Ingredient

স্কিন কেয়ারে ব্যবহৃত ১০ টি একটিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট।

10 active ingredients used in skincare

সুন্দর ,সফট, দাগহীন হেলদি স্কিনের জন্য আমরা বিভিন্ন ধরনের স্কিন‌ কেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহার করি। আমাদের স্কিন কেয়ার প্রোডাক্টে অনেক ধরনের ইনগ্রেডিয়েন্ট রয়েছে,যা সচরাচর এক্টিভ নয়। মূলত, যেসব স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট নির্দিষ্ট কোন চিকিৎসার জন্য বিশেষভাবে তৈরি হয়নি সেগুলোতে একটিভ ইনগ্ৰেডিয়েন্ট নেই যেমন রেগুলার ব্যবহারের মশ্চারাইজার ক্রিম , ক্লিনজার ইত্যাদি ।

আ্যকটিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট কি?

অ্যাকটিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট আমাদের বিভিন্নরকম স্কিন প্রবলেম দূর করে, স্কিনের কন্ডিশন ভালো রাখতে ও স্কিন হেলদি রাখতে ইফেক্টিভলি কাজ করে। আমাদের বিভিন্ন স্কিন প্রবলেম যেমন- হাইপারপিগমেন্টেশন, একনে, ক্লোজড কমেডোনস, সানবার্ন, ফাইন লাইনস, রিংকেলস, আন্টি এজিং সাইন্স প্রিভেন্ট ইত্যাদি কমাতে সক্রিয়ভাবে কাজ করে অ্যাকটিভ ইংগ্রেডিয়েন্ট।স্কিন টাইপ ও স্কিনের প্রবলেম অনুযায়ী বিবেচনা করে অ্যাকটিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট নির্দিষ্ট মাত্রায় বিভিন্ন স্কিনকেয়ার প্রোডাক্টে ব্যবহার হয়, যেমন- ফেইস ওয়াশ, টোনার, সিরাম, এসেন্স , অ্যাম্পুল ও ময়েশ্চারাইজারে।কিন্তু এই একটিভ ইনগ্রেডিয়েন্টগুলো ডিরেক্ট স্কিনে অ্যাপ্লাই করা যায় না।

চলুন এবার জেনে নেয়া যাক,১০টি অ্যাকটিভ ইনগ্রেডিয়েন্টস সম্পর্কে যেগুলো বর্তমান স্কিনকেয়ারে সবচেয়ে বেশি ইউজ করা হয়।

১.রেটিনল

অ্যান্টি-এজিং ট্রিটমেন্ট এবং ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা দূর করতে রেটিনল ব্যবহার করা হয়। রেটিনল হলো ভিটামিন-এ এর একটি ফর্ম। রেটিনল স্কিনের ডেড সেলস রিমুভ করে স্কিনের টেক্সচার ইমপ্রুভ করে, মুখের ব্রণ দূর করে, ত্বকের কালো দাগ বা হাইপার-পিগমেন্টেশন রিমুভ করে ও ত্বকে কোলাজেন প্রোডাকশন বৃদ্ধি করে স্কিন টান টান করে।

স্কিনকেয়ার প্রোডাক্টের মাধ্যমে ফেইসে রেটিনল অ্যাপ্লাই করা হলে তা রেটিনয়িক অ্যাসিডে কনভার্ট হয়ে যায়। এছাড়াও এজিং সাইনস রিপেয়ার করে ত্বকের তারুণ্যতা ধরে রাখতে রেটিনল ত্বকে ম্যাজিক এর মত কাজ করে।

২.হায়ালুরোনিক অ্যাসিড

হায়ালুরোনিক অ্যাসিড আমাদের ত্বককে হাইড্রেটেড, ময়েশ্চারাইজড এবং প্লাম্প রাখতে দারুণ জনপ্রিয় একটি অ্যাকটিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট। হায়ালুরোনিক অ্যাসিড হলো একটি চিনির অণু যা প্রাকৃতিকভাবে আমাদের ত্বকে তৈরি হয়। সময়ের সাথে সাথে আমাদের ত্বকের হায়ালুরোনিক এসিডের পরিমাণ কমে যায় ফলে ত্বকে পানির পরিমান হ্রাস পায়।

ত্বকে পানি কমে গেলে ত্বক রুক্ষ, শুষ্ক ও নিস্তেজ হয়ে যায় এবং চোখের নিচে কুঁচকানো, সূক্ষ্ম রেখা এবং বলিরেখার মতো সমস্যা তৈরি হয়।হায়ালুরোনিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ ময়েশ্চারাইজার কিংবা সিরাম ইউজ করলে এটি ত্বকে হাইড্রেশন সরবরাহ করে, ত্বককে সুন্দর ও হাইড্রেটেড রাখে।

