গরমে মেকআপ ঠিক রাখার উপায় ও দীর্ঘস্থায়ী সমাধান।
প্রচন্ড গরমে প্রথমেই মাথায় আসে, ঘামে ভেজা ত্বক ও তেল চিটচিটে ভাবের কথা। তাই এই সময়ে ঘামের কথা ভেবে মেকআপ করার সাহসই পান না। গরমের তীব্রতা বেড়েই চলেছে ফলে মনের মত সাজগোজ করা ও কষ্টকর হয়ে পড়েছে।
প্রচন্ড গরমে ত্বক ঘামে ভিজে এবং তেল চিটচিটে ভাব হওয়ার ফলে ত্বকের নানান সমস্যা হয় যেমন – ব্রণ ,ফুসকুড়ি ইত্যাদি। ত্বকের এই সমস্যাগুলো গরমে বেশি বাড়তে থাকে। তাই কিছু নিয়ম মেনে মেকআপ করলে এর থেকে পরিত্রান পাওয়া যায়।
শুধুই গরমের তাপ, ঘাম, ধুলো ,দূষণের কারণেই ব্রণ উঠে না বিভিন্ন অনিয়মের কারণেও ব্রণ উঠে।
হরমোনের ওঠানামা, মানসিক চাপ, ঘুমের অভাব, খাওয়া দাওয়ার অনিয়ম,পানি কম পান করা, ত্বকের অযত্নের কারণে ব্রণ উঠে।
নিজেকে আকর্ষণীয় দেখাতে মেকআপ করার দরকার। কিন্তু গরমে মেকআপ করার পর মেকআপ লং লাস্টিং বা ধরে রাখার ব্যাপারটাও অনেক চ্যালেঞ্জিং। কিছু নিয়ম মেনে মেকআপ করলে মেকআপ লং লাস্টিং হয়। আসুন জেনে নেওয়া যাক বিস্তারিত।
ত্বক পরিষ্কার করা
প্রথমেই ত্বক পরিষ্কার করবেন ক্লিনজার দিয়ে। নিয়মিত ত্বক পরিষ্কার করলে ত্বকের ডেড সেল থাকে না। প্রয়োজনের ডাবল ক্লিনজিং করতে পারেন।
ডাবল ক্লিনজিং হচ্ছে প্রথমত অয়েল বেসড ক্লিনজার দিয়ে মুখে জমে থাকা ময়লা পরিষ্কার করে , দ্বিতীয়ত ফোম বেসড বা ওয়াটার বেসড ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ পরিষ্কার করা।
ত্বকে বরফ ঘষা
ঘুমানোর পর মুখে ফোলা ভাব দেখা যায়। এক টুকরো বরফ নিয়ে মুখে ঘষলে ত্বকের ফোলা ভাব কমে যায়। বরফের টুকরো ত্বকে সরাসরি লাগাবেন না । সুতি কাপড়ে বরফ পেঁচিয়ে মুখে আলতো ভাবে ঘষবেন ।
অবশ্যই এক জায়গায় বেশিক্ষণ বরফ ঘষবেন না। বরফ ঘষলে ত্বকের লোমকূপ সংকুচিত হয় এবং রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়। মেকআপ করার আগে ত্বকে বরফ ঘষে নিলে মেকাপের প্রসাধনী ত্বকে ভালোভাবে সেটিং হয় অর্থাৎ মেকআপ ভালোভাবে বসে।
সানস্ক্রিন লাগানো
গরমের দিনে সানস্ক্রিন লাগিয়ে নিবেন। কারণ সানস্ক্রিন সূর্যের আলট্রা ভায়োলেট রশ্নি থেকে ত্বককে রক্ষা করে এবং ত্বক পুড়ে যাবার হাত থেকে রক্ষা করে।
তাই সানস্ক্রিন দিতে একদমই ভুলবেন না।
প্রাইমার ব্যবহার
প্রাইমার হচ্ছে ক্রিমি বা জেল টেক্সচারের একপ্রকার মেকআপ প্রোডাক্ট। মেকআপ কে লং লাস্টিং রাখতে চাইলে প্রাইমার মেকআপ শুরুর প্রথমে ব্যবহার করতে হবে।
