নিয়াসিনামাইড এর কাজ কি? ব্যবহারের নিয়ম ও উপকারিতা।
অনেকের মনেই নিয়াসিনামাইড নিয়ে অনেক ধরনের কনফিউশন আছে যেমন, নিয়াসিনামাইড কি? ত্বকের যত্নে এর কাজ কি? নিয়াসিনামাইড কি সত্যিই ত্বকের জন্য উপকারী?
এটি কিভাবে ব্যবহার করতে হবে? এই সব কনফিউশন দূর করতেই আজকের এই আর্টিকেল।
নিয়াসিনামাইড কি?
এটি ভিটামিন বি৩ বা নিয়াসিন এর একটি সম্পূরক। নিয়াসিনামাইড এর আরেকটি নাম নিকোটিনামাইড। এটি আমাদের ত্বকের নিম্ন স্তরের সিনামাইড ও প্রয়োজনীয় উপাদান গুলোর পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করে, যা বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে কমতে শুরু করে।
নিয়াসিনামাইড এর প্রধান কাজই হচ্ছে সব ধরনের ক্ষতি থেকে আমাদের ত্বকের বাইরের স্তরকে প্রটেক্ট করা। এর মধ্যে আছে প্রতিরক্ষামূলক এন্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য যা সব ধরনের দূষণ থেকে ত্বককে রক্ষা করে থাকে।
স্ক্রিন কেয়ারের জন্য অসংখ্য উপাদান থাকার পরও নিয়াসিনামাইড এর অতুলনীয় কার্যকারীতার জন্য বাকি সব উপাদানের শীর্ষে অবস্থান করছে।
চর্মরোগ বিশেষজ্ঞরা তাই একে সুপারস্টার ইনগ্রেডিয়েন্ট উপাধি দিয়েছেন। তো বুঝতেই পারছেন এর জনপ্রিয়তা কেনো এতো বেশি। সব ধরনের ত্বকের জন্য নিয়াসিনামাইড কতোটা উপকারী ও কার্যকরী ভুমিকা পালন করে তা আমরা আস্তে আস্তে জানবো।
ত্বকের যত্নে নিয়াসিনামাইড
নিয়াসিনামাইড বা ভিটামিন বি৩ আমাদের ত্বকের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। এই ভিটামিনটি পাওয়ার জন্য সেসব খাবার বেশি খেতে হবে যেসব খাবারে এই ভিটামিন আছে।
নিয়াসিনামাইড ব্যবহারের একটি বড় সুবিধা হচ্ছে এটি খুব সহজেই অন্য উপাদানের সাথে মিশে ত্বকে কাজ করতে পারে, তাই আপনার অন্যান্য স্কিন কেয়ার প্রডাক্ট এর সাথেও এটি ব্যবহার করতে পারবেন।
নিয়াসিনামাইড প্রাকৃতিক ভাবে ত্বকে কাজ করে থাকে। এটি পানিতে দ্রবীভূত একটি উপাদান। অতিরিক্ত শুষ্ক ত্বক, তৈলাক্ত ত্বক ও সংবেদনশীল ত্বক, সব ধরনের ত্বকেই নিয়াসিনামাইড খুব ভালো কাজ করে।
বয়সের সাথে সাথে আমাদের ত্বকে সিনামাইড যখন কমতে শুরু করে তখন ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়, যা সহজে দূর করা সম্ভব হয় না। তাই নিয়াসিনামাইড ব্যবহার করা জরুরি, কারণ এটি ত্বকের সিনামাইডের পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করে।
এছাড়াও ত্বকের বিভিন্ন জটিল সমস্যা যেমন ব্রণ, হাইপারপিগমেন্টেশন, অধিক তৈলাক্ততা, লোমকূপ বড় হয়ে যাওয়া ইত্যাদি দূর করতে নিয়াসিনামাইড ব্যবহার করলে ভালো ফল প্রদান করে থাকে।
আমরা ত্বকের সমস্যা দূর করতে কতো কিছুই না ব্যবহার করি, কিন্তু কিছু সমস্যা সহজে সমাধান করা সম্ভব হয় না। নিয়াসিনামাইড এর ব্যবহার এসব সমস্যা খুব সহজেই দূর করে থাকে এবং ত্বক সুন্দর ও স্বাস্থ্যজ্জ্বল করে তোলে। তাই ত্বকের যত্নে এর ব্যবহার অতুলনীয় এবং এর জনপ্রিয়তা এভাবেই বেড়ে চলেছে।
নিয়াসিনামাইড ব্যবহারের উপকারিতা
বয়সের ছাপ দূর করে : উজ্জ্বল হেলদি স্কিন কে না চায়, কিন্তু বয়স বাড়ার সাথে সাথে ত্বকে নানা ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হতে শুরু করে। অনেক ধরনের পণ্য ব্যবহার করেও যখন এসব সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় না তখন তা খুব চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। এসব সমস্যা দূর করতেই আছে নিয়াসিনামাইড। যা আপনার ত্বকের দাগ ছোপ দূর করতে ভিষণ উপকারী একটি উপাদান। ত্বককে মসৃণ করে তোলে এবং উজ্জ্বলতা বাড়াতে সাহায্য করে।
লোমকূপ ছোট করে: মুখের লোমকূপ বড় যাওয়া অনেকের ক্ষেত্রেই হয়ে থাকে, এটি খুব সাধারণ সমস্যা। এর ফলে ত্বকের মসৃণতা কমে যায়। নিয়াসিনামাইড ব্যবহার করলে খুব সহজেই এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব। তাই লোমকূপ ছোট করতে নিয়াসিনামাইড ব্যবহার করতে পারেন।
তৈলাক্ত ভাব দূর করে: যাদের ত্বক অনেক বেশি তৈলাক্ত, তাদের ব্রণ এর ঝুঁকিও বেশি থাকে। তৈলাক্ত ত্বকের সেবাম বা তেল উৎপাদন এর হার অনেক বেশি। তাই সবসময়ই মুখ তৈলাক্ত হয়ে থাকে। নিয়াসিনামাইড ব্যবহার করলে এটি মুখের এই তেল উৎপাদন এর হার কমিয়ে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে। ফলে তৈলাক্ততা ও ব্রণ হওয়ার ঝুঁকি থেকে মুক্ত থাকা যায়।
সূর্যের ক্ষতি থেকে ত্বককে রক্ষা করে: সূর্যের তাপে ত্বকে অনেক ধরনের ক্ষতি হয়ে থাকে। যাদের রোদে বাইরে যেতে হয় তাদের ত্বকে এই সমস্যা খুব বেশি দেখা যায়। ত্বক কালচে হয়ে যায়, হাইপারপিগমেন্টেশন বেড়ে যায়, এছাড়াও অনেক ক্ষতি হয়ে থাকে। তাই অবশ্যই নিয়াসিনামাইড ব্যবহার করতে হবে, যা রোদের এসব ক্ষতি থেকে ত্বককে প্রটেক্ট করতে পারবে।
লালচে ভাব দূর করে: অনেকের ত্বকে লালচে দাগ থাকে বা লালচে ভাব দেখা যায়। নিয়াসিনামাইড ত্বকের লালচে ভাব দূর করে থাকে। তাই এটি ব্যবহার করে এই সমস্যা খুব সহজেই সমাধান করা যায়।
ব্রণ বা ব্রণের দাগ দূর করে: কম বেশি সবারই এই সমস্যা হয়ে থাকে।কিন্তু এই সমস্যা থেকে সহজে বেড়িয়ে আসা যায় না। ব্রণ দূর হলেও এর দাগ থেকেই যায়, যা দূর করা খুব কষ্টসাধ্য ব্যাপার। খুব সহজে এই সমস্যার সমাধান নিয়ে এসেছে নিয়াসিনামাইড। যা ব্যবহার করলে ব্রণের ঝুঁকি কমে।
যেসব উপাদান ব্রণ হতে সাহায্য করে, সেসব উপাদান নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়াসিনামাইড কাজ করে। এভাবেই ব্রণ সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। নিয়াসিনামাইড নিয়মিত ব্যবহার করলে ব্রণ এর দাগও আস্তে আস্তে কমতে থাকে। এভাবেই ব্রণ সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। নিয়াসিনামাইড নিয়মিত ব্যবহার করলে ব্রণ এর দাগও আস্তে আস্তে কমতে থাকে।
