লিপস্টিক লং লাস্টিং রাখার ৮টি সহজ উপায়।
বর্তমান যুগে লিপস্টিক খুবই প্রয়োজনীয় একটি প্রসাধনী। মাঝে মাঝে মুখে মেকআপ না করলেও হালকা লিপস্টিক ব্যবহার করলে আপনার রেগুলার লুক হয়ে ওঠে আকর্ষণীয়।
আচ্ছা সেজেগুজে বাইরে ঘুরতে যাওয়ার সময় , বিয়ে বাড়ির পার্টিতে, অথবা কোন আত্মীয়ের দাওয়াতে যাওয়ার পর যদি দেখেন আপনার ঠোঁটে লিপস্টিক উঠে গেছে অথবা হালকা হয়ে গেছে ! মেয়েদের জন্য এমন পরিস্থিতি খুব কমন একটা সমস্যা। এই সময়ে বারবার ঠোটে লিপস্টিক টাচ আপ দেওয়া খুবই ঝামেলার বিষয়।
আমরা অনেকেই লিপস্টিক ব্যবহার বলতে শুধু ঠোঁটে লিপস্টিক ঘষে নেওয়াকে বুঝি। ফলস্বরূপ লিপস্টিক লং লাস্টিং হয় না এবং লিপস্টিক উঠে যায়। তাই সঠিক নিয়মে লিপস্টিক এপ্লাই করা শিখুন ।
তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক কিভাবে লিপস্টিক ব্যবহার করলে দীর্ঘক্ষণ স্থায়ী রাখা যায় এবং কীভাবে এপ্লাই করলে প্রায় সব ধরনের লিপস্টিকই লং লাস্টিং হবে।
১. আপনার ত্বকের জন্য মানানসই সঠিক ফর্মুলার লিপস্টিক বাছাই করুন:
সবার স্কিন টাইপ ভিন্ন। এক্ষেত্রে স্কিন টাইপ অনুযায়ী লিপস্টিক বাছাই করুন। প্রথমেই আপনাকে জানতে হবে আপনার স্কিন টাইপ কি?
oily স্কিনের ক্ষেত্রে-লিকুইড ম্যাট লিপস্টিক ব্যবহার করলে এটি সহজে উঠে যায় না। ড্রাই স্কিনের ক্ষেত্রে-অ্যালোভেরা যুক্ত, জোজবা অয়েল যুক্ত ম্যাট লিপস্টিক, লিপ গ্লোস ব্যবহার করলে লিপ হাইড্রেড থাকে এবং স্মুথ থাকে।
কম্বিনেশন স্কিনের ক্ষেত্রে-ম্যাট লিপস্টিক, সেমি ম্যাট লিপস্টিক ব্যবহার করলে লিপ হাইড্রেটিং এবং আরামদায়ক ফিল হয়। এছাড়াও লিকুইড লিপস্টিক ও ব্যবহার করা যায়।
সংবেদনশীল স্কিনের ক্ষেত্রে-এরকম স্কিনের ক্ষেত্রে তরল স্ট্রাকচারের ফর্মুলায় পাওয়া যায় এমন টাইপের লিপস্টিক ব্যবহার করা। এক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে সুগন্ধি মুক্ত এবং অন্যান্য রাসায়নিক ক্ষতিকর পদার্থ মুক্ত লিপস্টিক বাছাই করা।
লিপস্টিক লং লাস্টিং রাখার জন্য অবশ্যই একটি প্যাচ টেস্ট করে আপনার সম্ভাব্য লিপস্টিক ক্রয় করুন। কিভাবে টেস্ট করবেন? চলুন জেনে নেওয়া যাক-
প্রথমেই লিপস্টিক আপনার হাতের তালুতে নিয়ে হালকা লাগিয়ে কিছুক্ষণ পর টোনার অথবা সাধারণ পানি লাগিয়ে টিস্যু পেপার দিয়ে হালকা ট্যাপ ট্যাপ করুন। এবার দেখুন লিপস্টিকের কালার টি কতটুকু হালকা হচ্ছে অথবা এর ফেইড ছরিয়ে যায় কিনা। এভাবেই বুঝতে পারবেন লিপস্টিক টি কতটুকু লং লাস্টিং হবে।
২. লিপ এক্সফোলিয়েশন করুন:
লিপ এক্সফোলিয়েশন করলে লিপস্টিক ঠোঁটে সহজেই বসে। এছাড়াও লিপ এক্সফোলিয়েশন করলে আরো অনেক বেনিফিট পাওয়া যায়।
শুষ্ক ,ফাটা লিপে লিপস্টিক এপ্লাই করলে ভালোভাবে বসে না। লিপ এক্সফোলিয়েশন করার ফলে ঠোঁটের মৃত চামড়া উঠে যায় এবং লিপ নরম ও মসৃণ হয়। এছাড়াও লিপ এক্সফোলিয়েশন করার ফলে ঠোঁটে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায় এবং কোলাজেন প্রোডাকশন বাড়ে।ঘনঘন লিপ এক্সফোলিয়েশন করলে অনেক ক্ষতি হয়। তাই সপ্তাহে একবার অথবা দুইবার লিপ এক্সফোলিয়েশন করলে ঠোঁট অনেক নরম ও মসৃণ থাকে।
এখন প্রশ্ন থাকতে পারে যে ! কিভাবে লিপ এক্সফোলিয়েশন করব?