এটি ত্বকে এবং মেকাপের মধ্যে একটি আলাদা লেয়ার তৈরি করে। এটি ব্যবহারের ফলে স্কিন টোন ব্রাইটনিং দেখায় এবং এবং ফেস এর মধ্যে একটা স্মুথি ভাব আসে।
ফাউন্ডেশন ব্যবহার
প্রাইমার লাগানোর পর ব্যবহার করুন ফাউন্ডেশন । ত্বকের প্রকৃতি অনুযায়ী ফাউন্ডেশন আলাদা আলাদা প্রকারের পাওয়া যায়। তেলতেলে ত্বকের জন্য ওয়েল ফ্রী মেট ফিনিশিং ফাউন্ডেশন ব্যবহার করতে হবে।
স্কিন টোন অনুযায়ী ফাউন্ডেশন এর রং বাছাই করবেন। এরপর আলতো ভাবে মেকআপ ব্লেন্ড করার জন্য স্পঞ্জ দিয়ে ব্লেন্ড করে নিন।
কনসিলার ব্যবহার
ত্বকের যেসব স্থানে বিভিন্ন প্রকারের দাগ, চোখের নিচে হওয়া কালো দাগ, ব্রণের দাগ ইত্যাদি আছে সেসব স্থানে কনসিলার এপ্লাই করুন। ভালোভাবে ব্লেন্ড করে নিন।
সেটিং পাউডার ব্যবহার
কনসিলার ব্যবহারের পর কনসিলার সেট করার জন্য সেটিং পাউডার স্পঞ্জ দিয়ে ত্বকে ভালোভাবে লাগিয়ে নিন, এরপর ব্রাশ ইউজ করে পুরো মুখে লাগিয়ে নিন। এটি ব্যবহারের ফলে ত্বকে ম্যাট ফিনিশিং আসে।
কনট্যুরিং করা
মুখের যেসব স্থানে কন্টুরিং করবেন সেই সব স্থানে আপনার ত্বকের শেডের চেয়ে লাইট শেডের স্টিক কনসিলার বা ফাউন্ডেশন দিয়ে লাইন করে নিবেন। এরপর কনট্যুরিং কিট দিয়ে ভালোভাবে ব্লেন্ড করে নিবেন।
ব্লাশ ব্যবহার
ত্বকের প্রকৃতি অনুযায়ী ক্রিমী বা পাউডার ব্লাশন ব্যবহার করতে পারেন। গরমের সময়ে পিচ কালার বা হালকা শেডের ব্লাশ ব্যবহার করলে দেখতে ভালো লাগে।
ব্লাশ ব্যবহারের ফলে আপনার ত্বকে একপ্রকার গোলাপি আভা ফুটে ওঠে যা আপনার মেকআপ লুককে আরো সুন্দর করে তোলে।
চোখের মেকআপ
গরমের দিনে চোখের মেকাপের ক্ষেত্রে প্রথমেই ওয়াটারপ্রুফ কাজল, ওয়াটারপ্রুফ আইলাইনার, মাস্কারা ব্যবহার করুন। এতে চোখের মেকআপ গলে যাওয়ার ভয় থাকে না।
গরমে চোখের সাজের ক্ষেত্রে হালকা বা ন্যুড শ্যাডের আইশ্যাডো ব্যবহার করুন।
ঠোঁটের সাজ
গরমের সময়ে ম্যাট ফিনিশিং লিপস্টিক ব্যবহার করুন ।কারণ ক্রিমি লিপস্টিক এর থেকে ম্যাট ফিনিশিং লিপস্টিক দীর্ঘস্থায়ী বা লং লাস্টিং হয়। লিপস্টিকের ক্ষেত্রে হালকা রং এর লিপস্টিক ব্যবহার করুন।
সেটিং স্প্রে ব্যবহার
সবশেষে সেটিং স্প্রে ব্যবহার করতে ভুলবেন না। সেটিং স্প্রে ব্যবহারের ফলে মেকাপের পর ফেইসে যে পাউডারি ভাব থাকে সেটা দূর করে এবং মেকআপ লুককে আরো স্মুথ করে।
সেটিং স্প্রে মেকআপকে লং লাস্টিং করে এবং দীর্ঘক্ষণ গরমে মেকআপ গলে যাওয়ার ভয় থাকে না।