৩.নিয়াসিনামাইড

নিয়াসিনামাইড হলো ভিটামিন বি৩ এর একটি ফর্ম।নিয়াসিনামাইড সহজেই পানির সাথে মিশে যায় এবং আমাদের স্কিনের প্রাকৃতিক উপাদানের সাথে মিশে কাজ করে। নিয়াসিনামাইড হাইপারপিগমেনটেশন দূর করে, অ্যাকনে দূর করে, ত্বকের অয়েল ব্যালেন্স করে, স্কিনের এনলার্জড পোরস মিনিমাইজ করে এবং স্কিন বেরিয়ার শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। এছাড়াও নিয়াসিনামাইড আমাদের স্কিন ব্যারিয়ার রিপেয়ার করে স্কিনে প্রয়োজনীয় ময়েশ্চারাইজারের যোগান দেয়।সেই সাথে স্কিনের ইরিটেশন ও রেডনেস কমাতে এবং ডালনেস কমিয়ে স্কিন ব্রাইট করতেও এটি খুবই ইফেক্টিভলি ত্বকে কাজ করে।

৪.ভিটামিন সি

ভিটামিন সি ত্বকের যেকোনো সমস্যা সমাধানে টনিকের মতো কাজ করে। ত্বক সুরক্ষিত ও উজ্জ্বল রাখতে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ প্রডাক্ট ব্যবহার করলে অনেক ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। ভিটামিন সি এর আরেক নাম অ্যাসকর্বিক অ্যাসিড। এটি ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা যেমন-রিঙ্কেলস এবং ফাইন লাইনস প্রতিরোধ করে ত্বকের তারুণ্যতা ধরে রাখে। এছাড়াও সূর্যের ক্ষতিকারক রশ্মি থেকে ত্বককে রক্ষা করে,ত্বকের শুষ্কতা দূর করে।ভিটামিন সি এ রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি প্রপার্টিজ। যার কারণে এটি ত্বকের লালচে ভাব, ব়্যাশ দূর করতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে।

তাই যদি স্কিনকেয়ারে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ প্রোডাক্ট অ্যাড করেন, তাহলে স্কিনের ডার্ক স্পটস, ফাইন লাইনস, রিংকেলসের মতো প্রবলেমগুলো অনেকটাই কমে যাবে ও স্কিন অনেক ব্রাইট হবে।

৫.বেটা হাইড্রক্সি অ্যাসিড

বেটা হাইড্রক্সি অ্যাসিড (BHA)হলো একটি অ্যাসিড গ্ৰুপের সমষ্টি। এই অ্যাসিড গ্রুপে রয়েছে স্যালিসাইলিক এসিড,বেটা হাইড্রক্সিবুটানোয়িক এসিড,ট্রপিক এসিড ও ট্রেথোক্যানিক এসিড। বেটা হাইড্রক্সি অ্যাসিড তেলে দ্রবণীয় একটি এসিড এবং এটি খুব সহজেই পোরসের মধ্য দিয়ে তেল গ্রন্থির অভ্যন্তরে পৌঁছাতে পারে এবং তেল নিঃসরণ কমিয়ে দিতে পারে। এছাড়াও এটি ত্বকের মৃত কোষ রিমুভ করে এবং তেল নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ব্রণের বিস্তার রোধ করে। তাই ব্রণ প্রবণ ত্বকের যত্নে বেটা হাইড্রক্সি অ্যাসিড বিশেষভাবে কার্যকর।

৬.আলফা হাইড্রক্সি অ্যাসিড

আলফা হাইড্রক্সি এসিড (AHA) মূলত উদ্ভিজ্জ এবং প্রাণী থেকে উৎপন্ন হয়। এটি একটি এসিড গ্রুপের সমষ্টি যা বিভিন্ন ফ্রুট, সুগার কিংবা মিল্ক থেকে পাওয়া যায়। স্কিনকেয়ারে দুই ধরনের আলফা হাইড্রক্সি অ্যাসিড ব্যবহৃত হয় যেমন -ল্যাকটিক অ্যাসিড ও গ্লাইকলিক অ্যাসিড। আলফা হাইড্রক্সি অ্যাসিড ত্বকে কোলাজেনের মাত্রা বাড়ায়, ত্বকের মৃত কোষ, ময়লা, মেকআপ এবং টক্সিন অপসারণে সাহায্য করে। এছাড়াও এটি আমাদের স্কিনকে ইরিটেট না করেই স্কিন এক্সফোলিয়েট করে, ডেডসেলস দূর করে, স্কিন ব্রাইট করে এবং একনে জনিত প্রবলেম দূর করতে খুবই কার্যকর।