চলুন জেনে নেওয়া যাক কিভাবে লিপ এক্সফোলিয়েশন করব। প্রথমেই গরম পানিতে একটি কাপড় ভিজিয়ে পরিষ্কার লিপে আলতোভাবে ঘসে পরিষ্কার করুন। এবার একটি ভালো ব্র্যান্ডের এক্সফোলিয়েটর টিউব থেকে অল্প পরিমাণ এক্সফোলিয়েটর নিয়ে ঠোঁটে বৃত্তাকার ভাবে ৩০ সেকেন্ড ম্যাসাজ করুন। কিছুক্ষণ পর সাধারণ তাপমাত্রার পানি দিয়ে ঠোঁট ধুয়ে ফেলুন।
৩. শুষ্ক ঠোটে লিপস্টিক এপ্লাই করবেন না:
শুষ্ক ঠোঁটে লিপস্টিক ব্যবহার করলে লিপস্টিক ফাটা ফাটা দেখায় এবং লিপ অনেক টানটান ফিল হয়। এক্ষেত্রে মশ্চারাইজিং লিপ বাম ঠোঁটে এপ্লাই করুন। লিপ বাম এপ্লাইয়ের পর টিস্যু দিয়ে হালকা করে মুছে লিপস্টিক এপ্লাই করুন।
৪. লিপস্টিক দিয়ে লেয়ার তৈরি করুন:
লিপস্টিকের স্ট্রাকচার পিগমেন্টেশন যদি হালকা হয় তাহলে এই পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারেন।
প্রথমেই একটি ব্রাশের সাহায্যে লিপস্টিক ঠোঁটে এপ্লাই করুন ,তারপর একটি টিস্যু ভাজ করে দুই লিপের মাঝ বরাবর রেখে হালকা ট্যাপ করুন। এবার এর উপর আবারও লিপস্টিক এপ্লাই করে লেয়ার তৈরি করূন। এখন এর উপরে হালকা পাউডার দিয়ে ব্রাশের সাহায্যে অতিরিক্ত পাউডার সরিয়ে ফেলুন ।দেখবেন লিপ এর কালার টা অনেক সুন্দর এবং কোয়ালিটিফুল দেখাচ্ছে।
৫. লিপ লাইনার ব্যবহার করুন:
লিপ লাইনার ঠোঁটের আকৃতি সুন্দর করে এছাড়াও লিপস্টিক যেন বাইরে ছড়িয়ে না যায় সেক্ষেত্রে একটা বাধা তৈরি করে। লিপস্টিকের সেডের সাথে মিল রেখে লিপ লাইনার ব্যবহার করুন।
৬. ঠোঁটে প্রাইমার ব্যবহার করুন:
ঠোঁটে লিপস্টিক লং লাস্টিং করার জন্য প্রাইমার একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। তাই লিপস্টিক এপ্লাই করার পূর্বে অবশ্যই লিপে প্রাইমার ব্যবহার করুন। প্রাইমার ব্যবহার করলে লিপস্টিক ছড়িয়ে যায় না এবং লিপ দীর্ঘক্ষণ হাইড্রেট থাকে।
৭. তৈলাক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন:
তেল লিপস্টিকের সাধারণ স্ট্রাকচার নষ্ট করে দেয়। লিপস্টিক ছড়িয়ে পড়ে এবং হালকা হয়ে গলতে শুরু করে। তাই তৈলাক্ত খাবার যথাসম্ভব এরিয়ে চলতে হবে এবং তৈলাক্ত খাবার খাওয়ার সময় অবশ্যই টিসু ব্যবহার করবেন যাতে টিসু দিয়ে ওয়েল কন্ট্রোল করতে পারেন।
৮. লিপস্টিক সেট করুন:
লিপস্টিক সারাদিন লং লাস্টিং রাখার জন্য অবশ্যই লিপস্টিক ব্যবহারের পর ট্রান্সলুসেন্ট পাউডার অথবা সেটিং স্প্রে এপ্লাই করতে পারেন। এতে লিপস্টিক কালার লং লাস্টিং হবে।