারেন। গোলাপ জলে প্রচুর পরিমাণে আ্যন্টি অক্সিডেন্ট আছে এবং গ্লিসারিন ত্বক নরম রাখতে সাহায্য করে। তাই এটি নিয়মিত ব্যবহার আপনার ফাটা গোড়ালি সারিয়ে তুলতে সাহায্য করবে।
চালের গুড়া ও লেবুর রসের প্যাক –
এক্ষেত্রে একটি পাত্রে চালের গুঁড়া, চিনি ও লেবুর রস মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করে নিন এবার এটি পায়ের ত্বকে ভালোভাবে ঘষে ম্যাসাজ করে পাঁচ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এটি ত্বকের মৃত কোষ রিমুভ করে।
মুলতানি মাটি ও গোলাপজলের প্যাক –
এক্ষেত্রে একটি পাত্রে মুলতানি মাটি, মধু এবং গোলাপ জল একত্রে মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করে নিন। এই মিশ্রণটি পায়ে লাগিয়ে ১৫ মিনিট রেখে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন এটি পায়ের ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখে এবং ত্বক পরিষ্কার করে।
এছাড়াও পায়ের যত্নে – Ribana Almond Face & Body Scrub, St. Ives Sea Salt & Pacific Kelp Exfoliating Body Wash এই স্ক্রাব এবং এক্সফোলিয়েটর ব্যবহার করতে পারেন।
২। মশ্চারাইজিং:
স্ক্রাবিং করার ফলে ত্বকের মৃত চামড়া এবং জমে থাকা ময়লা রিমুভ হয়। কিন্তু পা কোমল রাখতে মশ্চারাইজার ব্যবহার করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।তবে অবশ্যই আমাদের মনে রাখতে হবে, ময়েশ্চারাইজার পায়ে ব্যবহার করার পর হাঁটা চলা করা যাবে না। এতে ময়েশ্চারাইজার পায়ে বেশি সময় স্থায়ী থাকতে পারে না।
তাই যদি হাঁটা চলা করতেই হয় তবে পায়ে মোজা ব্যবহার করতে পারেন। ডার্মাটোলজিস্টরা বলেন, ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারের উত্তম সময় হলো রাত। তাই রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে স্ক্রাবিং করে ময়েশ্চারাইজার মেখে নিন পায়ে।
ময়েশ্চারাইজার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন,
নারকেল তেল
নারকেল তেল ত্বকের কোমলতা বজায় রাখে পাশাপাশি শুষ্ক ত্বকে আর্দ্রতার জোগানও দেয়। এছাড়াও ত্বকের মৃত কোষ রিমুভ করে ত্বককে আরও সজীব ও সতেজ করে তোলে। পায়ের গোড়ালি ফাটা ঠেকাতে প্রতিদিন রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে একটি পাত্রে ২ টেবিল চামচ নারকেল তেল সামান্য কুসুম গরম করে নিন। এরপর পুরো পায়ে ভালোভাবে মালিশ করুন। নিয়মিত এই উপায় মেনে চললে পা নরম ও কোমল থাকবে।
পেট্রোলিয়াম জেলি
পেট্রোলিয়াম জেলি শুষ্ক ত্বককে হাইড্রেটেট ও নরম রাখে। তাই এটি ত্বকের জন্য খুবই ভালো।এটি ফাটা গোড়ালি দ্রুত সারিয়ে তোলে। তবে দ্রুত উপকার পেতে একটি টিপস অবলম্বন করতে হবে, প্রথমেই নারিকেল তেল হালকা গরম করে নিন। এবার এই হালকা গরম নারিকেল তেল পায়ের গোড়ালিতে ম্যাসাজ করুন। ম্যাসাজের পর পায়ের গোড়ালিতে পেট্রোলিয়াম জেলি লাগাবেন। এই টিপস অবলম্বন করে চললে এক সপ্তাহে পা ফাটা সমস্যা দূর হবে।
ময়েশ্চারাইজিং লোশন
পা ফাটা কমাতে গোসল বা পা ধোয়ার পরে ময়েশ্চারাইজিং ক্রিম ব্যবহার করলে ত্বকের আদ্রতা বজায় থাকে কিন্তু বেশিক্ষণ এটি স্টেই করে না। তাই এমন ময়েশ্চারাইজিং লোশন ব্যবহার করতে হবে যেগুলোতে রয়েছে শিয়া বাটার, কোকয়া বাটার সমৃদ্ধ যা ত্বকে দীর্ঘ সময় স্টেই করে । এক্ষেত্রে আপনারা ব্যবহার করতে পারেন- Vaseline Intensive Care Cocoa Glow 48H Body Lotion, Vaseline Intensive Care Nourishing Argan Oil Body Lotion । কিন্তু বিশেষ করে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ময়েশ্চারাইজিং লোশন পায়ের গোড়ালিতে লাগিয়ে তুলার মোজা পরলে পায়ের ত্বকের আর্দ্রতা ভালোভাবে ধরে রাখা যায়।
পেডিকিওর করার সহজ পদ্ধতি:
১। একটি বড় পাত্রে হালকা গরম পানি নিন। এতে কয়েক ফোঁটা শাওয়ার জেল, লেবুর রস, এবং সামান্য লবণ মিশিয়ে নেরে মিক্স করে নিন। এবার এতে পা ১০-১৫ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন।
২। পা ভিজানো হয়ে গেলে পা পরিষ্কার করে আপনার পছন্দমত একটি স্ক্রাব ব্যবহার করূন। পিউমিস স্টোন বা ফুট স্ক্রাবার দিয়ে পায়ের গোড়ালি এবং আঙুলের চারপাশ এবং পায়ের নিচের অংশ ভালোভাবে ঘষুন।
৩। পায়ের কিউটিকল নরম হয়ে গেলে কিউটিকল পুশার দিয়ে কিউটিকেল গুলো পেছনে ঠেলে , অতিরিক্ত কিউটিকল কেটে দিন, তবে খুব বেশি কেটে ফেলবেন না।
৪। এবার আপনার নখ আপনার পছন্দের সেইপে কেটে নিন । তারপর নখের শেষ ভাগে নেইল ফাইল দিয়ে মসৃণ করে নিন।
৫। এবার আপনার পছন্দ অনুযায়ী ভালো মানের ময়েশ্চারাইজার বা ফুট ক্রিম দিয়ে পায়ে ভালোভাবে ম্যাসাজ করুন। এতে ত্বক মসৃণ ও নরম থাকবে।
৬। এবার আপনার পছন্দমত নেইল পলিশ নখে আ্যপ্লাই করে নিন।