ত্বক উজ্জ্বল ও মসৃণ করে: আমরা অনেকেই নিয়মিত ত্বকের যত্ন নিতে পারিনা বা নেওয়ার সময়ও পাই না। এর ফলে ত্বকে উজ্জ্বলতা কমে যায়, ব্রণ হয় এবং ত্বকের মসৃণতা কমে যায়। নিয়াসিনামাইড এক্ষেত্রে স্কিন কেয়ার রুটিনে যুক্ত করলে তা খুব তাড়াতাড়ি ভালো ফলাফল দেবে।
নিয়াসিনামাইড কি এবং এর কাজ ও উপকারিতা সম্পর্কে আশা করি বুঝতে পেরেছেন, এবার জানা যাক এটি কিভাবে আপনার ত্বকে ব্যবহার করবেন।
নিয়াসিনামাইড ব্যবহারের নিয়ম
- প্রতিদিন সকালে বা রাতে নিয়াসিনামাইড সিরাম ব্যবহার করলে ভালো ফলাফল দেয়। সিরাম বা নিয়াসিনামাইড আছে এমন যেকোনো পণ্য ব্যবহার করা যায়।
- দিনে নিয়াসিনামাইড ব্যবহার করে বাইরে গেলে সাথে কোনো ভালো সানস্ক্রিন অবশ্যই ব্যবহার করতে হবে। রোদে যাওয়ার আগে সানস্ক্রিন ব্যবহার করা সবার জন্যই জরুরি।
- শুষ্ক, তৈলাক্ত এবং সংবেদনশীল, সব ধরনের ত্বকেই নিয়াসিনামাইড ব্যবহার করা যায়। এটি শুষ্ক ত্বকে বাধার উন্নতি করে এবং তৈলাক্ত ত্বকে তেল উৎপাদন এর মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।
- রাতে ঘুমানোর আগে নিয়াসিনামাইড সিরাম ব্যবহার করে ঘুমালেও ভালো ফল প্রদান করে থাকে।
- দুই বা ততোধিক সিরাম বা প্রডাক্ট কখনোই একসাথে মিশিয়ে মুখে ব্যবহার করবেন না। এতে আপনার ত্বকের বড় কোনো ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।
- যারা বেসিক স্কিন কেয়ার রুটিন মেনে চলেন না, তারা শুরুতেই নিয়াসিনামাইড মুখে ব্যবহার করবেন না। ব্যবহার করার আগে প্যাচ পরীক্ষা করে নিবেন অথবা চিকিৎসক এর পরামর্শে সঠিক নিয়মে ব্যবহার করবেন।
- যাদের বয়স ১৮-২০ বছরের কম, তারা নিয়াসিনামাইড ব্যবহার না করাই ভালো, ব্যবহার করলেও কম পার্সেন্টেজ এর নিয়াসিনামাইড ব্যবহার করতে হবে এবং অবশ্যই চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করে নিতে হবে।
- যাদের অ্যালার্জির সমস্যার আছে তারা অবশ্যই নিয়াসিনামাইড পুরো মুখে প্রয়োরের আগে একটি প্যাচ পরীক্ষা করে নিবেন।
যে কোনো পণ্য ব্যবহার করার আগে প্যাচ পরীক্ষা করে নেয়া বুদ্ধিমানের কাজ।
প্যাচ পরীক্ষা করার নিয়ম
- মুখের ত্বকে ব্যবহার করার আগে হাতে বা কোনো ছোট অংশে প্রয়োগ করতে হবে।
- স্থানটি না ধুয়ে ২৪ ঘন্টা বা ৪৮ ঘন্টার জন্য পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
- যদি কোনো প্বার্শ প্রতিক্রিয়া যেমন লালচে ভাব, চুলকানি, প্রদাহ ইত্যাদি পরিলক্ষিত হয় তাহলে ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। অথবা চিকিৎসক এর পরামর্শ নিয়ে ব্যবহার করতে হবে।