বয়স বাড়লেও ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখার জাদুকরি ৬ টি উপায়।
দিন যায় রাত হয় পুনরায় আবার দিন আসে ঠিক এভাবেই সময় পার হতে থাকে এবং সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে বাড়তে থাকে আমাদের বয়স। বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমাদের ত্বক হারাতে থাকে উজ্জ্বলতা ও নমনীয়তা।
প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে আমাদের বয়স বাড়তে থাকে এবং ত্বকের তারুণ্যতা স্বাভাবিকভাবেই কমতে থাকে। তবুও আমরা চাই ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে। ত্বককে সুস্থ ও সুন্দর রাখতে সবাই চাই। বয়স বাড়ার সাথে সাথে ত্বকে স্বাভাবিকভাবেই বয়সের ছাপ পড়ে।
বয়সের ছাপ পুরোপুরি না কমানো গেলেও কিছু স্বাস্থ্যকর অভ্যাস স্কিন কেয়ার রুটিনে এড করলে ত্বকে বয়সের ছাপ খুব ধীরগতিতে আসবে।
শুধু প্রসাধনী ব্যবহার করলেই ত্বকের তারুণ্যতা ধরে রাখা যায় এরকম কিন্তু নয়, প্রসাধনীর পাশাপাশি কিছু স্বাস্থ্যকর অভ্যাস রপ্ত করতে হবে প্রাত্যহিক জীবনে।
বয়স ত্রিশ পার হওয়ার পর থেকেই ত্বকে সেবাম উৎপাদন কমে যায়, কোলাজেন প্রোডাকশন কমে যায় এবং ইলাস্টিন ফাইবার ভাঙতে থাকে ফলে ত্বক শুষ্ক ও নিষ্প্রাণ দেখায় এবং ত্বকে বয়সের ছাপ পড়ে যায় । কুরিতে বুড়ি এই প্রবাদটা আমরা অনেকেই জানি, বর্তমান সময়ে এই প্রবাদটা কতটা যুক্তিযুক্ত।
তাই আজকে আমরা জানবো কিছু স্বাস্থ্যকর অভ্যাস সম্পর্কে। এই অভ্যাসগুলো প্রাত্যহিক জীবনে ফলো করে চললে ত্বকের তারুণ্যতা দীর্ঘ দিন ধরে রাখা সম্ভব।
১. পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন –
ত্বককে হাইড্রেটেট ও সুস্থ রাখতে পানির বিকল্প নেই। তবে বাহিরের খাবার, সফট ড্রিংক, জুশ, এনার্জি ড্রিঙ্ক ইত্যাদি শরীরের জন্য ক্ষতিকর। তাই এইসব এরিয়ে চলতে হবে।
দৈনিক ৮ গ্লাস করে পানি পান করতে হবে। ত্বককে হাইড্রেট রাখার জন্য প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে পানি পান করুন। খালি পেটে পানি পান করলে অনেক বেনিফিট পাওয়া যায় যা শরীর এবং ত্বকের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করলে রক্তে থাকা টক্সিন বা বিষাক্ত উপাদান দূর হয়, নতুন রক্ত কোষ তৈরিতে সহায়তা করে, দেহের অতিরিক্ত ওজন মেইনটেইন করে , দেহের হজম শক্তি বৃদ্ধি করে এবং ত্বক উজ্জ্বল ও সুন্দর রাখে।
২. ঘুমের আগে ত্বকের যত্ন নেওয়া-
দিনের বেলায় আমরা বিভিন্ন কাজে-কর্মে ব্যস্ত থাকি সারাদিন এবং এর প্রভাব আমাদের ত্বকে পড়ে , ফলে ত্বক দেখায় নিষ্প্রাণ এবং ত্বকে অনেক জলদি বলিরেখা ও বয়সের ছাপ পড়ে যায়।
বাইরে বের হলেও হয়তো এক ঘন্টা পর পর সানস্ক্রিন লাগানোর কথা কিন্তু সময়ের অভাবে কিংবা কাজের চাপে ত্বকে সানস্ক্রিন লাগানো হয়ে ওঠেনা। এছাড়াও পর্যাপ্ত পানি পান করা,মুখ পরিষ্কার রাখা ইত্যাদি ত্বকের যত্নে অবহেলা হয়ে যায়।
সারাদিন ত্বকের প্রতি অবহেলায় ত্বকের পিএইচ ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়। তাই এই সমস্যা রিকভার করতে রাতে ঘুমানোর আগে ত্বকের প্রপার যত্ন নিলে ত্বকের সতেজতা ফিরে আসে। এক্ষেত্রে ত্বক ক্লেনজার দিয়ে পরিষ্কার করে, ডীপ ময়েশ্চারাইজার , আপনার স্কিন টাইপ ও কনসার্ন অনুযায়ী সিরাম ব্যবহার করবেন , দিনের বেলায় সানস্ক্রিম ও রাতে নাইট ক্রিম এবং হাত পায়ে লোশন অথবা অলিভ অয়েল মেখে ঘুমালে ত্বক মসৃণ ও উজ্জ্বল থাকে।।অনেকের চোখের নিচে ডার্ক সার্কেল থাকে সেক্ষেত্রে আই ক্রিম ত্বকে লাগিয়ে ঘুমাতে পারেন।
৩. পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমানো –
বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমাদের ঘুমের পরিমাণও কমতে থাকে। ঘুম কম হলে শরীরের মেটাবলিজম রেট কমে যায় ফলে শরীরের ওজন বেড়ে যায়। শরীরকে সুস্থ ও সতেজ রাখতে রেগুলার ৮ ঘন্টা ঘুমের প্রয়োজন।
পর্যাপ্ত ঘুমালে শরীরের রক্ত প্রবাহ বাড়ে এবং ত্বক আরো উজ্জ্বল ও সতেজ থাকে। দিনের তুলনায় রাতে ত্বক ডিহাইড্রেট বা শুষ্ক হয়ে যায় বেশি তাই রেগুলার পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে। বিপরীতে পর্যাপ্ত ঘুম না হলে ত্বক নিস্তেজ ও প্রাণহীন হয়ে যায়।
৪. কার্ব ও সুগার জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন-
বেশি পরিমাণে কার্ব ও চিনি জাতীয় খাবার শরীরের জন্য খারাপ। মিষ্টি জাতীয় খাবার অতিরিক্ত খেলে ত্বকে ব্রণ, হাইপারপিগমেন্টেশন, বয়সের ছাপ ,বলিরেখা দেখা দেয়।
চিনি রক্তে খুব সহজেই মিশে যায় এবং অ্যাডভান্স গ্লাইকেশন এন্ড প্রডাক্টস (AGEs)নামক ফ্রী রেডিকেল উৎপাদন করে যা দেহের প্রোটিন ও প্রাকৃতিক এন্টিঅক্সিডেন্ট এনজাইমের ক্ষতি করে।
আমাদের দেহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রোটিন ইলাস্টিন ও কোলাজেন। এই দুটি প্রোটিনকে অ্যাডভান্স গ্লাইকেশন এন্ড প্রোডাক্ট (AGEs) নামক ফ্রী রেডিকেলস ক্ষতিগ্রস্ত করে।
ইলাস্টিন ও কোলোজেনকে ভঙ্গুর, শক্ত ও শুষ্ক করে তোলে। ফলে বয়স বাড়ার আগেই ফাইন লাইনস, রিংকেলস,ডার্ক সার্কেল, হাইপার পিগমেন্টেশন এবং গালের নিচে চামড়া ঝুলে পড়ার মতো বার্ধক্যের ছাপ পড়ে। এছাড়াও শরীরের প্রাকৃতিক এন্টিঅক্সিডেন্ট এনজাইম গুলোকে নিষ্ক্রিয় করে দেয়।
এছাড়াও অ্যাডভান্স গ্লাইকেশন এন্ড প্রডাক্টস (AGEs)নামক ফ্রী রেডিকেলস শরীরের নানাবিধ ক্ষতি করে যেমন-শরীরের টেস্টোস্টেরন তৈরি করে, এই হরমোনের ফলে ত্বকের লোমকূপ বড় হতে থাকে এবং ত্বকে জীবাণু আটকে যায় ফলে ব্ল্যাকহেডস, হোয়াইটহেডস, একনি ইত্যাদির সমস্যা তৈরি করে। এছাড়াও অতিরিক্ত চিনি রোজেসিয়া, সোরাইসিস, একজিমার মত ইনফ্লামেটরি রোগ তৈরি করে।
তাই যথাসম্ভব যেকার্ব ও সুগার জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলতে হবে এতে করে ত্বক এবং শরীর সুস্থ থাকবে।
৫. স্ট্রেস ফ্রি থাকুন-
প্রথমেই স্ক্রিন টাইম কমিয়ে আনুন প্রাত্যহিক জীবনে। প্রাত্যহিক কাজগুলো সময় মতো করার চেষ্টা করুন যেমন টাইমলি ঘুমাতে যাওয়া, টাইমলি কাজ শেষ করা ,ত্বকের যত্ন নেওয়া ইত্যাদি অর্থাৎ রেগুলার জীবনে শৃঙ্খলতা বজায় রাখতে হবে। স্ট্রেস ফ্রি থাকতে আমরা এক্সারসাইজ করতে পারি যেমন- ব্রিদিং এক্সারসাইজ, ইয়োগা ও মেডিটেশন।
বিভিন্ন গবেষণায় জানা গেছে, কাজের চাপ ও স্ট্রেসের কারণে ত্বকের লাবণ্যতা কমে যায়, বয়সের ছাপ পড়ে , চুল পড়ে, শরীরের কোলাজেন ব্রেক ডাউন হয়, শরীরে কর্টিশল নামক হরমোন বেড়ে যায় যার ফলে ত্বক কুঁচকে যায় ,বলিরেখা পরে এছাড়া অতিরিক্ত স্ট্রেসের কারণে ত্বক নিষ্প্রাণ ও মলিন হয়ে যায়।
স্ট্রেসের প্রভাব ঘুমের মধ্যেও পড়ে এক্ষেত্রে ঠিকমতো ঘুম হয় না ,খাওয়া দাওয়ায় অনিহা তৈরি হয়। তাই যত সম্ভব স্ট্রেস ফ্রি থাকুন। কাজের ফাঁকে সময় পেলে পরিবার পরিজনের সাথে সময় কাটান, হাসিখুশি থাকুন ও সুস্থ জীবন-যাপন করুন।
৬.খাদ্য তালিকায় ফ্রেশ শাকসবজি ও ফলমূল-
ত্বক ভালো রাখার জন্য যেমন কিছু খাবার এড়িয়ে চলতে হয় ঠিক তেমনি কিছু স্বাস্থ্য উপযোগী খাবার ডায়েটে যোগ করতে হয় । ভিটামিন সি এর গুণে ভরপুর সাইট্রাস জাতীয় ফল যেমন -লেবু ,কমলা, জাম্বুরা ও মালটা রাখতে পারেন। কারণ ভিটামিন সি কোলাজেন প্রোডাকশন বাড়ায় ,ত্বককে মসৃণ ও উজ্জ্বল রাখে।
ভিটামিন ই যুক্ত দানাশস্য আখরোট ত্বককে প্রাকৃতিকভাবে উজ্জ্বল করে। তাই খাবার তালিকায় প্রতিদিন এক মুঠো আখরোট রাখবেন। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ সবুজ শাক ত্বককে ক্ষতিকর ফ্রি রেডিকেলস থেকে রক্ষা করে এবং ত্বককে স্বাস্থ্যকর ও সুন্দর রাখে। ভিটামিন ই সমৃদ্ধ গ্রিন টি রেগুলার খাদ্য তালিকায় রাখলে শরীরের পাশাপাশি ত্বকের উপকারেও আসে। কারণ গ্রিন টিতে কোন প্রকার ক্যাফেইন নেই এবং ভিটামিন ই সমৃদ্ধ। তাই এই পানীয়টি স্বাস্থ্যকর।
আরো পড়ুন, তৈলাক্ত ত্বকে ব্রণ দূর করার বিভিন্ন কার্যকরী উপায়।