৭.বেনজাইল পার অক্সাইড

বেনজাইল পার অক্সাইড হলো একটি শক্তিশালী (OTC) এবং এটি একপ্রকারের অক্সিডাইজার। ব্রণ প্রবণ ত্বকের জন্য বেনজাইল পার অক্সাইড হলো আশার আলো। এতে রয়েছে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল গুনাগুন যা আমাদের ত্বকের পোরসের ভেতরে থাকা ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে। ফলে স্কিনে একনে ব্রেকআউটও কম হয়। সারা বিশ্বব্যাপী এই একটিভ ইনগ্রেডিয়েন্টটি ব্রনের চিকিৎসার জন্য মেইনলি ব্যবহৃত হয়।তবে অবশ্যই নিজের স্কিনকেয়ার রুটিনে বেনজাইল পার অক্সাইড অ্যাড করার আগেএকজন ডার্মাটোলজিস্টের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবহার করবেন।

৮.সেন্টেলা অ্যাসিয়াটিকা

সেন্টেলা অ্যাসিয়াটিকা (Centella Asiatica) কোরিয়ান বিউটি প্রোডাক্টে ব্যবহৃত একটি জনপ্রিয় এক্টিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট। এতে রয়েছে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি প্রপার্টিজ যা ত্বকের জ্বালাপোড়া,ব়্যাশ ও লালচে ভাব রিমুভ করে। এছাড়াও এতে রয়েছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ফর্মুলা,যা আপনার ত্বককে ফ্রি-র‌্যাডিক্যালের প্রভাব থেকে সুরক্ষা দেয়, ত্বকের পোরস ক্লগ হতে দেয় না এবং ব্রণ ও অন্যান্য দাগ রিমুভ করতে সহায়তা করে। এটি ত্বকের চাহিদা অনুযায়ী নির্দিষ্ট পরিমাণে ক্রিম, লোশন, সিরাম, এবং ক্যাপসুল আকারে ব্যবহার হয়।

৯.আরবুটিন

আরবুটিন হলো একটি প্রাকৃতিক ডেরিভেটিভ।এটি বিয়ারবেরি, ক্র্যানবেরি এবং ব্লুবেরি থেকে পাওয়া যায়। এটি ত্বকের মেলানিন (মেছতা), কালো দাগ-ছোপ রিমুভ করে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে । এছাড়াও এতে রয়েছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট যা ত্বককে ফ্রি রেডিকেলের প্রভাব থেকে সুরক্ষা দেয়।আরবুটিন ২-৫% মাত্রায় সিরাম, ক্রিম ও ক্লিনজারে ব্যবহৃত হয়।

১০.সেরামাইডস

সেরামাইডস হল চর্বি জাতীয় পদার্থ।এটি ত্বকের প্রাকৃতিক আর্দ্রতা ধরে রাখে ও ত্বকের উপর প্রাকৃতিক ব্যারিয়ার তৈরি করে যা বাইরের দূষন, ধুলা, সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি এবং জীবাণু থেকে ত্বককে রক্ষা করে। এছাড়াও এটি ত্বকের রেডনেস, একজিমা, সোরিয়াসিস, এবং রোসাসিয়ার মতো স্কিন প্রবলেম দূর করতে কার্যকর। সেরামাইডস ত্বকের আদ্রতা ধরে রাখে, ত্বকের টেক্সচার ইম্প্রুভ করে ত্বককে সুন্দর ও মসৃণ করে।বিশেষ করে শুষ্ক এবং সংবেদনশীল ত্বকের যত্নে সেরামাইডস আদর্শ অ্যাক্টিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট।

আপনার নিয়মিত স্কিনকেয়ার রুটিনে যেকোনো অ্যাকটিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট অ্যাড করার পূর্বে অবশ্যই নিজের স্কিনের কন্ডিশন এবং স্কিন কনসার্ন কনসিডার করে নির্দিষ্ট প্রোডাক্ট পারচেজ করুন। এছাড়াও এই বিষয়টি অবশ্যই মাথায় রাখবেন, আপনার স্কিন কেয়ার প্রোডাক্টে যদি একটিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট থাকে তাহলে অবশ্যই দিনের বেলায় সানস্ক্রিন এপ্লাই করতে ভুলবেন না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *